নিজস্ব প্রতিবেদক
কাজী আরিফ মাহমুদ ইকবাল, যিনি শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টে হেড অব ওয়েলথ ম্যানেজমেন্ট এবং মতিঝিল ব্রাঞ্চ ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি বর্তমানে মিউচুয়াল ফান্ডের প্রাতিষ্ঠানিক এবং একক বিনিয়োগকারীদের তহবিল সংগ্রহ, বিক্রয় এবং বিনিয়োগ সেবা প্রদান করছেন। এর আগে তিনি প্রতিষ্ঠানটির সম্পদ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা ছিলেন। সেই সঙ্গে তিনি বিভিন্ন আর্থিক এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, যেমন- স্ট্যান্ডার্ড চ্যাটার্ড ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড এবং বিল্ডিং ফর ফিউচার লিমিটেডের বিভিন্ন দায়িত্বে কর্মরত ছিলেন। আর্থিক বিশ্লেষণ, বিক্রয়, শিল্প ঋণ এবং বৈদেশিক বাণিজ্যেও তার রয়েছে ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা।

সম্প্রতি তিনি মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগসহ সামগ্রিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিজনেস আই বাংলাদেশ-এর মুখোমুখি হয়েছিলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান। পাঠকদের উদ্দেশ্যে সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হলো।
বিজনেস আই বাংলাদেশ: মিউচুয়াল ফান্ড বলতে আমরা মূলত কি বুঝি?
কাজী আরিফ মাহমুদ ইকবাল: সহজ ভাবে বলতে গেলে, মিউচুয়াল ফান্ড হচ্ছে- বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে গঠিত একটি সমন্বিত ফান্ড, যা পেশাদার ফান্ড ম্যানেজারদের দ্বারা পরিচালিত।

বিজনেস আই বাংলাদেশ: মিউচুয়াল ফান্ড সাধারণত কিভাবে কাজ করে থাকে?
কাজী আরিফ মাহমুদ ইকবাল: মিউচুয়াল ফান্ডের অর্থ ফান্ড ম্যানেজার তার দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও গবেষণা কাজে লাগিয়ে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার, অর্থ বাজারের বিভিন্ন পণ্য বা সেবা, সরকারি ও করপোরেট বন্ডে বিনিয়োগ করে। উদ্দেশ্য থাকে ফান্ডটির অর্থ বিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগ করে মুনাফা অর্জন করা।
তিনি বলেন, মিউচুয়াল ফান্ড মূলতঃ একটি পৃথক আইনি সত্তা যা ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে সেই অর্থ বিভিন্ন খাতে ডাইভেরসিফিকেশনের মাধ্যমে ঝুঁকি কমিয়ে বিনিয়োগ করে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করে। একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ বা সময় শেষে ফান্ডের বিনিয়োগ থেকে যে মুনাফা অর্জিত হয়, তা আনুপাতিক হারে ওই ফান্ডের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। ফলে একজন সাধারণ বিনিয়োগকারী সহজেই তাঁর বিনিয়োগের বিপরীতে দীর্ঘ মেয়াদে লাভবান হতে পারেন।
বিজনেস আই বাংলাদেশ: মিউচুয়াল ফান্ড কয় ধরনের এবং সেগুলো কিভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে?
কাজী আরিফ মাহমুদ ইকবাল: মিউচুয়াল ফান্ড দুই ধরনের হয়ে থাকে: ক্লোজড ইনড বা মেয়াদী এবং ওপেন ইনড বা বে-মেয়াদী। ক্লোজড ইনড ফান্ডগুলি শেয়ারবাজারে তালিকাবদ্ধ। এই ধরনের মিউচুয়াল ফান্ডগুলি শুধুমাত্র ফান্ড গঠনের সময় বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে মূলধন সংগ্রহ করে এবং নির্দিষ্ট মেয়াদের শেষে এটি বিনিয়োগকারীদের মূলধন ফেরত দেয়। অর্থাৎ ক্লোজড ইন্ড ফান্ডের ইউনিট সংখ্যা কখনো পরিবর্তন হয় না। ক্লোজড ইনড ফান্ডগুলো শেয়ারবাজারে অন্যান্য তালিকাভুক্ত শেয়ারের মতই কেনাবেচা করা যায়। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীরা বর্তমান বাজার মূল্যে ক্লোজড ইনড ফান্ডের ইউনিট গুলো ব্রোকারেজ হাউসের মাধ্যমে সরাসরি বাজার থেকে কিনতে বা বিক্রয় করতে পারে। অন্যদিকে, ওপেন ইনড মিউচুয়াল ফান্ড (ইউনিট ফান্ড নামেও পরিচিত) এর নির্দিষ্ট সীমাবদ্ধ মেয়াদ নেই। এরা সময়ের সাথে সাথে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে নতুন মূলধন নিতে পারে। যখনই কোন বিনিয়োগকারী ওপেন ইনডেড ফান্ডের ইউনিট কিনতে চায়, অ্যাসেট ম্যানেজার ওই বিনিয়োগকারীর টাকার বিপরীতে নতুন ইউনিট ইস্যু করে। ওপেন ইনডেড ফান্ড শেয়ারবাজারে তালিকাবদ্ধ থাকে না। তাই ইউনিট হোল্ডাররা যেকোনো সময় বিদ্যমান নেট সম্পদমূল্যে অ্যাসেট ম্যানেজারের কাছে ইউনিট ক্রয় বা বিক্রয় করতে পারে।
বিজনেস আই বাংলাদেশ: শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড বর্তমানে কোন মিউচুয়াল ফান্ড নিয়ে কাজ করছে এবং এখান থেকে বিনিয়োগকারীরা কেমন রিটার্ন পাচ্ছে?
কাজী আরিফ মাহমুদ ইকবাল: আমাদের তিনটি ওপেন ইন মিউচুয়াল ফান্ড চলমান রয়েছে। শান্তা ফার্স্ট ইনকাম ইউনিট ফান্ড, শান্তা আমানত শরিয়াহ্ ফান্ড ও শান্তা ফিক্সড ইনকাম ফান্ড। এসব ফান্ডের প্রত্যাশিত রিটার্ন বছরে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ, যদি বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘ মেয়াদের জন্য বিনিয়োগ করেন। তারা লভ্যাংশ আকারে ও ক্যাপিটাল গেইনের মাধ্যমে মুনাফা পাচ্ছেন। বর্তমানে শান্তা ফিক্সড ইনকাম ফান্ডের বেশ চাহিদা রয়েছে। এই ফান্ড দিয়ে আমরা সরকারি ট্রেজারি বিল, বন্ড, ফিক্সড ডিপোজিট-এফডিআর এতে বিনিয়োগ করে থাকি। এসব জায়গায় বিনিয়োগ করলে ভালো মুনাফা পাওয়া যায় এবং লোকসানের সম্ভাবনা থাকে না। বর্তমানে শান্তা ফিক্সড ইনকাম ফান্ড নিয়ে বেশি কাজ করছি। সাম্প্রতিককালে এখানে বিনিয়োগকারীরা সংখ্যা অনেক বেড়েছে। ফান্ডের আকারও একশো কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। মানুষের চাহিদাকে এড্রেস করেই এই ফান্ডটা গঠন করা হয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, আমদের শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টে একটা প্রফেশনাল টিম রয়েছে। আমাদের ফান্ডে বিনিয়োগ করে বেশ কিছু সুবিধা পাওয়া যায়। যেমন- আকর্ষনীয় রিটার্ন, তারল্য সুবিধা, ট্যাক্স বেনিফিট, সহজলভ্যতা ও আইপিও সুবিধা। এজন্য বিনিয়োগকারীরা এই ফান্ডে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করছে।
বিজনেস আই বাংলাদেশ: শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে কিভাবে ফান্ড সংগ্রহ করছে?
কাজী আরিফ মাহমুদ ইকবাল: আমাদের একটি ওয়েলথ ম্যানেজমেন্ট বা সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ রয়েছে। এই বিভাগে যারা কাজ করেন তারা যথেষ্ট দক্ষ এবং পেশাদার। তারা সকল ধরনের বিনিয়োগকারীদের পেশাদরিত্বের সাথে সার্ভিস দিয়ে থাকে এবং বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ কোন অবস্থায় আছে, সেসম্পর্কে তাদের সবসময় আপডেট দেওয়া হয়। প্রত্যেক কোয়ার্টারে আমরা ফিন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট প্রকাশ করি, সেখানে সব কিছু ডিটেইলে দেওয়া থাকে। ফলে ওয়েল ইনফর্মড থাকতে পারেন। আমাদের রিলেশনশিপ ম্যানেজাররা বিনিয়োগকারীর প্রত্যাশা এবং রিস্ক ট্যাকিং ক্যাপাসিটি বিবেচনায় রেখে সেই অনুযায়ী আমাদের ফান্ডে বিনিয়োগ করান। তিনি বলেন, আমাদের ফান্ডগুলো সম্পর্কে বিনিয়োগকারীদের ভালোভাবে বোঝানোর চেষ্টা করে আমাদের ওয়েলথ ম্যানেজমেন্ট টিম। আমাদের কর্পোরেট গভর্নেন্সের প্রাকটিসটা খুব স্ট্রং। স্বচ্ছভাবে আমরা প্রত্যেকটা কাজ করে থাকি। বিনিয়োগকারীরা নির্দ্বিধায় আমাদের ওপেন ইন ফান্ডগুলোতে বিনিয়োগ করছেন। বিনিয়োগকারীরা আমাদের এই ফান্ডগুলোতে এককালীন বিনিয়োগ করছেন, মাসিক ভিত্তিক বিনিয়োগ করছেন। আমাদের উপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা দিন দিন বাড়ছে।
বিজনেস আই বাংলাদেশ: দেশে মিউচুয়াল ফান্ডকে জনপ্রিয় করতে আপনারা কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন কিনা?
কাজী আরিফ মাহমুদ ইকবাল: মিউচুয়াল ফান্ডকে জনপ্রিয় করা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের। আমাদের শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট এব্যাপারে এগিয়ে এসেছে। এজন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছি। মিউচুয়াল ফান্ড নিয়ে বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানে রোড শো’র আয়োজন করছি। পার্শবর্তী দেশগুলোতে মিউচুয়াল ফান্ডের বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। তাদের ফান্ডের আকারও বেশ বড়। বর্তমানে বাংলাদেশে ৬০টির উপরে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি রয়েছে। সবাই সবার জায়গা থেকে কাজ করছে। আমি বিশ্বাস করি যে, সবার সম্বিলিত উদ্যোগে এবং পেশাদারিত্বের মাধ্যমে এই খাত এগিয়ে যাবে।