নিজস্ব প্রতিবেদক
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের সনামধন্য কোম্পানি বিবিএস ক্যাবলস লিমিটেড বর্তমানে ঋণের চাপে জর্জরিত। কোম্পানিটির মুলধনের চেয়ে ঋণের বোঝা বেশি। এর ফলে কোম্পানিটি ইতিমধ্যে লোকসান গুনতে শুরু করেছে। সর্বশেষ ৩০ জুন,২০২৪ সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটি ৬৩ পয়সা লোকসান করেছে।

আর এমন দুর্দশার জন্য বিবিএস ক্যাবলস ও নাহী গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আবু নোমান হাওলাদারকে দায়ী করছেন সংশিষ্টরা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) তথ্য অনুযায়ী, ৩০জুন,২০২৩ সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটির মোট ঋণ রয়েছে ২৮৩ কোটি ৮৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এর মধ্যে সল্প মেয়াদী ঋণ ২৩৭ কোটি ৬৪ লাখ এবং দীর্ঘ মেয়াদী ঋণের পরিমাণ ৪৬ কোটি ২১ লাখ টাকা।
এদিকে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন রয়েছে ২১১ কোটি ৭১ লাখ টাকা। অর্থাৎ কোম্পানিটির মুলধনের তুলনায় ঋণের বোঝা বেশি। দেশের সুনামধন্য ক্যাবলস কোম্পানি শুধুমাত্র ঋণের কারণে ঝুঁকিতে যাচ্ছে। কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগকারীদেরও লোকসানের মুখে পড়তে হবে। কারণ বিপুল পরিমাণ ঋণের কারণে কোম্পানিকে বাৎসরিক সুদ দিতে হয়। এর ফলে কোম্পানির আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

অভিযোগ রয়েছে, কোম্পানিটির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আবু নোমান হাওলাদার রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ব্যাংক থেকে বিভিন্ন সময়ে বড় অংকের ঋণ নিয়েছেন। আর এসব ঋণ কোম্পানিটি কবে কিভাবে পরিশোধ করবে তার কোন কুল কিনারা নেই। কারণ কোম্পানিটির উৎপাদনও দিনে দিনে কমতে শুরু করেছে।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, বর্তমানে বিবিএস ক্যাবলসের কারখানার উৎপাদন কমেছে অর্ধেক। কারখানার বেশিরভাগ কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে। এখন আর আগের মত কাজ নেই শ্রমিকদের। অনেকটা অলস সময় পার করছে শ্রমিকরা।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ৫ আগস্টে আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর অত্নগোপনে রয়েছে নোমান হাওলাদার। নোমানের উচ্চভিলাষী রাজনৈতিক জীবন-যাপনের কারণে কোম্পানিটি দিনে দিনে ধংস্বের দিকে যাচ্ছে।
কাগজে কলমে কোম্পানি করে নানা প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার আবু নোমান হাওলাদার। ২০২০ সালে শেয়ারবাজারে কারসাজির কারণে বিবিএস ক্যাবলস ও তার পরিচালকদের প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। বিবিএস ক্যাবলসের শেয়ার মার্কেট কেলেঙ্কারি দেশব্যাপী মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার হয়েছে। কিন্তু নোমান হাওলাদার রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সাবেক কমিশনকে তদবির করে জরিমানার কবল থেকে মুক্তি পায়।
কোম্পানিটির আর্থিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পর প্রথম ৪ বছর কোম্পানিটি ভালো মুনাফা করেছিল। ২০১৯ ও ২০২০ সালে কোম্পানিটি ১০ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ বোনাস, ২০২১ সালে কোম্পানিটি ১০ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস এবং ২০২২ সালে ৮ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছিল।
২০২১ সাল থেকে কোম্পানির আয় ও লভ্যাংশের পরিমাণ কমতে শুরু করেছে। আলোচ্য বছরে কোম্পানিটি ১০ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছিল। ২০২২ সালে ৮ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস, ২০২৩ সালে ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে।
আর কোম্পানিটি ৩০ জুন, ২০২৪ সালের জন্য ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। আলোচ্য বছরে কোম্পানিটির লোকসান দাড়িয়েছে ৬৩ পয়সা। আগের বছর কোম্পানিটি ৪৬ পয়সা আয় করেছিল।
চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির লোকসানের পরিমাণ দাড়য়েছে ২০ পয়সা। ২০২৩ সালে একই সময়ে কোম্পানির লোকসানের পরিমাণ ছিল ৩২ পয়সা।
জানা গেছে, কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির আগে ব্যাংক ঋণ পরিশোধের কথা বলে প্রাথমিক গণ প্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করেছিল। সেই টাকায় কোম্পানির ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করলেও নতুন করে আবার ডুবতে বসেছে ঋণের জালেই। এতে কোম্পানির সাথে বিনিয়োগকারীরাও ঝুঁকির মুখে পড়বে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
বিবিএস ক্যাবলসের মত এমন সুনামধন্য কোম্পানি কেন লোকসানের দিকে যাচ্ছে? কোম্পানির সচিব গোলাম হাবিবের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি ফোনে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
উল্লেখ্য, বি ক্যাটাগরির বিবিএস ক্যাবলস ২০১৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানিটির রিজার্ভ রয়েছে ৪৮৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।কোম্পানিটির মোট শেয়ার আছে ২১ কোটি ১৭ লাখ, ৯ হাজার ৭৬৭ টি। কোম্পানিটির অুমোদিত মূলধন ৩০০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ২১১ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এ প্রতিবেদন লেখা পরযন্ত রোববার (১ডিসেম্বর) কোম্পানিটি ১৭ টাকা ৮০ পয়সা দরে লেনদেন হচ্ছে।