জেনারেটিভ এআই চ্যাটজিপিটির ভেতরের গল্প

13

চলতি বছরের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই। মাইক্রোসফট ও অ্যালফাবেটের মতো বৃহৎ দুই টেক জায়ান্টের মধ্যে পরিষেবাটি চালু করা নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল প্রতিযোগিতা। সবারই বিশ্বাস, নতুন প্রজন্মের প্রযুক্তিটি কাজের ধরন ও প্রকৃতি আমূল বদলে দেবে। এ প্রযুক্তির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য প্রকাশ পেয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে।

জেনারেটিভ এআই কী

জেনারেটিভ এআই হলো ওপেনএআইয়ের একটি বিশেষ আবিষ্কার। এআইয়ের অন্যান্য ধরনের মতো জেনারেটিভ এআই অতীতের ডাটা থেকে কীভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে সেটি শিখছে। প্রযুক্তিটিকে এমনভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে যাতে এর প্রশিক্ষণের ওপর ভিত্তি করে ইনপুট দেয়া ডাটার মাধ্যমে সম্পূর্ণ নতুন কনটেন্ট তৈরি করতে পারে। এমনকি সম্পূর্ণ আলাদা টেক্সট, চিত্র, কম্পিউটার কোডও তৈরি করতে পারবে। অন্যান্য এআইয়ের মতো শুধু ডাটা ক্যাটাগরি বা শনাক্ত করা পর্যন্তই এর সীমাবদ্ধতা থাকছে না।

এআইয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যাপ্লিকেশন হলো চ্যাটজিপিটি। ২০২২ সালের শেষ দিকে এর বহিঃপ্রকাশ। চ্যাটজিপিটির পূর্ণরূপ জেনারেটিভ প্রি-ট্রেইন্ড ট্রান্সফরমার। এখানে জেনারেটিভ শব্দের অর্থ তৈরি করা এবং প্রি-ট্রেইন্ড অর্থ প্রশিক্ষিত ট্রান্সফরমার। চ্যাটজিপিটিতে ট্রান্সফরমার এমন একটি মেশিন লার্নিং মডেল, যা কোনো বিষয়ে সহজেই বুঝতে পারে।

চলতি সপ্তাহে ওপেনএআই একটি মাল্টিমোডাল ফিচারের ‘জিপিটি-৪’ সংস্করণ চালু করেছে। টেক্সট ছাড়াও চিত্রের বিশ্লেষণ করতে পারে সফটওয়্যারটি। ওপেনএআইয়ের প্রেসিডেন্ট গ্রেগ ব্রুকম্যান সম্প্রতি জিপিটি-৪-এর একটি প্রদর্শনীতে বিষয়টি দেখিয়েছেন।

এটা কিসের জন্য ভালো?

সব ধরনের বিতর্ককে পাশ কাটিয়ে ব্যবসায়ীরা এরই মধ্যে জেনারেটিভ এআইকে কাজে লাগাতে শুরু করেছেন। যেমন মার্কেটিংয়ের প্রাথমিক খসড়া তৈরি করতে প্রযুক্তিটি অত্যন্ত সহায়ক। যদিও এর মাধ্যমে তৈরি করা প্রতিবেদন খসড়ার কিছু বিষয় যাচাই করার প্রয়োজন হতে পারে। কেননা এটি শতভাগ নিখুঁত নয়।

অনলাইন মিটিংয়ের নোট নেয়া, ই-মেইল খসড়া তৈরি করা, পারসোনালাইজড ই-মেইল করা, স্লাইড প্রেজেন্টেশন সব কিছুই করতে পারে এ প্রযুক্তি। মাইক্রোসফট ও গুগল, চলতি সপ্তাহের সব প্রডাক্টের বিজ্ঞপ্তিতে ফিচারটি সংযুক্ত করেছে।

এর সমস্যা কোথায়?

সফটওয়্যারটি অত্যন্ত সহায়ক। তবে এর সম্ভাব্য অপব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ আছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে এআই রচিত লেখা জমা দেয়ার প্রবণতা তৈরি হতে পারে। ফলে কোনো কিছুর শেখার জন্য কঠোর পরিশ্রমের মানসিকতা কমে যাবে। সাইবার নিরাপত্তার গবেষকরাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কেননা জেনারেটিভ এআই আগের তুলনায় অনেক বেশি ভুল তথ্য তৈরি করতে পারে। বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। এক্ষেত্রে প্রযুক্তিটি কোনো প্রতিষ্ঠানে ব্যাপকভাবে চালু করার আগে যাচাই করার প্রয়োজন।

এটা কি শুধু গুগল আর মাইক্রোসফটের?

মাইক্রোসফট ও গুগল ওপেনএআইয়ের প্রকল্পগুলোয় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে। পাশাপাশি জিমেইল ও মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের মতো বহুল ব্যবহৃত সফটওয়্যারে জেনারেটিভ এআই ব্যবহারের ক্ষেত্রটিও সুবিশাল। তবে প্রযুক্তিটি শুধু এই দুটি প্রতিষ্ঠানের নয়।

মার্কিন ক্লাউডভিত্তিক সফটওয়্যার কোম্পানি সেলসফোর্স ইনকরপোরেটেডের মতো বড় কিছু কোম্পানি এবং প্রযুক্তিবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান অ্যাডেপ্ট এআই ল্যাবের মতো ছোট কোম্পানিগুলোও নিজস্ব এআই প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছে।

ইলোন মাস্ক কীভাবে জড়িত?

ওপেনএআইয়ের সিইও ও প্রতিষ্ঠাতা স্যাম অল্টম্যানের সঙ্গে সহপ্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ছিলেন মার্কিন ধনকুবের ইলোন মাস্ক। ২০১৮ সালে ওপেনএআইয়ের কাজ এবং তার নেতৃত্বাধীন বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি টেসলার এআই প্রকল্পের গবেষণাসংক্রান্ত দ্বন্দ্ব এড়াতে স্টার্টআপটির বোর্ড ত্যাগ করেন টেসলাপ্রধান।

ইলোন মাস্ক এআইয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। প্রযুক্তির উন্নয়ন যাতে জনস্বার্থে হয় এমনটা নিশ্চিত করতে একটি নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের ভূমিকা আহ্বান করেছেন তিনি। চলতি মাসে অনুষ্ঠিত টেসলার ‘ইনভেস্টর ডে ইভেন্টে’ এ প্রসঙ্গে কথা বলেন মাস্ক। তিনি বলেন, ‘এটা খুবই বিপজ্জনক প্রযুক্তি। যদিও টেসলা এআইতে ভালো কাজ করছে। তবে এটা আমার মধ্যে চাপ তৈরি করছে। আমি জানি না এ নিয়ে আর কী বলব।’