দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে স্বাদ ও পুষ্টিগুণে ভরপুর সীতাকুন্ড উপজেলার বাড়বকুন্ডের উৎপাদিত সুস্বাদু ‘লাল পেয়ারা’। আষাঢ় থেকে ভাদ্র- এ সময় এলেই চাষিদের চোখে-মুখে আনন্দের চিহ্ন দেখা যায়। এখানকার লোকজন পেয়ারা চাষ করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছে।
যে কোনো পেয়ারাতেই ভিটামিন ‘সি’ থাকলেও লাল পেয়ারায় ‘সি’ ছাড়াও ভিটামিন ‘এ’ রয়েছে। সরকারি সহযোগিতা পেলে এখানকার পেয়ারা চাষিরা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবেন। বাড়বকুন্ড পাহাড়ি এলাকায় চাষ হওয়া এই পেয়ারার আঞ্চলিক নাম ‘গয়াম’। সীতাকুন্ড এলাকার প্রায় ২০ কিলোমিটার পাহাড়ি অঞ্চলে গড়ে উঠেছে এই পেয়ারা বাগান। অনেকে বংশানুক্রমভাবে পাহাড়ে পেয়ারা চাষ করে আসছেন।

সীতাকুন্ডে দুই ধরনের পেয়ারার চাষ হলেও বাড়বকুন্ডের লাল পেয়ারা চাষে কৃষকদের উৎসাহ বেশি। স্থানীয় চাষিদের ভাষায় এই পেয়ারার নাম ‘আঞ্জির পেয়ারা’। এই পেয়ারার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, বাইরে হলুদ অথবা সবুজ আর ভেতরটা লালচে গোলাপি, আকারে খুব একটা বড় না হলেও স্বাদে অতুলনীয়। উপজেলার বাড়বকুন্ড, মোহন্তেরহাট, শুকলালহাট, কুমিরাবাজার ও দারোগারহাটে সরেজমিন দেখা যায়, প্রতিদিন ভোর থেকে চাষিরা দলে দলে বাগান থেকে পেয়ারা তুলে ভার কাঁধে নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন বাজারগুলোতে আসেন।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা এখান থেকে কমমূল্যে কিনে ট্রাকযোগে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছে। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার প্রায় ৩শ একর পাহাড়ি এলাকায় পেয়ারা চাষ হলেও শুধুমাত্র বাড়বকুন্ড এলাকায় লাল পেয়ারার চাষ হয়। ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও লাল পেয়ারা চাষ কেন সমগ্র উপজেলায় বিস্তার লাভ করে না, জবাবে কৃষক এবং কৃষি বিভাগ ভিন্ন মত পোষণ করেন। স্থানীয় কৃষি বিভাগের মতে, লাল পেয়ারা চাষে সাধারণ পেয়ারার চেয়ে বেশি সময় লাগে বলে কৃষকরা অধৈর্য হয়ে পড়েন।
অন্যদিকে চাষিরা জানান, চাহিদার কারণে তারা লাল পেয়ারা চাষে বেশি আগ্রহী কিন্তু মাটি ও প্রকৃতির কারণে বাড়বকুন্ডের বাইরে এই পেয়ারা চাষে সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে না। বাড়বকুন্ড মধ্যম মাহমুদাবাদ গ্রামের পেয়ারা চাষি মো. নুরুল আফছার অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে আর্থিক দৈন্যতার কারণে লেখাপড়া বাদ দিয়ে বন বিভাগ থেকে জমি লিজ নিয়ে বাড়বকুন্ড পাহাড়ে পেয়ারা চাষ শুরু করেন। পাহাড়ি টিলায় চারা রোপণের ৫ বছর পরে বাগানে পেয়ারা ধরতে শুরু করে।

তিনি জানান, ৪০ শতক জায়গায় পেয়ারা বাগান করতে জঙ্গল পরিষ্কারসহ মোট ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তিন বছর পর পেয়ারা ধরতে শুরু করলে মাত্র তিন মাসে ৭০ হাজার টাকার পেয়ারা বিক্রি করেন।
তিনি আরও জানান, পেয়ারা চাষ করেই তাদের ১০ জনের পরিবারের ভরণ পোষণ চলছে। শুধু তিনি নন, পেয়ারা চাষই এখানকার অধিকাংশ মানুষের জীবন-জীবিকার একমাত্র অবলম্বন।
চাষি তাজুল ইসলাম বলেন, এই পেয়ারা চাষ করে তিনি প্রচুর লাভবান হয়েছেন। মাত্র তিন মাস সময় দিয়ে এর লাভ থেকে সারা বছর সংসার খরচের টাকা আয় করি।
তিনি বলেন, দুই একর জমিতে বাগান পরিষ্কারসহ ২০ হাজার টাকা খরচ করে ৬০ হাজার টাকার মতো লাভ হয়েছে। একইভাবে মান্দারি টোলা গ্রামের হানিফ ৫০ হাজার টাকা খরচ করে দুই লাখ টাকা, আতর আলী ও কামাল উলস্ন্যা ৬০ হাজার টাকা খরচ করে ২ লাখ টাকা, সেলিম উলস্ন্যা ২০ হাজার টাকা খরচ করে ৭০ হাজার টাকা, আলিমউলস্ন্যা ২০ হাজার টাকা খরচ করে ৮০ হাজার টাকা, আবুল বশর বাবুল ৩০ হাজার টাকা খরচ করে এক লাখ টাকা আয় করেছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা জানান, প্রায় ২০ কিলোমিটার পাহাড়ি এলাকায় পেয়ারার চাষ হলেও একমাত্র বাড়বকুন্ড এলাকায় স্বল্প পরিসরে চাষ হওয়া লাল পেয়ারা সুস্বাদু আর নজরকাড়া রঙের কারণে ইতোমধ্যে খ্যাতিলাভ করেছে।
তিনি বলেন, লাল পেয়ারা একটি বিশেষ প্রজাতির পেয়ারা, তাই এটি আর্কষণীয়। সূত্র: যায়যায়দিন