ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ অগাস্ট ২০২৫, ১:২৭ পূর্বাহ্ন

খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার সময় বাড়ল ৩ মাস

২ শতাংশ ডাউনপেমেন্টে ট্যানারিশিল্পের খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার সময় আরও তিন মাস বাড়ানো হয়েছে। আসন্ন কোরবানির ঈদ সামনে রেখে পশুর কাঁচা চামড়া কেনার জন্য চামড়াশিল্পে অর্থায়নের উদ্দেশ্যে এই খাতের খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের আবেদন দাখিলের সময় ৩১ জুলাই পর্যন্ত নির্ধারিত ছিল। তবে ট্যানারির মালিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তা ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত বৃদ্ধি করে গতকাল এক সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এদিকে কোরবানির পশুর চামড়া কিনতে ট্যানারির মালিকদের স্বল্প সুদে নতুন তহবিল গঠনের আবেদন নাকচ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) পক্ষ থেকে ৩ শতাংশ সুদহারে ৫০০-৬০০ কোটি টাকার নতুন তহবিল (ক্যাশ ক্রেডিট) চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ সত্ত্বেও সম্প্রতি নতুন তহবিল গঠনের প্রস্তাব বতিল করে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, এই মুহূর্তে এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। চামড়া খাতের অর্থায়নের জন্য বাজেট থেকে নতুন তহবিল গঠন করা হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করবে। বিষয়টি অর্থ বিভাগকে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এ বিষয়ে বিটিএর চেয়ারম্যান মো. শাহীন আহমেদ বলেন, গত দুই বছরে আমাদের কেনা চামড়া বিক্রি হয়নি। ৭০০ কোটি টাকার চামড়া পড়ে আছে গোডাউনে। এখন চলছে করোনাসংকট। এ অবস্থায় আমরা নগদ অর্থের সংকটে রয়েছি। তাই নতুন অর্থ চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে এখনো আলাপ-আলোচনা চলমান রয়েছে।

জানা গেছে, ট্যানারিশিল্পে পুনঃতফসিল সুবিধা এর আগেও দুবার দেওয়া হয়েছিল। তবে পুনঃতফসিলের পর আবারও খেলাপি হয়ে পড়েন অধিকাংশ ট্যানারির মালিক। এবারও এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ খেলাপি ঋণ সর্বোচ্চ ৮ বছরে পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ৫ জুলাই এমন সুবিধা দিয়ে সার্কুলার জারি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকালের সার্কুলারে ঋণ পুনঃতফসিলের আবেদনের সময় বাড়ানো হলেও আগের জারি করা অন্যান্য নির্দেশনা অপরিবর্তিত রয়েছে।

বিভিন্ন কারণে চামড়া খাতে বিদ্যমান ঋণ নিয়মিতভাবে পরিশোধিত না হওয়ায় এ খাতে বিতরণ করা বেশির ভাগ ঋণ বিরূপমানে শ্রেণিকৃত হয়ে পড়ছে। ফলে এ খাতে স্বাভাবিক ঋণপ্রবাহ বজায় রাখা অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানিকৃত পশুর চামড়া ক্রয়-বিক্রয় ও সংরক্ষণের লক্ষ্যে কাঁচা চামড়া কেনার জন্য প্রকৃত চামড়া ব্যবসায়ীদের অর্থ প্রবাহ সচল রাখার উদ্দেশ্যে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের বিশেষ সুবিধা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

সাভারে শিল্প স্থানান্তরে ট্যানারির মালিকরা তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রমে বাধার মুখে পড়ায় এবং কাঁচা চামড়া ক্রয়ে তাদের সক্ষমতা কমে আসায় ঋণ পুনঃতফসিলের এই সুবিধা দেওয়া হয়। বার্ষিক চাহিদার ৫০ শতাংশ চামড়া ঈদুল আজহায় সংগ্রহ করেন ট্যানারির মালিকরা। এই উৎসবে কাঁচা চামড়া ক্রয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক ট্যানারি ব্যবসায়ীদের ঋণ দিতে ৫৮৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। ২০১৯ সালে ২৩ ট্যানারিশিল্পকে রাষ্ট্রায়ত্ত এই চার ব্যাংক মোট ৬৫৫ কোটি টাকা ঋণ সুবিধা দিয়েছিল।

এ ছাড়া ঈদ ও ঈদ-পরবর্তী সময়ে কাঁচা চামড়া কেনার জন্য চামড়া ব্যবসায়ীদের ঋণ দিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো সরকারের কাছে পুনঃঅর্থায়ন তহবিল দাবি করেছে। ব্যাংকগুলো চামড়া খাতে যে ঋণ দেবে তার ৫০ শতাংশ পুনঃঅর্থায়ন হিসেবে চেয়েছে, যার সুদহার হবে ৭ শতাংশ। এই সুদের ৪ শতাংশ ঋণগ্রহীতা ও ৩ শতাংশ সরকারকে ভর্তুকি হিসেবে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক।

খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল সুবিধার আওতায় ৫ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা সার্কুলারে বলা হয়, ২০২০ সালের ৩০ জুন ভিত্তিক ঋণ স্থিতির ন্যূনতম ২ শতাংশ নগদ ডাউনপেমেন্টে পুনঃতফসিল করার বিষয়ে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ব্যাংকগুলো নিজেরাই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে ইতিপূর্বে সংশ্লিষ্ট ঋণ হিসেবে আদায়কৃত কিস্তি ডাউনপেমেন্ট হিসেবে গণ্য হবে না। গ্রাহকের নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণে ঋণ হিসাব শ্রেণিকৃত হয়ে থাকলে এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সচল বা চলমান থাকলে এ সার্কুলারের আওতায় পুনঃতফসিল সুবিধা প্রদান করা যাবে। কেস-টু-কেস ভিত্তিতে এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ তলবি ও চলমান ঋণ সর্বোচ্চ ৬ বছর মেয়াদে এবং মেয়াদি ঋণ সর্বোচ্চ ৮ বছর মেয়াদে পুনঃতফসিল করা যাবে।

কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া কেনার উদ্দেশ্যে নতুন ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে কম্প্রোমাইজড অ্যামাউন্ট গ্রহণের শর্ত শিথিল করা যাবে। আগামী ২৯ অক্টোবরের মধ্যে নিজ নিজ ব্যাংকের কাছে এই সার্কুলারের আওতায় গ্রাহকদের ঋণ পুনঃতফসিলের আবেদন করতে হবে। ওই ডাউনপেমেন্টের মাধ্যমে নতুন করে ঋণও নিতে পারবেন চামড়াশিল্প মালিকরা।

জানা গেছে, রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তরের পর থেকেই ট্যানারির মালিকদের দফায় দফায় ঋণসুবিধা দিচ্ছে সরকার। কোরবানির ঈদের চামড়া সংগ্রহকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর ব্যাংকগুলো ট্যানারির মালিকদের অর্থায়ন করলেও সাধারণ মানুষ কোরবানির চামড়ার দাম পাচ্ছেন না। গত বছর চামড়ার অস্বাভাবিক দরপতনের পরিপ্রেক্ষিতে অনেকেই কোরবানির পশুর চামড়া রাস্তায় ফেলে দেন, কেউ কেউ মাটিতেও পুঁতে ফেলেন। আবার চামড়া কেনার জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিলেও তা ফেরতও দিচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। ফলে এ শিল্পে দেওয়া ঋণের বড় অংশই খেলাপি হয়ে পড়েছে।

সূত্র: দেশ রূপান্তর

নিউজটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন