নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের ডেলটা লাইফ ইনস্যুরেন্সের ২৫ লাখ গ্রাহকের আমানত লোপাট করার অভিযোগ উঠেছে ২০১২ থেকে ১৮ সাল পর্যন্ত বীমা কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা মনজুরুর রহমানের বিরুদ্ধে। যার প্রাথমিকভাবে এখান থেকে ১ হাজার ১৪১ কোটি টাকা লোপাটের প্রাথমিক তথ্য- প্রমাণও পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

পরিবারতন্ত্র কায়েম করে ডেলটা লাইফে হরিলুটের ফিরিস্তি তুলে ধরে প্রতিবেদন করেছে স্যাটেলাইট টেলিভিশন ডিবিসি। অভিযোগ ও মনজুরুর রহমানে এখন পূবালী ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছে। এই খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে; এখন আতঙ্কে আছে পূবালী ব্যাংকের সাধারণ গ্রাহকরা। এর খারাপ প্রভাব হতে পারে জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভও করছেন গ্রাহকরা।
জানা যায়, ২০১২ থেকে ১৮ সাল পর্যন্ত বীমা কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ছিলেন মনজুরুর রহমান। এসময়ে তার চার সন্তানকেই কৌশলে বানিয়েছেন পরিচালক। এরমধ্যে ২০১৭ সালে তার কন্যা আদিবা রহমানকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার চেয়ারে বসান তার বাবা।
দুদকের নথিপত্র বলছে, পরিবারতন্ত্র কায়েমের পরই শুরু হয় অনিয়ম-দুর্নীতি। একপর্যায়ে নানা অভিযোগের মাথায় মনজুরুর রহমান এবং তার সন্তানদের পরিচালনা পর্ষদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রশাসক নিয়োগ দেয় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ।

প্রতিষ্ঠানটির খোদ প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা বলছেন, রক্ষকরাই ছিলেন ভক্ষকের ভূমিকায়। প্রভাব বিস্তারের কাছে সৎ কর্মকর্তারা ছিলেন অসহায়।
এদিকে পূবালী ব্যাংকের গ্রাহক ও আইনজীবী ব্যারিস্টার সুমনের লাইভ গ্রাহকদের মনে আরও আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। তিনি লাইভে এসে বলেছেন, ‘আমি আর পূবালী ব্যাংকে লেনদেন করতে চাইনা। বর্তমান এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান তিনি হচ্ছেন মনজুরুর রহমান। এই লোকটিকে নিয়ে গতকাল ডিবিসি নিউজ করেছে। এই ব্যাংকে আসার আগে তিনি ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্সের চেয়ারম্যান ছিলেন। সেখানে থাকাকালীন১হাজার ১৪১ কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। যেটার তদন্ত করছে দুদক। ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স এর তিনি উনার পরিবারের চারজন ছেলে মেয়েকে পরিচালক পদে নিয়ে গেছেন। পারিবারিক-ভাবে যৌথভাবে ২৫ লাখ ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স এর টাকা লুটপাটের অভিযোগ এই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি চিন্তা করে দেখলাম যে ভদ্রলোক ওইখানে এত টাকা লুটপাট করেছে। এখন এসেছে পূবালী ব্যাংকে। এই ব্যাংকের ইমেজ কিন্তু অনেক ভাল ছিল। যে কারণে এখানে আমি নিজেই একাউন্ট খুলেছিলাম। এখন এই ধরনের বোয়াল মাছ যদি পুকুরে চলে আসে তাহলে ছোট মাছ আর বাসবেনা। এই চেয়ারম্যান যেহেতু পূবালী ব্যাংকে চলে আসছে আমি আর নাই।’
আমার হালাল টাকা আমার টাকা দাম আছে। দেশে আলোচনা হয় টাকা মরার পরে এর আগে কেউ আপনাদের সতর্ক করে না-বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
সুমন বলেন, ‘আশ্চর্য বিষয় হচ্ছে যার বিরুদ্ধে হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ সেরকম একটি লোক কিভাবে এই ব্যাংকের দায়িত্বে আসে।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, গ্রাহকের কাছ থেকে নেয়া ভ্যাটের নামে ৩৫ কোটি টাকা, আয়করের নামে ৩৩০ কোটি টাকা, বীমা গ্রাহকের মেয়াদোত্তীর্ণ এবং মৃত্যু দাবির ১৩৮ কোটি টাকা লোপাট করেছেন ডেলটা লাইফ ইনস্যুরেন্সের সাবেক চেয়ারম্যান মনজুরুর রহমান এবং পরিচালনা পর্ষদ। এছাড়া ভুয়া বিলের মাধ্যমে আইনি খরচ, ভবন রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়সহ বিভিন্ন খরচ দেখিয়ে আরও ৬৩৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। যার মোট অংক দাঁড়ায় ১ হাজার ১৪১ কোটি টাকা।
তার একান্ত সচিবের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।