ঢাকা, রবিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৫, ৯:৩১ অপরাহ্ন

পুঁজিবাজারের ১৮ ব্যাংকের লভ্যাংশ ঘোষণা ও বিতরণে নিষেধাজ্ঞা জারি

আর্থিক দুরবস্থা ও প্রভিশন ঘাটতির কারণে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ১৮টি ব্যাংককে লভ্যাংশ ঘোষণা ও বিতরণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়া অর্থবছরের জন্য এসব ব্যাংক কোনো প্রকার লভ্যাংশ দিতে পারবে না।

এই নির্দেশনা ২১ মে জারি করা এক চিঠির মাধ্যমে দেওয়া হয়, যেখানে ব্যাংক কোম্পানি আইন-১৯৯১-এর ২২ ধারা উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা দুর্বল এবং প্রভিশন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে।

নিষেধাজ্ঞায় থাকা ব্যাংকগুলো হলো

এবি ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, এসবিএসি ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) এবং রূপালী ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, যেসব ব্যাংক প্রভিশন ঘাটতি পূরণে ‘ডেফারেল সুবিধা’ নিয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে ডিভিডেন্ড বিতরণ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

জানা গেছে, প্রভিশন ঘাটতির কারণে নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত ব্যাংকগুলো নির্ধারিত সময় ৩০ এপ্রিলের মধ্যে বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে ব্যর্থ হয়। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের অনুমোদন নিয়ে সময়সীমা ৩১ মে পর্যন্ত বাড়ায়। একইসঙ্গে প্রভিশন সংরক্ষণের জন্য অতিরিক্ত সময়ও দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, প্রভিশন ঘাটতির তথ্য ব্যাংকগুলোর ২০২৪ সালের আর্থিক বিবরণীতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। পাশাপাশি লাভ-ক্ষতি, মূলধন পর্যাপ্ততা ও অন্যান্য ঘাটতির বিষয়গুলোও বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করতে হবে।

এক মাসের মধ্যে বোর্ড অনুমোদিত একটি সময়বদ্ধ ও বাস্তবসম্মত কর্মপরিকল্পনা জমা দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন ও দাখিলকৃত তথ্যে অসঙ্গতি পাওয়া গেলে ব্যাংক কোম্পানি আইনের আওতায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এছাড়া, ২০২৪ সাল থেকে যেসব ব্যাংক প্রভিশন সংরক্ষণে ডেফারেল সুবিধা নেবে, তাদের ডিভিডেন্ড দেওয়া নিষিদ্ধ থাকবে। পাশাপাশি, ভবিষ্যতে যেসব ব্যাংকের মোট ঋণের ১০ শতাংশের বেশি খেলাপি থাকবে, তাদের উপরও একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)-এর চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার এ সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “ব্যাংকের ওপর জনগণের আস্থার ভিত্তি হলো আমানতকারী, শেয়ারহোল্ডার ও গ্রাহক। ডিভিডেন্ড বন্ধ থাকলে এই আস্থায় চিড় ধরতে পারে।” নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা করলেও তারা অবস্থান থেকে সরে আসেনি বলে জানান তিনি।

 

নিউজটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন