ঢাকা, শুক্রবার, ৮ অগাস্ট ২০২৫, ৭:৫৫ পূর্বাহ্ন

১১ প্রভাবশালী পরিবারের অর্থ পাচারের চাঞ্চল্যকর অভিযোগ

বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংক এবার আরও কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। ১১টি প্রভাবশালী পরিবারের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে, যাদের বেশিরভাগ সম্পদ বিদেশে পাচার করেছে। এই পাচার করা অর্থ ফেরত আনার জন্য বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তৎপর হয়ে উঠেছে।

শুক্রবার (২৮ মার্চ) ‘বাংলাদেশ আপ এগেইন্টস টাইম টু ফাইন্ড স্টোলেন বিলিয়নস: সেন্ট্রাল ব্যাংক গভর্নর’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে অনলাইন আল জাজিরা। সংবাদমাধ্যমটির ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিটকে (আই-ইউনিট) দেয়া এক সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।

আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুসারে, ১১টি পরিবারের মধ্যে একটি পরিবারের বিরুদ্ধে ১৫ বিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এসব পরিবারের বিরুদ্ধে গত এক দশক ধরে ব্রিটেন, আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরে কোটি কোটি ডলার পাচারের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এদের বিরুদ্ধে ১১টি বিশেষজ্ঞ দল গঠন করেছে এবং এসব পরিবারের পাচার করা সম্পদ উদ্ধারের চেষ্টা করছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর আল জাজিরাকে বলেন, আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে দেশের রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়িক অভিজাতরা বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন। এই পরিবারগুলোর অনেকেরই লন্ডনে বিপুল সম্পদ রয়েছে, যা উদ্ধারের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে। এই পাচারের কারণে দেশের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

গভর্নর আহসান মনসুর আরও বলেন, পাচারকৃত অর্থ দ্রুত উদ্ধার না করলে তা সহজেই হারিয়ে যেতে পারে। তিনি ব্রিটেনসহ অন্যান্য দেশের সহায়তায় পাচারের অর্থ উদ্ধারের জন্য আলোচনা শুরু করেছেন। এর মধ্যে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কমনওয়েলথ দপ্তর এবং লন্ডনের আইনি সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা করা হচ্ছে।

এছাড়া, আল জাজিরার প্রতিবেদনে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে ৫০০ মিলিয়ন ডলার অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। তার পরিবারের ৩৬০টি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে, যা লন্ডন এবং দুবাইতে অবস্থিত। বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন ইতিমধ্যেই সাইফুজ্জামানের ৪০টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে এবং তাকে দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

সাইফুজ্জামান নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, তার সম্পদ বৈধভাবে অর্জিত। তিনি অভিযোগ করেন, তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আক্রমণ চলছে। তবে গভর্নর আহসান মনসুর এসব সম্পদ উদ্ধার করার বিষয়ে আরও কঠোর মনোভাব প্রকাশ করেছেন। তিনি চান যে, পাচারকারী পরিবারগুলোর অর্থ পাচারে সহায়তা করা আইনজীবী, ব্যাংকার এবং এস্টেট এজেন্টদেরও তদন্তের আওতায় আনা হোক।

এদিকে, পাচারকৃত অর্থ উদ্ধার প্রক্রিয়া কিছুটা ধীরগতিতে চলছে, কারণ এর কাজের জটিলতা রয়েছে। তবে ব্রিটেন সরকার এক্ষেত্রে সহায়তা করছে, যা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সহায়তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। অর্থ উদ্ধার প্রক্রিয়া শুরু হলেও, গভর্নর মনসুর জানিয়েছেন, পাঁচ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে এসব অর্থ উদ্ধার করতে।

অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার বিষয়ে গভর্নর মনসুর বলেছেন, অনেক ব্যাংক অপারেটর এবং এজেন্ট আইন লঙ্ঘন করে পাচারকারীদের পুনর্বাসনে সহায়তা করছেন। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর, পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারের কার্যক্রম আরও জটিল হয়ে পড়েছে। মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) তহবিল স্থগিত হওয়ার ফলে বাংলাদেশে তদন্তকারী সংস্থাগুলোর কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। এই পরিবর্তন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বলে গভর্নর আহসান মনসুর মন্তব্য করেছেন।

এদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এই পাচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে, যাতে দেশের অর্থনীতি ফের সঠিক পথে ফিরে আসে।

নিউজটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

ট্যাগঃ