ঢাকা, সোমবার, ৪ অগাস্ট ২০২৫, ৬:২৫ অপরাহ্ন

সংকটেও মুনাফায় সিমেন্ট খাতের বেশিরভাগ কোম্পানি

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের অর্থনৈতিক মন্দা, ব্যাংকের সুযোগ-সুবিধা কমে যাওয়াসহ নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিমেন্ট খাতের অধিকাংশ কোম্পানি মুনাফা করেছে এবং লভ্যাংশ প্রদান করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সিমেন্ট খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, গত দুই বছর ধরে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি একেবারেই নাজুক অবস্থায় রয়েছে। ব্যাংকগুলো এলসি-লেটার অব ক্রেডিট খোলার ব্যাপারে খুবই সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। সাধারণত সিমেন্টের কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। পর্যাপ্ত এলসি খুলতে না পারায় অনেক কোম্পানির উৎপাদন কমে গেছে। এছাড়াও বাজারে সিমেন্টের চাহিদা কমে গেছে। ফলে এই খাতের কোম্পানিগুলোকে মুনাফা করতে হচ্ছে নানা চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে। আর যারা এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ব্যর্থ হচ্ছে তারা লোকসান করছে বলে জানান তারা।

তারা বলেন, বর্তমানে যে মূল্যস্ফীতি বিরাজমান, এই অবস্থায় মানুষ তার খাদ্যের চাহিদা পূরণ করতেই হিমশিম খাচ্ছে। ফলে অনেকের ইচ্ছা থাকা স্বত্ত্বে অর্থের অভাবে বাড়ি, অফিস নির্মাণ করতে পাচ্ছে না। আগে সরকারি বিভিন্ন প্রজেক্টে সিমেন্টের চাহিদা ছিল ৩০ শতাংশ। এখন তা ৫ থেকে ৭ শতাংশে নেমে এসেছে। ফলে সব দিক দিয়ে সিমেন্টের চাহিদা আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফা করা এবং লভ্যাংশ প্রদান আরও কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়াবে।

আর্থিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ক্রাউন সিমেন্ট পিএলসি সর্বশেষ হিসাব বছরে (৩০ জুন ২০২৪) শেয়ার প্রতি আয় করেছে ৬ টাকা ৭৪ পয়সা। এই সময়ে বিনিয়োগকারীদের জন্য ২১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। ‘এ’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করা কোম্পানির সর্বশেষ সমাপনী শেয়ার দর ছিল ৪৮ টাকা ১০ পয়সা।

কনফিডেন্স সিমেন্ট পিএলসি– সর্বশেষ হিসাব বছরে শেয়ারপ্রতি সমন্বিত আয় হয়েছে ৮ টাকা ৭৩ পয়সা। মোট মুনাফা করেছে ৭৫ কোটি ৩৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করেছে। কোম্পানির সর্বশেষ সমাপনী শেয়ার দর ছিল ৬০ টাকা ৬০ পয়সা।

প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলস পিএলসি– সর্বশেষ হিসাব বছরে শেয়ার প্রতি সমন্বিত আয় হয়েছে ৭ টাকা ০৪ পয়সা। মোট মুনাফা হয়েছে ৭৪ কোটি ২৩ লাখ ১০ হাজার টাকা। ‘এ’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করা কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য সাড়ে ২১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। সর্বশেষ সমাপনী শেয়ার ছিল ৫১ টাকা ১০ পয়সা।

অ্যারামিট সিমেন্ট লিমিটেড– গত দুই বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ প্রদান করেনি। সদ্য বিদায়ী হিসাব বছরে কোম্পানির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ১৪ টাকা ৪৭ পয়সা। মোট লোকসান হয়েছে ৪৯ কোটি ২ লাখ ৪৩ হাজার ৬০০ টাকা। কোম্পানির সর্বশেষ সমাপনী শেয়ার দর ছিল ১২ টাকা ৬০ পয়সা।

মেঘনা সিমেন্ট মিলস পিএলসি– সর্বশেষ হিসাব বছরে কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। এই সময়ে কোম্পানির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ৭ টাকা ১৬ পয়সা। মোট লোকসান হয়েছে ২২ কোটি ৬১ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। কোম্পানির সর্বশেষ সমাপনী শেয়ার দর ছিল ৪৬ টাকা ৫০ পয়সা।

হাইডেল বার্গ ম্যাটারিয়ালস বাংলাদেশ পিএলসি– ডিসেম্বর ক্লিজিংয়ের প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ হিসাব বছরে (৩১ ডিসেম্বর ২০২৩) শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৮ টাকা ১৩ পয়সা। মোট মুনাফা হয়েছে ৪৫ কোটি ৯৪ লাখ ১০ হাজার টাকা। কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করেছে। ‘এ’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করা কোম্পানিটির সর্বশেষ সমাপনী শেয়ার দর ছিল ২২৬ টাকা ৯০ পয়সা।

লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ পিএলসি– ডিসেম্বর ক্লোজিংয়ের কোম্পানিটির সর্বশেষ হিসাব বছরে সমন্বিত শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৫ টাকা ১২ পয়সা। মোট মুনাফা হয়েছে ৫৯৪ কোটি ২০ লাখ ৯০ হাজার টাকা। বিনিয়োগকারীদের জন্য ৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। কোম্পানির সর্বশেষ সমাপনী শেয়ার দর ছিল ৫৪ টাকা ২০ পয়সা।

অ্যারামিট সিমেন্টের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) শাহ্ আলম বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই আমরা লোকসানে আছি। বিক্রির তুলনায় উৎপাদন খরচ অনেক বেশি হয়। সেকারণে আমাদের ম্যানেজমেন্ট উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। অল্প পরিমাণে উৎপাদন করি এবং আমাদের নিজেদের কিছু গ্রাহকের কাছে তা সরবরাহ করি। তবে খুব শিগগির-ই এই নাজুক পরিস্থিতি থেকে কোম্পানি ঘুরে দাঁড়াবে।

তিনি আরও বলেন, পুরো সিমেন্ট খাত অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে। অনেক সিমেন্ট কোম্পানি মুনাফা না করলেও তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মুনাফা দেখাচ্ছে। পাশাপাশি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মুনাফা থেকে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ প্রদান করছে।

ক্রাউন সিমেন্টের প্রধান উপদেষ্টা মাসুদ খান বিজনেস আই বাংলাদেশকে বলেন, সিমেন্ট খাতের কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। অনেক প্রতিষ্ঠান এলসি খুলতে না পারায় কাঁচামাল আমদানি করতে পারছে না। ফলে তাদের মধ্যে অনেকেই অন্য দেশি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তারা কাঁচামাল কিনে নিচ্ছে। এতে করে তাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। মুনাফা করতে হিমশিম খাচ্ছে। কেউ কেউ লোকসান করছে। তাছাড়া প্রতি বছর সিমেন্টের চাহিদা কমতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় সিমেন্টে ভালো ব্যবসা করা সহজ নয়।

তিনি বলেন, সিমেন্ট খাতে অনেক প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ক্রাউন সিমেন্ট ভালো অবস্থায় আছে। সর্বশেষ হিসাব বছরে আমরা দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছি। আমাদের নিজস্ব জাহাজ দিয়ে বিদেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি করা হয়। ব্যাংকগুলোর সাথে আমাদের বিশ্বস্ত সর্ম্পক। যে কারণে খুব সহজেই আমরা এলসি খুলতে পারি। তবে পুরো সিমেন্ট খাতকে ভালো অবস্থায় আনতে হলে মূল্যস্ফীতি কমানোর পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হবে।

নিউজটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন