নিজস্ব প্রতিবেদক
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শেয়ারবাজার থেকে এক লাখ কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে বলে সম্প্রতি জানিয়েছে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। এ বিষয়ে বিজনেস আই বাংলাদেশের সাথে কথা বলেছেন শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞরা।

পাঠকদের উদ্দেশ্যে তাদের মন্তব্য তুলে ধরা হলো-
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ. বি. মির্জ্জা মোঃ আজিজুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শেয়ারবাজার নেতিবাচক ও অস্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। মূলত বিশাল অঙ্কের এই টাকা পাচার বা আত্মসাৎ হওয়ার কারণে শেয়ারবাজার ভঙ্গুর অবস্থায় চলে গিয়েছে। বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বাজারে সুশাসন না থাকার কারণেই এমনটি হয়েছে। বর্তমান সরকারের উচিত এই অর্থ আত্মসাতের সাথে যারা জড়িত তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া। যাতে ভবিষ্যতে কেউ এধরনের কাজ করতে না পারে।
বিএসইসি কর্তৃক গঠিত টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল আমিন বলেন, আগের সরকারের আমলে শেয়ারবাজার থেকে এ্ই টাকা চলে গেছে। এই টাকা রিকভার করতে সময় দিতে হবে। টাস্কফোর্স কমিটি বাজারের উন্নয়নে কাজ করছে। ভবিষ্যতে যাতে শেয়ারবাজার এই ধরনের সমস্যার সম্মুখিন না হয় সেজন্য আমরা কাজ করছি। তিনি বলেন, এই টাকা বাজার থেকে চলে যাওয়াতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাত সংকুচিত হয়েছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ফলে অনেক বিনিয়োগকারী নতুন করে বাজারে বিনিয়োগ করতে আস্থা পাচ্ছেন না। ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে নতুন করে বিনিয়োগ করলে শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারে। কারণ আইসিবিকে অনুসরণ করে অনেকেই নতুন করে বিনিয়োগ করবে বাজারে। এতে বাজারের তারল্য সংকট অনেকটা কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন (বিএমবিএ) এর সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ এ হাফিজ বলেন, শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি যে প্রতিবেদন দিয়েছে তার সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত। তারা সবকিছু দেখেশুনেই এই প্রতিবেদন দাখিল করেছে। আমাদের শেয়ারবাজার গেম্বলার নির্ভর। আমি অনেক আগে থেকে বলে আসছি গেম্বলারদের মাধ্যমে শেয়ারবাজারের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, অতিতে গেম্বলারদের দিয়েই শেয়ারবাজারকে উন্নয়ন করার চেষ্টা করা হয়েছে। যার কারণে বাজার দীর্ঘদিন ধরেই ভঙ্গুর ও অস্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। তিনি বলেন, শেয়ারবাজারের প্রকৃত উন্নয়ন করতে হলে দেশি-বিদেশি ভালো ভালো বিনিয়োগ আনতে হবে। বাজারে আসতে তাদেরকে উৎসাহ দিতে হবে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ.জি.এম সাত্তিক আহমেদ শাহ বলেন, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরমভাবে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। যেকারণে বর্তমানে অনেকেই বাজার থেকে হাত গুটিয়ে নিয়েছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর সাবেক শিবলী কমিশন বাজারের উন্নয়ন ও দুর্নীতিমুক্ত করতে অনেক কিছুই করতে পারতো। কিন্তু সেগুলো কিছুই করেনি। যেকারণে বাজার থেকে এতোগুলো টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। এখন রাতারাতি শেয়ারবাজার ভালো করা সম্ভব নয়। কিছুটা সময় দিতে হবে। অতিতের কোনো সরকারেই শেয়ারবাজারকে খুব একটা গুরুত্ব দিয়ে দেখেনি।
উল্লেখ্য, গত রোববার (১ ডিসেম্বর) শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে একটি প্রতিবেদন হস্তান্তর করেছে, যেখানে বলা হয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শেয়ারবাজার থেকে এক লাখ কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতারণা, কারসাজিসহ প্লেসমেন্ট শেয়ার এবং আইপিও বা প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে জালিয়াতির মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে এই টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এছাড়াও বাজারের মধ্যস্থতাকারী দেউলিয়া হয়েছে, তাদের ইক্যুইটি ৩০ হাজার কোটি টাকা নেতিবাচক হয়েছে।