পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজের কারখান বন্ধ রয়েছে। সম্প্রতি এমন খবর সংবাদপত্র ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। তারপরেও কেন শেয়ারটির দর বাড়ছে? বন্ধ কোম্পানির শেয়ার কিনছে কারা? এমন প্রশ্ন এখন বাজার সংশ্লিষ্টদের মনে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার এমারেল্ড অয়েল ২ টাকা ৮০ পয়সা বা ৯.৬৯ শতাংশ দর বেড়ে টপটেন গেইনার তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে। এদিন কোম্পানিটির শেয়ার সর্বশেষ ৩১ টাকা ৭০ পয়সা দরে লেনদেন হয়।

বৃহস্পতিবার বন্ধ এমারেল্ড অয়েলের শেয়ার লেনদেনও বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। আজ কোম্পানিটি ৩ হাজার ৬৭ বারে ২৬ লাখ ৮৪ হাজার ৩৪৬টি শেয়ার লেনদেন করেছে।
কোম্পানিটির এমন লেনদেনের পেছনে কারসাজিচক্রের বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, উৎপাদন বন্ধ থাকা এমারেল্ড অয়েলের শেয়ার কারা কিনছে, কেন কিনছে? এটা অবশ্যই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) খতিয়ে দেখা উচিত। এক শ্রেণীর অসাধু ব্যাক্তি কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারটির দর বৃদ্ধি করে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বাজার ছাড়বে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
তাই বিএসইসির উচিত শেয়ারটির কারসাজি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা। এরকম বন্ধ কোম্পানির শেয়ার কারসাজি থামাতে না পারলে বর্তমান কমিশনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে বলেও জানান বাজার সংশ্লিষ্টরা।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, এমারেল্ড অয়েলের শেয়ার থেকে কারসাজিকারকরা বের হওয়ার জন্যই এখন নতুন করে শেয়ারটি হাতবদল করছে। এর ফলে শেয়ারটির মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ৫ আগস্টের আগে এই শেয়ারটি যাদের কাছে কেনা ছিল, তারা এখন শেয়ারটি বিক্রির জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। কারণ ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর বিএসইসিতে নতুন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করে, ফলে মাঝে শেয়ারটিতে কারসাজি বন্ধ ছিল। এখন আবারও কারসাজিকারকরা সক্রিয় হয়েছে শেয়ারটি বিক্রি করতে।
এদিকে গত ১৯ ও ২০ নভেম্বর এমারেল্ড অয়েল বন্ধ সম্পর্কে অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিজনেস আই বাংলাদেশ খবর প্রকাশ করে। আর ২১ নভেম্বর ডিএসইকে কোম্পানিটি বন্ধের খবর জানায়।
জানা গেছে, প্রায় আট মাস ধরে এমারেল্ড অয়েলের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। সব শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে। সদ্য বিদায়ী অর্থ বছরের (৩০ জুন ২০২৪) তৃতীয় ও বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন এখনও প্রকাশ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। এমন নাজুক কোম্পানিটির শেয়ার দর হু হু করে বাড়ছে। ফলে নিঃসন্দেহে এই শেয়ার বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে কারসাজিকারদের হাত। আর এর প্রধান হিসেবে কাজ করছেন কোম্পানিটির কর্পোরেট পরিচালক মিনোরি বাংলাদেশের কর্ণধার মিয়া মামুন।
কারসাজির উদ্দেশ্যেই মূলত মিয়া মামুন প্রতিষ্ঠানটি অধিগ্রহণ করেছেন। ইতিমধ্যে তিনি শেয়ার কারসাজি করে উচ্চ দামে একাধিকবার এমারেল্ড অয়েলের শেয়ার বিক্রি করেছেন।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, জাপানের নাগরিক মিয়া মামুন। কারসাজি করে উচ্চ দামে তার কাছে থাকা এমারেল্ড অয়েলের শেয়ার বিক্রি করে জাপানে পাড়ি জমানোর পায়তারা করছেন। তাই কোম্পানিটির শেয়ারে কোনোভাবে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ না করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
তারা আরও বলেন, অতিতে আমরা দেখেছি অনেক কোম্পানির শেয়ার কারসাজি করে এবং সেগুলো উচ্চ দামে বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করে বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে কারসাজিকারকরা বাজার থেকে উধাও হয়েছেন। বিএসইসি তাদেরকে দিয়েছে নামমাত্র শাস্তি। এতে করে বাজারে তাদের দৌরত্ব কমেই-নি উপরন্ত বেড়েছে। তাই অতিতের মতো যাতে ভুল না হয় সেজন্য এখনই এমারেল্ড অয়েলের কারসাজিকারদের দৌরত্ব থামাতে হবে, বাঁচাতে হবে সাধারণ বিনিয়োগকারেদের বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।