ঢাকা, সোমবার, ৪ অগাস্ট ২০২৫, ৮:৫২ পূর্বাহ্ন

ইভেন্স টেক্সটাইলের উপরে ফিটফাট, ভেতরে সদরঘাট

নিজস্ব প্রতিবেদক

উপরে ফিটফাট, ভেতরে সদরঘাট- দেশের সর্বত্র প্রচলিত একটি প্রবাদ। আর এই প্রবাদটি-ই যেন পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত টেক্সটাইল খাতের কোম্পানি ইভেন্স টেক্সটাইলস লিমিটেডের জন্য প্রযোজ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রবাদটি একটু ঘুরিয়ে বলা যেতে পারে, ইভেন্স টেক্সটাইলের উপরে ফিটফাট কিন্তু বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয়ার বেলায় সদরঘাট।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইভেন্স টেক্সটাইলের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল আলম চৌধুরী একজন প্রথিতযশা ব্যবসায়ী, ছিলেন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন-বিজিএমইএ এর সভাপতি। এছাড়াও ফেডারেল অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ-এফবিসিসিআই এর পরিচালকও ছিলেন। প্রতিষ্ঠানটির অফিস, কারখানাও মানসম্মত।

অথচ এতো ফিটফাটের প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগকারীদের কাঙ্খিত লভ্যাংশ দিচ্ছে না। গত চার বছরে নামমাত্র দুই থেকে আড়াই শতাংশের মধ্যে লভ্যাংশ প্রদান করেছে। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই- সেপ্টেম্বর ২০২৪) আয় হয়েছে সামান্যই। এছাড়াও গত চার বছরে নামমাত্র আয় দেখিয়েছে কোম্পানিটি, যা কোনোভাবেই কোম্পানিটির সাথে যায় না বলে মনে করেন বাজার বিশ্লেষকরা।

এদিকে প্রতিষ্ঠানটির এই বেহাল দশাকে বেহাল বলতে নারাজ কোম্পানি সচিব মো. সাব্বির হাসান মাহমুদ। তিনি বিজনেস আই বাংলাদেশকে বলেন, সাম্প্রতিককালে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কিছুদিন ফ্যাক্টরি বন্ধ ছিল। গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি থাকায় পণ্য উৎপাদন কম হয়েছে। যে কারণে প্রথম প্রান্তিকে আয় কমেছে। এছাড়া গত ৪/৫ বছর ধরে দেশের পরিস্থিতি আমরা সবাই জানি। কোভিড মহামারি পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমরা ঠিকভাবে ব্যবসা করতে পারিনি। যার কারণে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশও বেশি দিতে পারিনি। তবে আয় অনুযায়ী লভ্যাংশ প্রদান ঠিক আছে, যোগ করেন তিনি।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, টেক্সটাইল খাতের অন্যান্য কোম্পানি যেখানে কোভিড পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেও সন্তোষজনক আয় করেছে ও লভ্যাংশ প্রদান করেছে, সেখানে সাব্বির হাসান মাহমুদের এই বক্তব্য একেবারেই বেমানান। মূলত বিনিয়োগকারীদের ঠকানোই ছিল ইভেন্স টেক্সটাইলের মূল লক্ষ্য। যে কারণে কোম্পানির আয় ও লভ্যাংশ প্রদানে যথেষ্ট কারচুপির আশ্রয় নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি বলে ধারনা বাজার সংশ্লিষ্টদের।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, সদ্য বিদায়ী বছরে (৩০ জুন ২০২৪) ইভেন্স টেক্সটাইল বিনিয়োগকারীদের মাত্র আড়াই শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এছাড়াও ২০২১, ২০২২ সালে নামমাত্র দুই শতাংশ করে এবং ২০২৩ সালে ২ দশমিক ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করেছে। যেখানে পুঁজিবাজারে বস্ত্র খাতের অসংখ্য কোম্পানি গত ৪/৫ বছরে বিনিয়োগকারীদের সন্তোষজনক লভ্যাংশও প্রদান করেছে। আয়ও করেছে সন্তোষজনক।

আর্থিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ইভেন্স টেক্সটাইলের চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ০ দশমিক ০১ টাকা। এর আগের বছরের একই সময়েও ০ দশমিক ০১ টাকা আয় হয়েছিল।

এছাড়াও ২০২১ সালে শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে দশমিক ০০১ টাকা, ২০২২ সালে লোকসান হয়েছে ০ দশমিক ১২১ টাকা, ২০২৩ সালে ০ দশমিক ০৯ টাকা এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালে ০ দশমিক ৫৮ টাকা আয় হয়েছিল।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বেশি লভ্যাংশ যাতে না দিতে হয়, সে কারণেই মূলত কোম্পানিটি কম আয় দেখিয়ে ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়েছে। ইভেন্স টেক্সটাইলের মতো অসংখ্য কোম্পানি রয়েছে যারা পর্যাপ্ত আয় ও মুনাফা করেও তা কম দেখিয়েছে। পাশাপাশি কম লভ্যাংশ প্রদান করেছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতিষ্ঠানটির গত কয়েক বছরের আর্থিক প্রতিবেদন ভালোভাবে খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করেন বাজার বিশ্লেষকরা।

উল্লেখ্য, ‘বি’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করা ইভেন্স টেক্সটাইলের মোট শেয়ার সংখ্যা ১৮ কোটি ৩৭ লাখ ৪৪ হাজারটি, যার মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে শেয়ার রয়েছে ৩৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৪৯ দশমিক ৮১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। ৩৫০ কোটি টাকার অনুমোদিত মূলধনী কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ১৮৩ কোটি ৭৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ইভেন্স টেক্সটাইলের বুধবার (১৩ নভেম্বর) সমাপনি দর ছিল ১০ টাকা ৯০ পয়সা।

 

নিউজটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন