ঢাকা, শনিবার, ২ অগাস্ট ২০২৫, ৭:০১ অপরাহ্ন

ট্যাক্সের টাকা দিয়েই দেশের উন্নয়ন হচ্ছে

দেশের সচেতন জনগণের মাঝে দিন দিন ট্যাক্স দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে বলে আমি মনে করি। আয়কর সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হওয়ায় আমরা মানুষের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমাদের কাছে যেটা মনে হয়েছে মানুষ ট্যাক্স দিতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন দেশের শীর্ষ ভ্যাট-ট্যাক্স নিয়ে কাজ করা কোম্পানি ট্যাক্সস্যাভিওর কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেজবাউদ্দীন মো. জীবন চৌধুরী।

তিনি বলেন, একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে মানুষ দেশের উন্নয়নের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করতে চায়। আমাদের ট্যাক্স ব্যবস্থাকে যদি সহজ সরল- সাধারণ মানুষের কাছে বোধগম্য এই পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারি দিনে দিনে আমাদের ট্যাক্স দেওয়ার প্রবণতা আরও বাড়বে।

দেশের সাধারণ মানুষের মাঝে ট্যাক্স প্রদানে অনীহা তৈরি হওয়া, ট্যাক্স ডিজিটাল ও ট্যাক্সভীতি দূর করাসহ নানা বিষয় নিয়ে বিজনেস আই বাংলাদেশের সাথে কথা বলেছেন মেজবাউদ্দীন মো. জীবন চৌধুরী। সাক্ষারকারটি নিয়েছেন ফয়সাল আহমেদ।

বিজনেস আই বাংলাদেশ : আপনার প্রতিষ্ঠান ট্যাক্সস্যাভিওর কোম্পানি লিমিটেড সম্পর্কে জানতে চাই

মেজবাউদ্দীন মো. জীবন চৌধুরী: আমার কোম্পানি ট্যাক্সস্যাভিওর লিমিটেড। এখানে ট্যাক্স ও ভ্যাট কনসালটেন্সি, ক্রেডিট ট্রেডিং, ইন্টারনাল অডিট, এক্সটারনাল অডিট, করপোরেট ফাইন্যান্স, কোম্পানি নিবন্ধন, অ্যাকাউন্টিং আউটসোর্স, ট্রেড লাইসেন্স, ট্রেডমার্ক, আইআরসি এবং ইআরসি বিডা নিবন্ধন নিয়ে কাজ করা হয়।

বিজনেস আই বাংলাদেশ: একটি আদর্শ ট্যাক্স ফর্ম এর জন্য কী কী গুণাবলী থাকা দরকার

মেজবাউদ্দীন মো. জীবন চৌধুরী : ট্যাক্স ফর্মের জন্য গুণাবলীর কথা যদি আমি বলি তাহলে একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠানের প্রথম যুক্তবর্ণ গুণাবলী হচ্ছে সম্মানিত ক্লায়েন্টের সমস্যাগুলো মনোযোগ সহকারে শোনা। একইসাথে তাদের সমস্যাগুলো গুরুত্ব অনুধাবন করে যথাযথ সমাধান নিশ্চিত করা। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের নির্ভুল সাংগঠনিক ব্যবস্থা এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা থাকতে হবে। স্পষ্ট, সংক্ষিপ্ত, প্রাসঙ্গিক ও কার্যকরভাবে যোগাযোগ রাখার দক্ষতা থাকতে হবে। পেশাগত আত্মবিশ্বাস এবং সততা তার গুরুত্বপূর্ণ গুণাবলীর মধ্যে একটি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটা তা হল জবাবদিহিতা। মানুষ মাত্রই কিন্তু ত্রুটিমুক্ত নয়। তাই ত্রুটি স্বীকার করার সৎ সাহস থাকতে হবে। সর্বাগ্রে ক্লায়েন্টের যাবতীয় তথ্যের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।

বিজনেস আই বাংলাদেশ: আমরা দেখছি দেশের জনগণের মধ্যে ট্যাক্স না দেওয়ার যে অনীহা তৈরি হয়েছে। এই অনীহা তৈরি হওয়ার কারণ হিসেবে আপনি কী মনে করেন

মেজবাউদ্দীন মো. জীবন চৌধুরী: আপনি ভালো করেই জানেন আয়কর সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হওয়ায় আমরা সাধারণ মানুষের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমার কাছে যেটা মনে হয়েছে, সাধারণ মানুষ ট্যাক্স দিতে চায়। ট্যাক্স প্রদানের ক্ষেত্রে তাদের আগ্রহ অনেক বেশি। ট্যাক্স প্রদান করে একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে দেশের উন্নয়নে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করতে চায়। আমি মনে করি আমাদের ট্যাক্স ব্যবস্থাকে যদি সহজ-সরল সাধারণ মানুষের কাছে বোধগম্য এই পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারি; তাহলে দিন দিন আমাদের ট্যাক্স দেওয়ার প্রবণতা আরও বাড়বে। আয়কর ডিজিটালাইজেশনের কারণে আপনি বর্তমানে ইন্ডিভিজুয়াল ট্যাক্স রিটার্ন অনলাইনে আপনি সাবমিট করতে পারবেন। মনে রাখতে হবে ট্যাক্স রিটার্ন এবং ট্যাক্স প্ল্যানিং বা পরিকল্পনা এই দুটো একেবারেই ভিন্ন বিষয়। ট্যাক্স প্ল্যানিং হল- একটি আর্থিক পরিস্থিতি বা পরিকল্পনার বিশ্লেষণ। যেন সব উপাদান একসাথে কাজ করে। যেন আপনি সম্ভাব্য সর্বনিম্ন ট্যাক্স প্রদান করতে পারেন। একটি পরিকল্পনা যা নির্ধারণ করে আপনি আইনের মধ্যে থেকে দক্ষতার সহিত সর্বনিম্ন কতটা ট্যাক্স প্রদান করেন। এজন্য প্রয়োজন আয়কর পরিষেবায় দক্ষ ও বিশ্বস্ত একজন আয়কর বিশেষজ্ঞ বা প্রতিষ্ঠান। যার সহায়তায় আপনার কষ্টাঅর্জিত সম্পদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত বিধান করে রাষ্ট্রের সুনাগরিক হিসেবে আপনার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করবেন।

বিজনেস আই বাংলাদেশ: একজন সাধারণ নাগরিক কেন ট্যাক্স দিবে?

মেজবাউদ্দীন মো. জীবন চৌধুরী: একজন নাগরিক ট্যাক্স প্রদান করবেন আমাদের দেশের উন্নয়নের জন্য। একজন নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রীয় যে সুযোগ-সুবিধা আমরা ভোগ করছি তার জন্য। আজকে যে দৃশ্যমান পদ্মা সেতু, এই পদ্মা সেতু কিন্তু আমাদের ট্যাক্সের টাকা দিয়েই হয়েছে। আমাদের জনগণের টাকায় হওয়া পদ্মা সেতু নিয়ে আমরা গর্ব করে বলতে পারি ‘আমাদের টাকায় আমাদের সেতু’। রাষ্ট্রের কোষাগার থেকে উন্নয়নমূলক যে কাজগুলো করা হয়, এগুলো জনগণের ট্যাক্সের টাকায় করা হয়। সরাসরি ট্যাক্সের টাকা দিয়েই দেশের উন্নয়ন হচ্ছে। তাই আপনি ট্যাক্স দিলে দেশের উন্নয়নের একজন অংশীদার এবং মালিক।

বিজনেস আই বাংলাদেশ: ট্যাক্স ডিজিটাল নিয়ে আপনার মতামত জানতে চাই

মেজবাউদ্দীন মো. জীবন চৌধুরী: আপনি যদি উন্নত দেশগুলোর দিকে লক্ষ করেন। যেমন ইউরোপ এবং আমেরিকা। তারা কিন্তু ডিজিটালি ট্যাক্স রিটার্ন সাবমিট করেন এবং রিফান্ড দাবি করেন। আমাদের ২০২১ সাল থেকে মসৃণভাবে কিছুটা রান হয়েছে এই ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া। আমি আশা করছি এক সময় আমাদের দেশে ট্যাক্স ব্যবস্থা আরও সুন্দর ও সহজতর হবে। যারা শিক্ষিত ও ট্যাক্স এর আওতাভুক্ত, তারা নিঃসন্দেহে ট্যাক্স রিটার্ন অনলাইনে সাবমিট করবেন ঝামেলা মুক্তভাবে। তবে একজন দক্ষ আয়কর উপদেষ্টা বা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। আমাদের সম্মানিত করদাতাগণ এক সময় যথাযথ আয়কর পরিকল্পনার মাধ্যমে ডিজিটালি আয়কর সংক্রান্ত সমস্ত কর্মকাণ্ড বা কার্যাবলী মসৃণভাবে সম্পাদিত করবেন এই প্রত্যাশা করি।

বিজনেস আই বাংলাদেশ: সম্প্রতি উত্তরায় আপনাদের উদ্যোগে একটি ‘আয়কর মেলা-২০২৩’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই মেলার কারণ জানতে চাই

মেজবাউদ্দীন মো. জীবন চৌধুরী: আপনি জানেন সম্প্রতি আমরা উত্তরায় ট্যাক্সস্যাভিওর, ডিজিটাল ইকোনমি ডেভেলপমেন্ট ফোরাম, ফাউন্ডারস কমিউনিটি ক্লাব লিমিটেড, ট্যাক্সবিডি এবং বিডিএফসি-এর উদ্যোগে বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি আয়কর মেলা ‘ফাউন্ডারস, আইটি, আইটিএস ও ফ্রিল্যান্সারস আয়কর মেলা- ২০২৩’ আয়োজন করা হয়। আসলে আমাদের এ মেলা করার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে সন্মানিত করদাতাদের ট্যাক্সভীতি দূর করা। একইসাথে তাদের (করদাতা) ট্যাক্স প্রদানে উদ্বুদ্ধ করা। এ ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে ট্যাক্সস্যাভিওর এর সদাব্রত। আমরা মূলত ট্যাক্স টেকনোলজি বা ট্যাক্সটেক নিয়ে কাজ করছি। যার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে অনলাইনের মাধ্যমে ট্যাক্স প্রদানকে গণবান্ধব করা।

নিউজটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন