মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগ প্রায় আড়াইশ বছরের পুরনো একটি মাধ্যম। সারাবিশ্বের ওপেন-এন্ডেড মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ, অত্যন্ত জনপ্রিয় হলেও বাংলাদেশে এ ধরনের বিনিয়োগ এখনো খুব বেশি সুপরিচিত নয়-বলে জানিয়েছেন, শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের সম্পদ ব্যবস্থাপনার প্রধান কাজী আরিফ মাহমুদ ইকবাল। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মিউচুয়াল ফান্ড খাতের সর্বমোট বিনিয়োগকৃত সম্পদের পরিমাণ বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে খুব কম। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশে মিউচুয়াল ফান্ড খাত দ্রুত সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে-
কাজী আরিফ মাহমুদ ইকবাল-বলেন, দক্ষ একটি টিম মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ তহবিল ব্যবস্থাপনা করছে। একক বিনিয়োগে যে দক্ষতা, চাপ নেয়া বা সময়ের প্রয়োজন এখানে তার দরকার হয় না। এখানে আমরা পেশাদার কর্মীদের মাধ্যমে বহুমুখী বিনিয়োগ করে থাকি। মিউচুয়াল ফান্ডকে জনপ্রিয় করার চেষ্টা চলছে।

সম্প্রতি মিউচুয়াল ফান্ডে নতুন গ্রাহকদের বিনিয়োগ ও বর্তমান চ্যালেঞ্জসহ নানা বিষয়ে ‘বিজনেস আই বাংলাদেশ’ এর সঙ্গে কথা বলেছেন -কাজী আরিফ মাহমুদ ইকবাল। তিনি প্রাতিষ্ঠানিক এবং একক বিনিয়োগকারীদের তহবিল সংগ্রহ, বিক্রয় এবং বিনিয়োগ সেবা প্রদান করছেন। এর আগে তিনি প্রতিষ্ঠানটির সম্পদ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা ছিলেন। সেই সঙ্গে তিনি বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যেমন- স্ট্যান্ডার্ড চ্যাটার্ড ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড এবং বিল্ডিং ফর ফিউচার লিমিটেডের বিভিন্ন দায়িত্বে কাজ করেছেন। আর্থিক বিশ্লেষণ, শিল্প ঋণ এবং বৈদেশিক বাণিজ্যে তার রয়েছে ১২ বছরের অভিজ্ঞতা।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফয়সাল আহমেদ।

বিজনেস আই বাংলাদেশ: প্রথমে আপনার প্রতিষ্ঠান নিয়ে পাঠকদের উদ্দেশ্যে বিস্তারিত কিছু বলেন?
কাজী আরিফ: শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট মূলত মিউচুয়াল ফান্ড নিয়ে কাজ করে। আমরা গ্রাহকদের তহবিল ব্যবস্থাপনা সেবা দিয়ে থাকি। বর্তমানে আমাদের তিন ধরনের ওপেন-এন্ডেড বা বে-মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড আছে। আমাদের সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ, তহবিল সংগ্রহ, বিনিয়োগ পরামর্শ এবং বিক্রয় সেবা নিয়ে কাজ করে।
বিজনেস আই বাংলাদেশ: বিনিয়োগকারী সঠিকভাবে মিউচুয়াল ফান্ড সম্পর্কে জানে না, আপনার আর্থিক খাতে অভিজ্ঞতা থেকে যদি বলেন মিউচুয়াল ফান্ড কি?
কাজী আরিফ: তাদের (বিনিয়োগকারী) খুব সহজ করে বললে মিউচুয়াল ফান্ড অনেকগুলো ফান্ডের সমষ্টি। অনেক রিটেইল বিনিয়োগকারী (খুচরা ক্রেতা) ও ইটিস্টিটিউশন (প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের তহবিল থেকে এই সমষ্টি তৈরি করা হয়। এরপর আমাদের ফান্ড ম্যানেজমেন্ট টিম দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এই ফান্ডটিকে শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার অর্থবাজারের বিভিন্ন পণ্য বা সেবা, সরকারি ও কর্পোরেট বন্ডে বিনিয়োগ করা হয়। ফান্ডটির অর্থ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করে অর্জিত মুনাফা বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের আনুপাতিক হারে পেয়ে থাকে।
বিজনেস আই বাংলাদেশ: মিউচুয়াল ফান্ডের সুবিধা কি?
কাজী আরিফ: মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগের প্রধান সুবিধাগুলো দক্ষ তহবিল ব্যবস্থাপনা , ডাইভারসিফিকেশন, তারল্য, কর রেয়াত, সাশ্রয়ী ইত্যাদি। একটি অভিজ্ঞ টিম মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগের তহবিল ব্যবস্থাপনা করছে। একক বিনিয়োগে যে চাপ নেয়া বা সময়ের প্রয়োজন এখানে তার প্রয়োজন হয় না। এখানে আমরা পেশাদার কর্মীদের মাধ্যমে বহুমুখী বিনিয়োগ করে থাকি। মিউচুয়াল ফান্ড বৈশ্বিকভাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়। আমেরিকাতে এই ইন্ড্রাস্টির আকার প্রায় ২৭ ট্রিলিয়ন ডলার, ভারতে ৩৭ ট্রিলিয়ন রূপি। সেখানে আমাদের দেশে এটা মাত্র ১৫ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। বাংলাদেশের মিউচুয়াল ফান্ডে ভালো একটা অবস্থানের জন্য বড় বড় গ্রুপ প্রতিষ্ঠান ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ খুবই জরুরি। মিউচুয়াল ফান্ডের বড় বাজার সম্ভাবনা তৈরি করতে পারি, যদি আমরা জনসাধারণের কাছে এটার সুবিধা এবং পেশাদারিত্বের সাথে ব্যবস্থাপনাকে তুলে ধরতে পারি।
বিজনেস আই বাংলাদেশ: বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে আর্থিক খাতে অনিয়মের জন্য বিনিয়োগকারীরা আর্থিক খাতে বিনিয়োগ করতে আশঙ্কা করেন। শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টে বিনিয়োগে কতটুকু নিরাপত্তা দিতে সমর্থ?
কাজী আরিফ: শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ৫ বছর যাবত কর্পোরেট গভর্নেন্স বজায় রেখেই পরিচালনা করছে। এখানে আর্থিক অনিয়মের কোনো ইতিহাস নেই। শান্তা এসেট ম্যানেজমেন্ট বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশন দ্বারা নিবন্ধিত এবং মিউচুয়াল ফান্ড অ্যাক্ট ২০০১ দ্বারা পরিচালিত। মিউচুয়াল ফান্ডের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশনের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, কাস্টডিয়ান, ট্রাস্টি, অডিটর হিসেবে ভূমিকা পালন করছে।
বিজনেস আই বাংলাদেশ: গ্রাহকদের কাছে শান্তা অ্যাসেট নিজেদের মেলে ধরতে কি করছে?
কাজী আরিফ: আমরা গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি। মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় আমরা একটা শাখা অফিস খুলেছি। বিভিন্ন জায়গায় গ্রাহক সংগ্রহ করার জন্য ক্যাম্পেইনসহ বিভিন্ন কর্পোরেট হাউস ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন জনসচেতনামূলক আয়োজন করে যাচ্ছি। শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে আমরা প্রচলিত ধারার বাহিরে বিনিয়োগ করা যায় সে বিষয়ে তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করছি। শেয়ার বাজার ভিত্তিক বিনিয়োগে আছে এ সম্পর্কে জানতে পারছে। এখানে তারা বিনিয়োগ করছেন এবং তাদের ভালো অভিজ্ঞতা হচ্ছে, তখন তারা আরও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট বিভিন্ন ধরনের ব্যান্ডিং এবং প্রমোশনাল প্রোগ্রাম আয়োজন করছে।
বিজনেস আই বাংলাদেশ: মিউচুয়াল ফান্ডের সেকেন্ডারি যে মার্কেট আছে, তার সঙ্গে আপনাদের পার্থক্য কোথায়?
কাজী আরিফ: আমরা যে মিউচুয়াল ফান্ডগুলো নিয়ে কাজ করছি এগুলো ওপেন-এন্ডেড (বে মেয়াদি ) মিউচুয়াল ফান্ড। শেয়ার বাজারে যে মিউচুয়াল ফান্ডগুলো ট্রেড (লেনদেন) হয়, সেইগুলো ক্লোজ-এন্ডেড বা মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড। বিনিয়োগকারীরা আমাদের কাছ থেকে মিউচুয়াল ফান্ডগুলো ক্রয় করে এবং আমাদের কাছে তা বিক্রি করতে পারে। তাই এখানে গ্রাহকের জন্য রেডি বায়ার থাকে। আমাদের এখানে বিনিয়োগের মাধ্যমে আমাদের সাথে লেনদেন করে থাকে। আমরা যেসব জায়গায় বিনিয়োগ করা প্রয়োজন মনে করি আমরা সেখানে বিনিয়োগ করি।
বিজনেস আই বাংলাদেশ: শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের বিভিন্ন ফান্ডগুলো সম্পর্কে কিছু বলেন?
কাজী আরিফ: শান্তা অ্যাসেট মানেজমেন্টের তিনটি ওপেন এন্ডেড মিউচুয়াল ফান্ড আছে। এগুলো হচ্ছে, শান্তা ফাস্ট ইনকাম ফান্ড, শান্তা আমানাহ শরিয়াহ ফান্ড এবং শান্তা ফিক্সড ইনকাম ফান্ড। মিউচুয়াল ফান্ড যেহেতু পুঁজি বাজার ভিত্তিক বিনিয়োগ ব্যবস্থা সেজন্য এখানে ঝুঁকি আছে। যেহেতু পেশাদারদের সাথে সবকিছু ব্যবস্থাপনা করা হয়ে থাকে ও বহুমাত্রিক ভাবে তা বিনিয়োগ করা হয় এজন্য ঝুঁকি তুলনামূলক ভাবে কম।আমাদের ফান্ডগুলোতে দুই ভাবে বিনিয়োগ করা যায়। এককালীন এবং কিস্তি আকারে।
এককালীন বিনিয়োগ সর্বনিম্ন ৫০০ ইউনিট এবং কিস্তি ভিত্তিক বা এসআইপিতে বিনিয়োগের সর্বনিম্ন পরিমাণ ১০০০ টাকা। আমাদের ফান্ডগুলো এমন ভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যেন প্রান্তিক বিনিয়োগকারীরা ও মিউচুয়াল ফান্ডে সুবিধা নিতে সক্ষম হয়।
বিজনেস আই বাংলাদেশ: বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টকে প্রথম স্থান অর্জন হিসেবে একটি পুরস্কার প্রদান করেছে। পুরস্কারের অর্জন সম্পর্কে যদি কিছু বলেন।
কাজী আরিফ: এটা আমাদের জন্য খুবই বড় একটা প্রাপ্তি। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য অ্যাওয়ার্ডের আয়োজন করেছিল। অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ক্যাটাগরিতে শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট প্রথম স্থান অর্জন করেছে। এটা সম্ভব হয়েছে আমাদের বিনিয়োগকারীদের আস্থার কারণে। এছাড়া আমাদের বোর্ড, বিশেষ করে সম্মানিত ভাইস চেয়ারম্যান জনাব আরিফ খান এবং চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার জনাব ইমরান হাসান-এর দূরদর্শী নেতৃত্ব আমাদের প্রয়াসকে আরও গতিশীল করেছে।