ঢাকা, সোমবার, ৪ অগাস্ট ২০২৫, ৫:০৬ পূর্বাহ্ন

মুনাফায় এক দশকের সর্বোচ্চ পতন বৃহৎ ব্যাংকগুলোর

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে চলা বন্যায় চীনের কারখানা কার্যক্রমে শ্লথগতি দেখা দিলেও সেবা খাত চাঙা ছিল। এদিকে গত এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে মুনাফা সর্বোচ্চ হ্রাস পেয়েছে চীনের সর্ববৃহৎ ব্যাংকগুলোর। চীনজুড়ে এসব ব্যাংকের দেওয়া ঋণ অনাদায়ী থেকে যাওয়ায় এমন পতন দেখা গেছে মুনাফায়। রোববার ব্যাংকগুলোর প্রথমার্ধের আয়-ব্যয়ের বিবরণী প্রকাশ পেলে এ চিত্র সামনে এসেছে। খবর : রয়টার্স, বস্নুমবার্গ

স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ানো শুরু করলেও কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা বন্যায় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিটির কারখানা কার্যক্রমে শ্লথগতি দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে হংকং ইসু্যতে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের উত্তেজনা বেড়েছে।

সোমবার চীনের ন্যাশনাল বু্যরো অব স্ট্যাটিস্টিকস প্রকাশিত উপাত্তে দেখা গেছে, আগস্টে চীনের ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের পারচেজিং ম্যানেজার্স ইনডেক্স (পিএমআই) ৫১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। জুলাইয়ে এ খাতের পিএমআই ছিল ৫১ দশমিক ১ শতাংশ। তবে ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলোর পিএমআই গত আগস্টে ৪৭ দশমিক ৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। গত জুলাইয়ে এ খাতের পিএমআই ছিল ৪৮ দশমিক ৬ পয়েন্ট।

আইএনজির চীনবিষয়ক মুখ্য অর্থনীতিবিদ আইরিস প্যাং বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, শিল্প খাতে চাঙা ভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে কোভিড-১৯ সংকট নিয়ন্ত্রণে এলে, ভ্রমণে বিধিনিষেধ শিথিল হলে বৈদেশিক চাহিদা চাঙা হবে। তবে এখন প্রবৃদ্ধির জন্য অভ্যন্তরীণ বাজারের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে চীনকে।

বিনিয়োগ ব্যাংক এইচএসবিসি আশা করছে তৃতীয় প্রান্তিকে চীনের অর্থনীতি বছরওয়ারি ৫ দশমিক ৪ শতাংশ সম্প্রসারিত হতে পারে এবং চতুর্থ প্রান্তিকে সম্প্রসারিত হতে পারে ৬ দশমিক ২ শতাংশ।

দ্বিতীয় প্রান্তিকে দেশটির অর্থনীতি বছরওয়ারি ৩ দশমিক ২ শতাংশ সম্প্রসারিত হয়েছে। চলতি বছরে ২ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে চীন, যা দেশটির তিন দশকের ইতিহাসে সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি হতে পারে।

এদিকে, ব্যবসায় কার্যক্রমে শ্লথগতি ও ঋণ চাহিদা কমাতে চীনের বৃহৎ ব্যাংকগুলোর মুনাফা গত এক দশকের সর্বনিম্নে দাঁড়িয়েছে। রোববার চলতি বছরের প্রথমার্ধের আয়-ব্যয়ের উপাত্ত প্রকাশ করেছে চীনের শীর্ষ ব্যাংকগুলো। বিশ্বের সর্ববৃহৎ ঋণদাতা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংক অব চায়না, চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাংক চায়না কনস্ট্রাকশন ব্যাংক করপোরেশন, এগ্রিকালচারাল ব্যাংক অব চায়না এবং ব্যাংক অব চায়না; এ বছরের প্রথমার্ধে প্রতিটি ব্যাংকেরই মুনাফা অন্তত ১০ শতাংশ কমেছে। এ চার ব্যাংকে অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ ২৭ থেকে ৯৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে কয়েক মাস দেশজুড়ে লকডাউন আরোপ এবং কারখানা কার্যক্রম আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকায় ৪০ বছরের মধ্যে প্রথম কোনো প্রান্তিকে মন্দায় পড়েছিল দেশটির অর্থনীতি। এর ধাক্কা লেগেছে ৪৫ ট্রিলিয়ন ডলারের চীনা ব্যাংকিং খাতে।

চলতি বছরের প্রথমার্ধে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংক অব চায়নার (আইসিবিসি) নিট মুনাফা হয়েছে ১৪ হাজার ৮৮০ কোটি ইউয়ান; গত বছর যা ছিল ১৬ হাজার ৭৯০ কোটি ডলার। গত বছরের ১৫ হাজার ৪২০ কোটি ইউয়ানের তুলনায় চায়না কনস্ট্রাকশন ব্যাংক করপোরেশন (সিসিবি) এ বছরের প্রথমার্ধে মুনাফা করেছে ১৩ হাজার ৭৬০ কোটি ইউয়ান।

অনাদায়ী ঋণ রেকর্ড ২ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ইউয়ান ছাড়ানোয় এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে চীনের ১ হাজারেরও বেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মুনাফা গড়ে ২৪ শতাংশ কমেছে। গত মাসে সিটি ব্যাংক গ্রম্নপ এক পূর্বাভাসে জানায়, ২০২০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে চীনের প্রথম সারির ব্যাংকগুলোর আয় ১০ শতাংশীয় পয়েন্ট এবং চলতি বছরে ১৩ শতাংশ কমতে পারে।

নিউজটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন