ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রথম ধাপে ১২৫টি আসনে দলের প্রার্থীদের নাম এরই মধ্যে ঘোষণা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দল মনোনীত এসব প্রার্থী ভোটের মাঠে লড়তে প্রয়োজনীয় সব ধরনের প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছেন। ঘোষিত এই প্রার্থী তালিকায় খুব বেশি পরিবর্তনও আসবে না বলে কালবেলাকে জানিয়েছেন এনসিপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা। তারা আরও জানান, আগামী দু-এক দিনের মধ্যেই দ্বিতীয় ধাপে তাদের দলীয় প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে।
এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, দ্বিতীয় ধাপে ৫০টির মতো আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা হতে পারে। আর এসব আসনে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী থেকে দলের মনোনয়ন চেয়েও না পাওয়া ব্যক্তিদেরই বেশি দেখা যেতে পারে বলে জানান তারা। একই সঙ্গে জোট সঙ্গীদের সঙ্গে আলোচনা করে ২৯ ডিসেম্বরের পর ৩০০ আসনে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে জানা গেছে।
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা দ্বিতীয় ধাপের প্রার্থী তালিকা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে চূড়ান্ত করছি। দ্বিতীয় ধাপে আরও ২৫-৩০টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা হতে পারে। প্রথম ধাপের ঘোষিত তালিকায় খুব বেশি পরিবর্তন আসবে না। কয়েক জায়গায় রিভিউ আবেদন আসছে, সেটি আমরা অধিকতর আলোচনার মাধ্যমে সুরাহা করব।’
প্রথম ধাপে প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন জানিয়েছিলেন, যাদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে তাদের কারও বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ ওঠে, তাহলে তা তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির প্রার্থিতা বাতিল করা হবে।
এদিকে গত ৭ ডিসেম্বর এনসিপি, এবি পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ে ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’ নামে একটি নির্বাচনী মোর্চার আত্মপ্রকাশ হয়। এই জোট সঙ্গীদের সঙ্গে কীভাবে আসন সমঝোতা হবে, তা নিয়েও কাজ চলছে। তিন দলের সমন্বয়ে করা হয়েছে একটি নির্বাচনী টিম। এরই মধ্যে একাধিক বৈঠকেও বসেছেন দল তিনটির প্রতিনিধিরা। সূত্র বলছে, শাপলা কলি প্রতীকে নির্বাচনে লড়ার জোর প্রচেষ্টা চলছে। তিন দলের প্রার্থীরাই শাপলা প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এখনো নিবন্ধন পায়নি, তাই তাদের শাপলা প্রতীক নিতে আপত্তি নেই। তবে এবি পার্টির নিবন্ধন রয়েছে, তাদের প্রতীক ঈগল। তবে এই দলটির প্রার্থীরাও শাপলা কলি প্রতীকে নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা চলছে।
এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা কালবেলাকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত শাপলা কলি প্রতীকে নির্বাচন করার আলোচনা বেশি। এনসিপির আহ্বায়ক ও জোটের মুখপাত্র নাহিদ ইসলাম আত্মপ্রকাশের দিনও সেই ঘোষণা দিয়েছিলেন। এবি পার্টি বিলুপ্ত করে এনসিপির সঙ্গে একীভূত হবে কি না, সে আলোচনাও আছে। তবে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার কালবেলাকে বলেন, ‘দু-এক দিনের মধ্যেই দ্বিতীয় ধাপের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। জোট সঙ্গীদের সঙ্গে প্রয়োজনে সমন্বয় করা হবে। তা নিয়ে একটি টিম কাজ করছে। আগামী ২৯ ডিসেম্বরের পর সমন্বয় করে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।’
তিন দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা আলোচনা করে দ্রুতই জোটের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করবেন বলে জানিয়েছেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। তিনি বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে ১০৯টি আসনে এবি পার্টি প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছি। আগামীতে তিন দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বসে সমন্বয় করে জোটগত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবেন।’
দ্বিতীয় ধাপে প্রার্থীদের নাম ঘোষণার ক্ষেত্রে বিএনপি ও জামায়াতের ‘মনোনয়নবঞ্চিতদের’ প্রাধান্য দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘দ্বিতীয় ধাপে বিএনপির যারা বিদ্রোহী, কিন্তু সংস্কারের পক্ষে তাদের মনোনয়ন দেব। জামায়াতের যারা বিদ্রোহী তাদের মনোনয়ন দেব। তা ছাড়া যারা টাকার কাছে হেরে গেছে, কিন্তু জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ, কানেকশন আছে, সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে চান তাদের জন্য এনসিপির দরজা খোলা আছে।’
এ ছাড়া যারা প্রাথমিক তালিকায় আসতে পারেননি, তাদের নাম বিবেচনায় রাখার আশ্বাস দিয়েছেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। দলের বাইরে থেকেও এনসিপি মনোনয়ন দিতে চায়—এমনটি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, প্রবাসী বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন পেশার মানুষকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। পুরো তালিকাটি হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক। সেখানে নারী, পুরুষ, সংখ্যালঘু সংখ্যাগুরু, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সমন্বয় করা হবে।’
আগামী নির্বাচনের তাৎপর্য তুলে ধরে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এবারের নির্বাচনটা গণভোট, এটা যাতে আমরা কেউ ভুলে না যাই। বলা হচ্ছে, প্রার্থী দেখে ভোট দেবেন, নাকি মার্কা দেখে ভোট দেবেন। কিন্তু ভোটটা যে গণভোট, ভোটের অন্যতম প্রধান প্রশ্ন হচ্ছে হ্যাঁ অথবা না—এ কথাটাই বলার জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি। আপনারা অনেকে জিজ্ঞেস করেন যে আমরা কয়টা সিট পাব বা আমরা কয়টা সিট প্রত্যাশা করি। আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি না, এটা খুবই পরিষ্কার। সিট কয়টা পাব কি পাব না, সেটা বিবেচনায় রেখেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি না। সিট নিশ্চিত করতে হলে আমরা কোনো না কোনো জোটের সঙ্গে চলে যেতাম।’