ঢাকা, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫, ৫:৩১ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশকে করাচি বন্দর ব্যবহারে সম্মত পাকিস্তান

পাকিস্তানি বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার চেয়েছে ঢাকা। অন্যদিকে, বাংলাদেশ করাচি বন্দর ব্যবহার করতে পারবে বলে সম্মতি দিয়েছে পাকিস্তান। এছাড়া বাংলাদেশের পরিবার পরিকল্পনা মডেলে আগ্রহ দেখিয়েছে পাকিস্তান। তারা এটি গ্রহণ করতে এবং তাদের দেশে প্রয়োগ করতে চায় বলে জানিয়েছে দেশটি।

বাংলাদেশ থেকে পাট ও কৃষিপণ্য আমদানি বাড়াতে চায় পাকিস্তান। এ লক্ষ্যে বাণিজ্য ও পারস্পরিক যোগাযোগ এবং সহযোগিতা বৃদ্ধির বিভিন্ন বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। সোমবার বাংলাদেশ-পাকিস্তান যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) সভায় এ সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়।

দীর্ঘ ২০ বছর পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে নবম যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) বৈঠক হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যেই এ আলোচনা হয় বলে জানা গেছে। সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ নেতৃত্ব দেন। পাকিস্তান প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন ওই দেশের পেট্রোলিয়ামমন্ত্রী আলী পারভেজ মালিক।
বৈঠকে কৃষি গবেষণা, হালাল ফুড, তথ্যপ্রযুক্তি ও নৌপরিবহনসহ কয়েকটি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। প্রায় তিন ঘণ্টার বৈঠক শেষে গণমাধ্যমের সামনে কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং পাকিস্তানের জ্বালানিমন্ত্রী আলী পারভেজ মালিক।

অর্থ উপদেষ্টা জানান, নৌচলাচল, আকাশপথের যোগাযোগ বাড়ানোসহ বেশ কিছু বিষয়ে নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সার্ককে পুনর্জীবিত করার চেষ্টা চলছে।
পাকিস্তানের জ্বালানি মন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে এ আলোচনার কারণে দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক বাড়বে, এ কারণে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও মজবুত হবে। বাংলাদেশ থেকে পাট, ওষুধ নেওয়ার বিষয়ও আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।

পাকিস্তানের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী আলী পারভেজ মালিক সাংবাদিকদের বলেন, দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ এক বিলিয়ন ডলারও নয়। এটি বাড়ানো উচিত। আমরা বাংলাদেশ থেকে পাটসহ কৃষিপণ্য আমদানি বাড়াতে চাই। দীর্ঘ ২০ বছর পর এই জেইসি বৈঠক হলো মন্তব্য করে তিনি বলেন, একটি ইতিবাচক আলোচনার ধারা তৈরি হয়েছে। দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগ সম্প্রসারণে কোথায় সম্ভাবনা আছে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও আলোচনা হবে।

সভায় আকাশ ও নৌপথে যোগাযোগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এই আলোচনা এগিয়ে নিতে ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে নৌ মন্ত্রণালয় ও বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয় কাজ করবে। এ ছাড়া খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়। সভাকে ‘অত্যন্ত সফল’ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) জানায়, পাকিস্তান বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ৫০০ নতুন বৃত্তি প্রদানের প্রস্তাব করেছে। দেশটি বাংলাদেশে তাদের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস স্থাপনে আগ্রহী। তাছাড়া সিকিউরিটি প্রিন্টিং ও ব্যাংকিং খাতে সব মূল্যমানের ব্যাংক নোট, প্রাইজবন্ড ও অন্য নিরাপত্তা সামগ্রী মুদ্রণে ব্যবহৃত নিরাপত্তা কালির শতভাগ আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রে অংশ নিতে চায় দেশটি। ব্যাংক খাতে কারিগরি প্রশিক্ষণও দিতে চায় পাকিস্তান।

সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ আমদানি করেছিল ৭৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পণ্য। একই সময় পাকিস্তানে রপ্তানি করেছিল ৮ কোটি ডলারের পণ্য। বাংলাদেশ-পাকিস্তান বাণিজ্যের পরিমাণ তুলনামূলক কম হলেও তা পাকিস্তানের দিকেই ঝুঁকে আছে। এমতাবস্থায় মোট বাণিজ্য বাড়ানোর পাশাপাশি বাংলাদেশে প্রতিকূলে থাকা এ দূরত্ব দূর করার ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয় বৈঠকে।

প্রায় দুই দশক পর অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ-পাকিস্তান যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের এ বৈঠক। সবশেষ বৈঠকটি ২০০৫ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় হয়েছিল। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা যাওয়ার পর দুই দেশের সম্পর্কে বরফ জমে। গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বরফ গলতে শুরু হয়।

নিউজটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

ট্যাগঃ