র্যাব পরিচয়ে দুই স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে অপহরণ ও লুট করে দ্রুতগতিতে ছুটছিল একটি মাইক্রোবাস। তার পেছনে ছুটছিল আরেকটি মাইক্রোবাস। বিষয়টিকে অস্বাভাবিক মনে হওয়ায় মহাসড়কে গাছ ফেলে প্রথম মাইক্রোবাসটিকে থামান স্থানীয় লোকজন। গাড়িতে থাকা ব্যক্তিরা নিজেদের র্যাব বলে পরিচয় দেন। তবে কারও গায়ে পোশাক না দেখে সন্দেহ হয় স্থানীয়দের। র্যাব পরিচয়ধারীরা পালাতে চাইলে তাদের আটকে মারধর শুরু করেন স্থানীয় লোকজন।
তখনি সেখানে পৌঁছে দ্বিতীয় মাইক্রোবাসটি। এতে ছিলেন র্যাবের প্রকৃত সদস্যরাই। তবে কয়েকজনের গায়ে ইউনিফর্ম ছিল না। তারা নিজেদের পরিচয় দিয়ে স্থানীয় লোকজনের হাতে আটক ব্যক্তিদের উদ্ধারের চেষ্টা করেন। তবে স্থানীয় লোকজনের রোষে পড়ে তারাও পিটুনির শিকার হন। একপর্যায়ে স্থানীয় থানা থেকে পুলিশ ও র্যাবের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে লোকজনকে শান্ত করে এই দুই পক্ষকেই উদ্ধার করেন।

সোমবার (২৮ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টার দিকে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার চর যশোরদী ইউনিয়নের জয় বাংলার মোড় এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিদর্শক (এসআই) আমীরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, জনতার হাত থেকে র্যাব ও ভুয়া র্যাব সদস্যদের উদ্ধার করে নগরকান্দা থানায় নিয়ে আসা হয়। রাত সাড়ে আটটার দিকে তাদের নিয়ে ফরিদপুর র্যাব ক্যাম্পের সদস্যরা মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর থানার উদ্দেশে যান।

আটকরা হলেন, ফরিদপুরের দিদার (২৯), গাইবান্ধার মো. সাইফুল ইসলাম (৩০), চাঁদপুরের মিন্টু গাজী (৪৫), মাদারীপুরের মো. জামিল (৩২) এবং শরীয়তপুরের স্বপন খান (৪৫)।
র্যাব সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানার খালিশখালি এলাকার বাসিন্দা স্বর্ণ ব্যবসায়ী জয়দেব আধ্য (৫৩) ও তার ভাই বিশ্বনাথ আধ্য (৫৭) গতকাল রাজধানীর তাঁতিবাজার এলাকা থেকে জুয়েলারি তৈরির যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করে ‘টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস’ বাসে সাতক্ষীরার উদ্দেশে রওনা হন। বিকাল ৪টা ১০ মিনিটে বাসটি ফুলবাড়িয়া-গুলিস্তান থেকে ছাড়ে।
সন্ধ্যা ৬টার দিকে ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলার জয়বাংলা মোড় এলাকায় পৌঁছালে একটি মাইক্রোবাস এসে বাসটির পথরোধ করে। র্যাব লেখা কালো জ্যাকেট ও ক্যাপ পরিহিত ৩–৪ জন ব্যক্তি বাসে উঠে নিজেদের র্যাব সদস্য পরিচয় দিয়ে জয়দেব ও বিশ্বনাথকে জোরপূর্বক বাস থেকে নামিয়ে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। তাদের চোখ গামছা দিয়ে বেঁধে ফেলে এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে মারধর করে। একপর্যায়ে তাদের কাছ থেকে নগদ ২,৭০০ টাকা ও যন্ত্রাংশ ছিনিয়ে নেয়।
অভিযানের সময় স্থানীয় জনতা মাইক্রোবাসটি ঘেরাও করে ভাঙচুর করে। এ সময় মো. সাইফুল ইসলাম ও স্বপন খান পালানোর চেষ্টা করলে জনতা তাদের ধরে ফেলে মারধর করে। পরে র্যাব সদস্যরা তাদের উদ্ধার করে হেফাজতে নেয়।
র্যাব-১০ ফরিদপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার তারিকুল ইসলাম বলেন, র্যাব-১০–এর হেডকোয়ার্টার থেকে একটি টিম ডাকাত দলকে ধাওয়া করে আসছিল। স্থানীয় লোকজন ভুল বুঝে উভয় পক্ষের ওপর চড়াও হন। কিছু র্যাবের সদস্যরা সাদাপোশাকে থাকায় উত্তেজিত লোকজন তাদের তাৎক্ষণিকভাবে প্রকৃত র্যাব বলে চিনতে ভুল করেন।
র্যাব-১০ মুন্সিগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা ভুয়া র্যাবের দলকে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর থেকে ধাওয়া করে নিয়ে যাচ্ছিলাম। তারা পদ্মা সেতু ও এক্সপ্রেসওয়ের টোল দিয়ে বের হয়ে যেতে পারলেও শেষ পর্যন্ত তাদের ধরা গেছে।
নিজেরাও মারধরের শিকার হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জনগণ যখন ভুয়া র্যাব পরিচয়কারীদের মারপিট করছিলেন, তখন তাদের যাতে মেরে না ফেলেন, এই আশঙ্কায় আমরা জনগণের পিটুনি থেকে তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করি। তবে প্রথম পর্যায়ে জনগণ আমাদেরও ভুয়া র্যাব মনে করেছিলেন। এ কারণে আমাদের সঙ্গে কিছু ঘটনা ঘটেছিল, তবে তা আমলযোগ্য নয়।