ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় মানবিক ত্রাণ সরবরাহের জন্য ঘোষিত বিশেষ যুদ্ধবিরতির মধ্যেই আবারও প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরায়েল। এতে হতাহত হয়েছেন অসংখ্য সাধারণ মানুষ, যাদের বড় অংশই ছিলেন ক্ষুধার্ত ত্রাণপ্রার্থী। এই ঘটনার পর আন্তর্জাতিক মহলে ক্ষোভ ও উদ্বেগ বাড়ছে।
রোববার (২৭ জুলাই) গাজা ভূখণ্ডে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঘোষিত যুদ্ধবিরতি চলাকালেই ফিলিস্তিনিদের ওপর একাধিক হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এসব হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, যাদের মধ্যে ৩৪ জন ছিলেন সরাসরি ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা সাধারণ মানুষ। ইসরায়েল আগেই ঘোষণা করেছিল, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত তিনটি এলাকায় সামরিক অভিযান বন্ধ থাকবে—কিন্তু বাস্তবে তা মানা হয়নি বলেই অভিযোগ উঠেছে।

আল জাজিরা এবং রয়টার্সসহ একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, গাজার আল-মাওয়াসি, দেইর আল-বালাহ এবং গাজা সিটি এলাকায় প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সামরিক অভিযান স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করেছিল ইসরায়েল। উদ্দেশ্য ছিল ত্রাণ পরিবহন ও মানবিক সহায়তার পথ সুগম করা। কিন্তু যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকার সময়েই হামলা চালানো হয়, যাতে সাধারণ মানুষের মৃত্যু ঘটে।
রয়টার্সের বরাতে জানা যায়, আন্তর্জাতিক চাপ ও মানবিক বিপর্যয়ের কারণে ইসরায়েল সাময়িক এই যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত নেয়। তারা জানায়, প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খাদ্য ও ওষুধবাহী গাড়িবহরের জন্য নিরাপদ করিডোরও চালু থাকবে।
এছাড়া, মিসরের রাষ্ট্রায়ত্ত ‘আল-কাহেরা নিউজ’ জানায়, রোববার থেকে মিসরের সীমান্ত দিয়ে গাজার দিকে ত্রাণবাহী ট্রাক চলাচল শুরু হয়েছে। যদিও এর আগে ইসরায়েল বিমান থেকে ত্রাণ ফেলেছিল, যা তারা নিজেদের মানবিক উদ্যোগ হিসেবে উল্লেখ করে।

জাতিসংঘ বলছে, এই বিরতি ত্রাণ সরবরাহে সামান্য সহায়ক হলেও, ইসরায়েল পর্যাপ্ত বিকল্প রুট দিচ্ছে না। ফলে প্রয়োজনীয় সহায়তা পুরোপুরি গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না। একইসঙ্গে, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র জানায়, তারা হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির আলোচনা থেকে সরে এসেছে, কারণ তাদের মতে হামাস সমঝোতায় আগ্রহী নয়। তবে আন্তর্জাতিক মহল বলছে, গাজায় মানবিক বিপর্যয় এতটাই ভয়াবহ রূপ নিয়েছে যে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া জরুরি ছিল।
উল্লেখ্য, গত মার্চে ইসরায়েল গাজায় সব রকমের ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে দিলে ২২ লাখ মানুষের এই অঞ্চলে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দেয়। মে মাসে সীমিতভাবে ত্রাণ ঢুকতে দেওয়া হলেও সেসবেও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলমান সংঘর্ষে অপুষ্টিজনিত কারণে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এখন পর্যন্ত শুধু অপুষ্টিতে মারা গেছেন ১২৭ জন, যাদের মধ্যে ৮৫ জনই শিশু।
তবে ইসরায়েল এই সংকটকে ‘দুর্ভিক্ষ’ বলতে নারাজ। তারা দাবি করে, গাজায় পর্যাপ্ত খাদ্য রয়েছে, বরং জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থা তা ঠিকমতো বিতরণে ব্যর্থ হচ্ছে। কিন্তু জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইসরায়েলের কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও বিধিনিষেধের মধ্যেই তারা যতটা সম্ভব কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যামূলক আগ্রাসনে প্রায় ৬০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। বিস্ময়করভাবে, পুরো গাজা ভূখণ্ড এখন কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত, এবং বাসিন্দাদের প্রায় সবাই বাস্তুচ্যুত। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, রয়টার্সষ