ঢাকা, শনিবার, ২ অগাস্ট ২০২৫, ৭:৩০ অপরাহ্ন

ব্যাংকে বিপুল অর্থ, আস্থা সংকটে বিনিয়োগ নেই

দেশের ব্যাংক খাতে এখন নগদ টাকার ঘাটতি নেই, ঘাটতি শুধু আস্থার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে ২০২৫ সালের জুন শেষে নিট উদ্বৃত্ত তারল্য ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা, যা চাহিদার প্রায় দ্বিগুণ। অথচ এই বিপুল অর্থ বাজারে প্রবাহিত হচ্ছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

মূল কারণ হলো, বিনিয়োগ পরিবেশে অনিশ্চয়তা, ঋণের চাহিদার স্থবিরতা এবং ব্যাংক ব্যবস্থার প্রতি গভীর অবিশ্বাস। বিশেষত শরিয়াহভিত্তিক কয়েকটি ব্যাংক, যেগুলোর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এস আলম গ্রুপ, সেগুলোর নগদ সংকট ও স্বচ্ছতার ঘাটতি গোটা ব্যবস্থার ওপর ছায়া ফেলেছে। এর ফলে তৈরি হয়েছে একধরনের ‘পদ্ধতিগত অনাস্থা’, যা বিনিয়োগকারীদের আরও দ্বিধায় ফেলছে।

এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উচ্চ সুদের চাপ, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বাজারের অস্থিরতা। ফলে ব্যবসায়ীরা এখন ঝুঁকি নিতে চাইছেন না, টাকা থাকলেও তা মাঠে নামছে না, আটকে রয়েছে হিসাবপত্রে।

ব্যাংকে টাকা থাকলেই অর্থনীতি সচল হয় না

অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, শুধু উদ্বৃত্ত অর্থ বা বেশি তারল্য দিয়ে অর্থনীতির চাকা সচল হয় না। এই টাকা যদি উৎপাদনশীল খাতে না যায়, যদি মানুষের মনে আস্থা না থাকে, তাহলে সেই টাকা শুধু পরিসংখ্যানে থেকে যাবে। তাঁদের মতে, ব্যাংকের কাগজে ভারী তারল্য হলেও বাস্তবে সেটা অর্থনীতির গতি ফেরাতে পারছে না। কারণ, ব্যবসা-বাণিজ্যের মাঠে এখনো আস্থাহীনতার ঘন কুয়াশা।

রেমিট্যান্স রিজার্ভে ইতিবাচক বার্তা

রেমিট্যান্স ও রিজার্ভে কিছু স্বস্তির খবর রয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শুরুতে প্রবাসী আয় বেড়ে হয়েছে ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ২৭ শতাংশ বেশি। একই সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, গত এক বছরে রেমিট্যান্সের প্রবাহ রেকর্ড মাত্রায় বেড়েছে। একই সঙ্গে বৈদেশিক উৎস থেকে অর্থায়ন বাড়ায় রিজার্ভও বৃদ্ধি পেয়েছে। হুন্ডি কমায় ডলার ব্যাংকিং মাধ্যমে বেশি আসছে। এতে ডলারের ওপর চাপ কমেছে এবং বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরেছে, এটি অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক সংকেত।

ব্যাংকভিত্তিক তারল্যে বৈপরীত্য

তথ্য বিশ্লেষণ বলছে, ব্যাংকভিত্তিক তারল্যের চিত্রেও রয়েছে ভিন্নতা। সরকারি ব্যাংকগুলোর হাতে উদ্বৃত্ত রয়েছে ৮৮ হাজার কোটি টাকা, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর হাতে ১ লাখ ৪৪ হাজার কোটি। অন্যদিকে শরিয়াহভিত্তিক কিছু ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের মধ্যে এখনো ঘাটতির চিত্র রয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো প্রয়োজনীয় তারল্য ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে।

অভ্যন্তরীণ ঋণ সঞ্চয়পত্রে সরকারের নির্ভরতা বাড়ছে

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, সরকার এখন অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে বেশি ঋণ নিচ্ছে। জুন পর্যন্ত সরকারের নিট অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। একই সময়ে সঞ্চয়পত্রের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকায়।

নিউজটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

ট্যাগঃ