ঢাকা, রবিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৫, ৮:২৩ অপরাহ্ন

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ত্রাণপ্রার্থীসহ নিহত আরও ৬১ ফিলিস্তিনি

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর লাগাতার হামলায় আবারও বেড়েছে প্রাণহানির সংখ্যা। মঙ্গলবার নতুন করে কমপক্ষে ৬১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অন্তত দুইজন ছিলেন ত্রাণপ্রার্থী। একইসঙ্গে, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ সতর্ক করেছে যে, গাজার শিশুদের মধ্যে অপুষ্টি ভয়াবহ হারে বেড়ে চলেছে। বুধবার (১৬ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

এই হতাহতের ঘটনা ঘটে মঙ্গলবার গাজার উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায়। উত্তরাঞ্চলের শাতি শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ২৩ জন প্রাণ হারান। এদিকে দক্ষিণ গাজায় বিতর্কিত ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’-এর ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে হামলায় নিহত হন দুইজন নারী এবং আহত হন আরও ৩০ জন। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাস থেকে গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে মারা গেছেন অন্তত ৮৭৫ জন মানুষ।

স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার ভোরে গাজার বিভিন্ন অঞ্চলে সিভিল ডিফেন্স টিমগুলো ১৮ জন শহীদের মরদেহ উদ্ধার করে, যাদের বেশিরভাগই বিমান হামলার শিকার। গাজা শহরের বাস্তুচ্যুতদের তাঁবু লক্ষ্য করেও চালানো হয় হামলা, এতে আরও ছয়জন প্রাণ হারান। অন্যদিকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজার উত্তরের ১৬টি এলাকা খালি করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে জাবালিয়াও। এতে আতঙ্কিত মানুষজন এলাকা ছাড়তে শুরু করেছেন, যদিও জ্বালানির অভাবে গন্তব্যে পৌঁছানো কঠিন হয়ে উঠেছে।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় সাংবাদিক মোয়াত আল-কাহলুত জানিয়েছেন, “মানুষ ঘোড়া ও গাড়ি ব্যবহার করে পালাচ্ছে, কিন্তু তারা জানে না কোথায় যাবে। চারদিকে বিশৃঙ্খলা এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।”

অন্যদিকে, ইউএনআরডব্লিউএ-এর স্বাস্থ্য বিভাগ সতর্ক করেছে, চলমান অবরোধ এবং সহিংসতার কারণে শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির হার দ্রুত বাড়ছে। সংস্থার প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেন, “২০২৪ সালে পরীক্ষিত প্রতি ১০ শিশুর মধ্যে একজন অপুষ্টিতে ভুগছে।” এই অপুষ্টিকে তিনি “মানবসৃষ্ট ও পরিকল্পিত” সংকট হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

এই ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ব্রাসেলসে বৈঠকে বসেন। সেখানে ইইউ পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কাজা কাল্লাস ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য ১০টি পদক্ষেপের প্রস্তাব দেন—যার মধ্যে রয়েছে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা, ইসরায়েলি মন্ত্রীদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা, এবং ইইউ-ইসরায়েল সহযোগিতা চুক্তি স্থগিত করা। তবে বৈঠকে এসব নিয়ে চূড়ান্ত ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি।

কাল্লাস সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের লক্ষ্য ইসরায়েলকে শাস্তি দেওয়া নয়, বরং গাজার মানুষের জন্য মানবিক পরিস্থিতি উন্নত করা।” তথ্যসূত্র : আল জাজিরা

নিউজটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

ট্যাগঃ