পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি ফ্যামিলিটেক্স (বিডি) লিমিটেডের কারখানা, ভবন, যন্ত্রপাতি এবং সরঞ্জাম নিলামে বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা)।
গত ৩০ জুন প্রকাশিত নিলাম বিজ্ঞপ্তিতে, আগামী ৬ আগস্টের মধ্যে আগ্রহীপক্ষকে বিড জমা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। নিলামে অংশ নেওয়া যেসব বিডার বা দরদাতা কারখানা চালু রাখার পরিকল্পনা করবেন, তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
বেপজা সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের প্লট নম্বর ৪৭-৪৮ এ অবস্থিত এই টেক্সটাইল মিলটি ৩০ বছরের জন্য লিজ নেওয়া হয়েছিল, যার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ৮ জুলাই, ২০৩৪ সালে। তবে ভাড়া পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় আগেই চুক্তি বাতিল করেছে বেপজা।
এর আগেও গত বছরের ১২ ডিসেম্বর বেপজা নিলামের উদ্যোগ নেয়, তবে সাড়া না পাওয়ায়— এবার দ্বিতীয় দফায় নিলাম আহ্বান করা হয়েছে।
গত বছরের জুনে, ৪৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকার খেলাপি ঋণের অর্থ উদ্ধারে, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকও ফ্যামিলিটেক্সের বন্ধক রাখা সম্পত্তি বিক্রির জন্য নিলামের ঘোষণা দিয়েছিল।
ব্যাংকটির সূত্র জানায়, ফ্যামিলিটেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোরশেদ ২০১৪ সালে তিনটি জমি ও একটি ফ্ল্যাট বন্ধক রেখে ঋণ নেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এসব সম্পত্তি বিক্রি করতে পারেনি ব্যাংক। বর্তমানে এনিয়ে একটি মামলা অর্থঋণ আদালতে বিচারাধীন।
২০০৩ সালে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতে যাত্রা শুরু করে ফ্যামিলিটেক্স। ওই সময় প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রাম ইপিজেডে তাদের কারখানা স্থাপন করে।
জানা গেছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির প্রথম বছর ১০০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছিল ফ্যামিলিটেক্স। তবে এরপর থেকেই কোম্পানির আর্থিক অবস্থা ক্রমশ খারাপ হতে শুরু করে, এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে প্রতিষ্ঠানটি ধারাবাহিকভাবে লোকসান দিচ্ছে।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ফ্যামিলিটেক্স তাদের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এরপর থেকে আর কোনো আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি।
২০২১ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ফ্যামিলিটেক্সের কার্যালয় ও কারখানার অবস্থা পরিদর্শনের জন্য একটি দল গঠন করে। পরিদর্শক টিম দেখতে পায়, প্রতিষ্ঠানটির কারখানা এবং অফিস দুটোই বন্ধ।
পরবর্তীতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায়, বিএসইসি পাঁচজন স্বাধীন পরিচালক নিয়োগ দিয়ে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে। তবে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত পরিচালকরা স্পন্সর শেয়ারহোল্ডারদের অসহযোগিতার কারণে প্রতিষ্ঠানটির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হন।
বিএসইসি সূত্রে আরও জানা যায়, ফ্যামিলিটেক্স- এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোরশেদ বর্তমানে বিদেশে পলাতক রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ঋণ খেলাপি ও শেয়ার কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে।
ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, ফ্যামিলিটেক্সের পরিশোধিত মূলধন ৩৫৪ কোটি টাকা এবং মোট শেয়ারের সংখ্যা ৩৫ কোটি ৪১ লাখ। এর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ১৮.৪১ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৭৭.৫৭ শতাংশ শেয়ার।