ইন্টারনেট জগতে নিরাপদ থাকতে কয়েক মাস পরপর পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে হবে— অনেক বছর ধরেই ব্যবহারকারীদের এমন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
ইন্টারনেট জগতে নিরাপদ থাকতে কয়েক মাস পরপর পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে হবে— অনেক বছর ধরেই ব্যবহারকারীদের এমন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আইটি বিভাগ, সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ, এমনকি সরকারি দিকনির্দেশনায়ও এমন অনুরোধ করা হতো। এর পেছনে মূল ধারণা ছিল, নিয়মিত পাসওয়ার্ড বদলালে হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি কমে। কিন্তু বর্তমান নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ পদ্ধতি এখন আর তেমন কার্যকর নয়। বরং ঘন ঘন পাসওয়ার্ড বদলাতে গিয়ে অনেকেই সহজ বা পুরনো পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেন। ফলে নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। তারা বলছেন, ঘন ঘন পাসওয়ার্ড পরিবর্তনের পদ্ধতিতে বড় একটি সমস্যা আছে। মানুষকে বারবার পাসওয়ার্ড বদলাতে বললে তারা সাধারণত আগের পাসওয়ার্ডেরই কিছু পরিবর্তিত সংস্করণ তৈরি করে, যেমন শেষে একটি সংখ্যা যোগ করে দেয়। এতে পাসওয়ার্ড আলাদা দেখালেও প্রকৃতপক্ষে তা বেশি নিরাপদ হয় না।

সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞরা এখন একটি বিষয়ে একমত, তা হলো এ অভ্যাস নিরাপত্তা বাড়ানোর তুলনায় সিস্টেমকে আরো দুর্বল করে ফেলে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেকনোলজি (এনআইএসটি) আগের নির্দেশনার বদলে এখন আর নিয়মিত পাসওয়ার্ড বদলানোর পরামর্শ দিচ্ছে না। তবু এখনো অনেক প্রতিষ্ঠান পুরনো নিয়মই অনুসরণ করে যাচ্ছে।
নিরাপত্তা বাড়াতে পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের ব্যবহার
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে অনলাইনে নিরাপদ থাকার অন্যতম ভালো উপায় হলো পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করা। এ ধরনের টুল সব পাসওয়ার্ড নিরাপদে সংরক্ষণ করে রাখে, ফলে মনে রাখার ঝামেলা বা প্যাটার্ন ব্যবহার করার দরকার হয় না। এতে নিরাপত্তার পাশাপাশি সুবিধাও বাড়ে।

শক্তিশালী পাসওয়ার্ড বারবার বদলানোর প্রয়োজন নেই
পাসওয়ার্ডটি যদি দীর্ঘ, এলোমেলো ও একক (অন্য কোথাও ব্যবহৃত নয়) হয়ে থাকে, তাহলে তা ঘন ঘন বদলানো খুব একটা নিরাপত্তা বাড়ায় না। বরং এতে ভুল করার সম্ভাবনা বাড়ে। যেমন নতুন পাসওয়ার্ড মনে না রাখা বা খুব সহজ প্যাটার্ন তৈরি করা। ফলে হ্যাকাররা সহজেই ধরতে পারে। অনেক প্রতিষ্ঠানই বারবার পাসওয়ার্ড পরিবর্তনের নিয়ম চালু রাখে, ফলে কর্মীরা সহজ ও অনুমানযোগ্য পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে শুরু করেন। এতে নিরাপত্তা আরো কমে যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করাই যথেষ্ট। যেমন কোনো তথ্য ফাঁসের ঘটনা হলে বা অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়ার আশঙ্কা থাকলে সঙ্গে সঙ্গে পাসওয়ার্ড বদলানো উচিত। পাসওয়ার্ড ম্যানেজারে সাধারণত এমন সংকেত শনাক্ত করার ব্যবস্থা থাকে এবং এটি শক্তিশালী নতুন পাসওয়ার্ড তৈরি করতেও সহায়তা করে। পাসওয়ার্ড ম্যানেজার না থাকলে, নির্ভরযোগ্য অনলাইন টুল ব্যবহার করে মজবুত পাসফ্রেজ (ছোট বাক্য বা অর্থপূর্ণ শব্দগুচ্ছ) তৈরির পরামর্শ দেয়া হয়।
এছাড়া দুই স্তরের নিরাপত্তা (টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন বা টুএফএ) চালু করাও জরুরি। এতে শুধু পাসওয়ার্ড পেলেই অ্যাকাউন্টে ঢোকা সম্ভব হয় তা নয়, অতিরিক্ত একটি কোডেরও দরকার হয় যা ফোন বা নির্ধারিত অ্যাপে পাঠানো হয়। বিশেষজ্ঞরা ব্যাংক, ই-মেইল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মতো গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টে টুএফএ চালুর পরামর্শ দেন। মেকইউজঅব অবলম্বনে