ঢাকা, সোমবার, ৪ অগাস্ট ২০২৫, ৫:০৬ পূর্বাহ্ন

বিএসইসির চেয়ারম্যান-কমিশনারদের সাথে অশোভনীয় আচরণে ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি)চেয়ারম্যান-কমিশনারদের সাথে অশোভনীয় আচরণের অভিযোগে ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) রাতে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় এ মামলা দায়ের করেন বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের গানম্যান মো. আশিকুর রহমান।

শেরেবাংলা নগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম আজম গনমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ওসি জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্ত চলছে। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে ওসি জানান, এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দেখছেন।

এ মামলায় আসামি করা হয়েছে বিএসইসির সাবেক নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান (৫৮), নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম (৫৭) নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম (৫৪), পরিচালক আবু রায়হান মো. মোহতাছিন বিল্লা (৫১), অতিরিক্ত পরিচালক নজরুল ইসলাম (৫০), যুগ্ম পরিচালক রাশেদুল ইসলাম (৪৮), উপ-পরিচালক বনী ইয়ামিন (৪৫), উপ-পরিচালক আল ইসলাম (৩৮), উপ-পরিচালক শহিদুল ইসলাম (৪২), উপ-পরিচালক তৌহিদুল ইসলাম (৩২), সহকারী পরিচালক জনি হোসেন (৩১), সহকারী পরিচালক রায়হান কবীর (৩০), সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন (৩০), সহকারী পরিচালক আব্দুল বাতেন (৩২), লাইব্রেরিয়ান মো. সেলিম রেজা বাপ্পী (৩১) এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আবু ইউসুফকে (২৯)।

মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, বুধবার (৫ মার্চ) বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের অবরুদ্ধ করেছিলেন সংস্থাটির কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। তারা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী কমিশনের মূল ফটকে তালা দেন। সিসি ক্যামেরা, ওয়াই-ফাই, লিফট বন্ধ করে দেন এবং বৈদ্যুতিক সংযোগ বন্ধ করে মারাত্মক অরাজকতা ও ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে গুরুতর জখমের চেষ্টা করা হয়।

আরো অভিযোগ করা হয়েছে, বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে এবং কমিশনার মো. মহসিন চৌধুরী, মো. আলী আকবর ও ফারজানা লালারুখের উপস্থিতিতে কমিশনের নির্ধারিত সভা চলাকালে অভিযুক্তরাসহ আরো কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী কমিশনের সভাকক্ষে জোরপূর্বক ও অনধিকার প্রবেশের মাধ্যমে কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনারগণকে অবরুদ্ধ করেন।

যে অভিযোগে মামলা

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে এবং কমিশনার মো. মহসিন চৌধুরী, মো. আলী আকবর ও ফারজানা লালারুখের উপস্থিতিতে কমিশনের নির্ধারিত সভাকক্ষে সভা চলছিল। এ সময় সাবেক নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান, মাহবুবুল আলম, রেজাউল করিম, পরিচালক আবু রায়হান মো. মোহতাছিন বিল্লা, অতিরিক্ত পরিচালক নজরুল ইসলাম, যুগ্ম পরিচালক রাশেদুল ইসলাম, উপ-পরিচালক বনী ইয়ামিন, আল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, তৌহিদুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক জনি হোসেন, রায়হান কবীর, সাজ্জাদ হোসেন, আব্দুল বাতেন, লাইব্রেরিয়ান মো. সেলিম রেজা বাপ্পী এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আবু ইউসুফসহ আরো কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী কমিশনের সভাকক্ষে জোরপূর্বক প্রবেশ করে কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের অবরুদ্ধ করেন। এর মধ্যে পূর্বপরিকল্পনা মতে এবং অবৈধ বাধা সৃষ্টির জন্য আসামিরা কমিশনের মূল ফটকে তালা লাগিয়ে দেন, সিসিক্যামেরা, ওয়াই-ফাই, কমিশনের লিফট বন্ধ করে দেয়। এমনকি বৈদ্যুতিক সংযোগ বন্ধ করে মারাত্মক অরাজকতা ও ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে গুরুতর জখমের প্রচেষ্টা করে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, আসামিরা অকথ্য ভাষা ব্যবহার করে ও এসির রিমোট চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের লক্ষ্য করে ছুড়ে মারে এবং বিভিন্নভাবে পেশি শক্তির মাধ্যমে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে। একই সঙ্গে তারা কমিশনের চেয়াম্যানের একান্ত সচিব (সরকারের সিনিয়র সহকারী সচিব) মো. জাহাঙ্গীর হোসেনকে লাঞ্চিত করে। আসামিরা কমিশনের সাবেক নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানের বাধ্যতামূলক অবসরের আদেশ প্রত্যাহার, কমিশনের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কারণ দর্শানোর আদেশ প্রত্যাহার এবং গঠিত তদন্ত কমিটি রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ না করার দাবিতে সন্ত্রাসী কায়দায় সরকারি অফিস কক্ষ ভাঙচুর করে, সরকারি কাজে বাধা দেয় ও প্রজাতন্ত্রের সম্পতির ক্ষতি সাধন করে।

এজাহারে আরো বলা হয়, বিগত দিনের পুঁজিবাজারের অনিয়ম অনুসন্ধানে বিএসইসি পুঁজিবাজারে অভিজ্ঞ পাঁচ জনের সমন্বয়ে গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর একটি অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি গঠন করে। সেই অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটির অনিয়মে জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে। কমিশন সেই অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটির রিপোর্ট ও রিপোর্টের সুপারিশের সূত্রে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পদক্ষেপ নেয়। তারই অংশ হিসেবে কমিশনের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে কারণ দর্শানোর জন্য বলা হয়েছে। কমিশনের সাবেক নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত থাকায় কমিশন তাকে চাকুরি থেকে অবসর দিয়েছে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, আসামিদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে বিভিন্ন বিষয়ে অনুসন্ধান চলমান আছে। সাবেক নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম, নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম, পরিচালক শেখ মাহবুব-উর-রহমান, অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক, অতিরিক্ত পরিচালক এস কে মো. লুৎফুল কবির ও যুগ্ম পরিচালক মো. রশীদুল আলমের বিরুদ্ধে শেয়ার কেলেঙ্কারিসহ পুঁজিবাজারে লুটপাটের সহায়তা করে অবৈধ সম্পদ গড়ার অভিযোগে তাদের পাসপোর্ট বাতিল করে দেশ ত্যাগের নিষেধাজ্ঞা ও ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।

নিউজটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন