পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ও তিন কমিশনারের পদত্যাগের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার ৬ মার্চ থেকে কর্মবিরতি ঘোষণা করেছেন বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ওইদিন বিএসইসির সব বিভাগের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।এর আগে গত বুধবার দুপুরে আগারগাঁও ভবনে চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের প্রায় চার ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন তাঁরা।
সম্প্রতি বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের পদত্যাগের বিষয়ে বিজনেস আই বাংলাদেশের সাথে কথা বলেছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতামত পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল:

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, ”বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের পদত্যাগ কেন দাবি করা হচ্ছে সেটা আমার জানা নেই।তাদের পদত্যাগের দাবিতে কিছু কর্মকর্তা মূল ফটকে তালা লাগিয়ে, সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ করে ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে অরাজক পরিস্থিতি তৈরী করে। দীর্ঘ সময় তাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। এধরনের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই আমি।”
ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের (সিএমজেএফ) প্রেসিডেন্ট ও সারাবাংলা নেটের হেড অব নিউজ গোলাম সামদানি ভুঁইয়া বলেন, বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যে দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচী, কর্মবিরতি পালন করছেন তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। এখন অবসরের আদেশ প্রত্যাহারের জন্যই চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের পদত্যাগ দাবি করছে বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
তিনি বলেন, ২৫ বছর চাকরি পূর্ণ করায় সরকারি বিধি মোতাবেক কমিশনের নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানকে ৪ মার্চ ২০২৫ তারিখে অবসর দেওয়া হয়।এখানে আইন লংঘন করে তাকে পদে রাখার কোন সুযোগ নেই।

এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিএসইসির কিছু কর্মকর্তা কমিশনের বোর্ডরুমে চলমান সভায় জোরপূর্বক প্রবেশ করেন এবং কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের অবরুদ্ধ করেন। তারা মূল ফটকে তালা লাগিয়ে, সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ করে ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান তিনি।
এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক দাবি উল্লেখ করে সিএমজেএফ প্রেসিডেন্ট বলেন, বিএসইসিতে যারা এধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা সৃষ্টি করছে তাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, এর আগে মাশরুর রিয়াজকে বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সাইফুর রহমান গংদের কারনে তিনি বিএসইসিতে যোগদান করতে পারেননি।এখন যদি বিএসইসির চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদ ও কমিশনাররা পদত্যাগ করেন, তাহলে অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীরা প্রশ্রয় পাবে।ভবিষ্যতে আর কোন ভদ্রলোক বিএসইসির দায়িত্ব নিতে আসবে না।
ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশনের (ডিবিএ)প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম বলেন, যেখানে দীর্ঘ বছর ধরে দেশ বিদেশের নানান নেতিবাচক ঘটনা ও সিদ্ধান্তের ফলে দেশের পুঁজিবাজার ক্রান্তিকাল পার করছে, লাখ লাখ বিনিয়োগকারী পুঁজি হারিয়ে নি:স্ব হয়ে গেছে, বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে, সেখানে নিয়ন্ত্রক সংস্থার ন্যায় অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে কর্মকর্তাদের মাঝে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলার ঘটনা বাজারের জন্য মোটেও সুখকর নয়।
এই বিষয়ে সাইফুল আশংকা করে বলেন, কমিশনের অভ্যন্তরে সৃষ্ট এই ঘটনা বাজারে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বাজারে বিনিয়োগের পরিবেশ নষ্ট করবে এবং সামগ্রীকভাবে বাজারকে অস্থিতিশীল করে দিবে। বাজারের বৃহত্তর স্বার্থে কমিশনে সৃষ্ট পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে আমরা এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কমিশনের প্রতি আহবান জানাচ্ছি এবং এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ দাবি করছি।