নিজস্ব প্রতিবেদক
গ্রাহকদের অনুমতি ছাড়াই মার্জিন ঋণ দিয়ে নিম্নমানের শেয়ার কেনাবেচা করছে বিনিময় সিকিউরটিজ লিমিটেড। অভিযোগ রয়েছে, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স রুলস ভঙ্গ করে প্রতিষ্ঠানটি অসৎ উদ্দেশ্যেই মূলত এসব অনৈতিক কাজ করেছে।

বিনিময় সিকিউরিটিজের গ্রাহক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বিজনেস আই বাংলাদেশকে এসব কথা জানান।
তিনি বলেন, অনেক আশা নিয়ে গত ৮ আগস্ট বিনিময় সিকিউরিটিজে বিও একাউন্ট খুলি। সেই একাউন্টের বিপরীতে আমি আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংকে ২৬ লাখ টাকা জমা দেই। আমার অনুমতি না নিয়ে এই টাকা দিয়ে বিনিময় সিকিউরিটিজের ট্রেডার মোহেব্বুল্লাহ নিম্নমানের শেয়ার বেশি দামে কেনে। আমি তখন তাকে বললাম আমার অনুমতি না নিয়ে কেন শেয়ার কিনছেন, তখন সে বলে সমস্যা নাই আমি আমার মতো করে কিনেছি। কিছু দিন পর আমার কোডে ২৬ লাখ টাকার বিপরীতে ২৮ লাখ টাকা মার্জিন লোন দিয়ে শেয়ার কেনাবেচা করেছে। আমি যখন একাউন্ট খুলি তখন তাকে আমি নিষেধ করেছিলাম আমার একাউন্টে যেনো কোনো প্রকার মার্জিন লোন না দেওয়া হয়। কিন্ত সে আমার নিষেধ অমান্য করে অনুমতি না নিয়ে মার্জিন লোন দিয়ে শেয়ার কেনাবেচা করেছে। এরপর আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম কেন আমার একাউন্টে মার্জিন লোন দেওয়া হয়েছে?, তখন তিনি বলেন, পরিচালকদের সাথে আমার কথা হয়েছে, মার্জিন ইন্টারেস্ট ও ফোর্স সেলের দায়ভার আমরা নেবো।
শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, যদি তারা আমার কোডে মার্জিন লোন দেয়ও, তবুও রুলস অনুসারে সর্বোচ্চ ১৩ লাখ টাকা দিতে পারবে। সেক্ষেত্রে বিনিময় সিকিউরিটিজ হাউজটি ২৮ লাখ টাকা দিয়ে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স রুলস ভঙ্গ করেছে। অসৎ উদ্দেশ্যেই মূলত এসব অনৈতিক কাজ করেছে হাউজটি। আমি তাদের একাধিকবার জানিয়েছি আমার অনুমতি ছাড়া শেয়ার কেনাবেচা না করতে। তারপরেও তারা করেছে। আমার পোর্টফোলিওতে থাকা অধিকাংশ টাকা তসরুপ করেছে নিজেদের স্বার্থে। মোহেব্বুল্লাহ ও তার দোসররা তাদের এসমস্ত ক্রিমিনাল এক্টিভিটিজের দায় আমার কাছে স্বীকার করেছে। আমাকে মূল টাকা থেকে মাত্র ৭ লাখ টাকা প্রদান করেছে।

তিনি আরও বলেন, আমি বিনিময় সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সাথে দেখা করেছি একাধিকবার, তিনি আমাকে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিলেও এখনও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। উল্টো আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকিধামকি দেওয়া হচ্ছে। আমার দাবি, তারা যেন আমাকে বাকি ১৯ লাখ ও এই টাকার বিপরীতে ব্যাংক ইন্টারেস্ট প্রদান করে। ইতিমধ্যে আমি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসিতে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছি। আশা করি কমিশন এব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, যেন ভবিষ্যতে আর কোনো গ্রাহকের সাথে এরকম ন্যাক্কারজনক কাজ না করতে পারে বিনিময় সিকিউরিটিজ।
বিনিময় সিকিউরিটিজের একাধিক বিনিয়োগকারী জানান, গ্রাহকদের অনুমতি না নিয়ে তাদের কোডে থাকা অর্থ দিয়ে ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ও অলিম্পিক এক্সেসরিজ লিমিটেড-এর মতো ‘জেড’ ক্যাটাগরির শেয়ার বেশি দামে কিনে তা কম দামে বিক্রি করেছে বিনিময় সিকিউরিটিজ।এছাড়াও এসএস স্টিলসহ অসংখ্য নিম্নমানের শেয়ার কেনাবেচা করেছে কারসাজিকারকদের সাথে হাত মিলিয়ে।
জানা গেছে, বিনিময় সিকিরিটিজের চিফ অপারেটিং অফিসার-সিওও সুব্রত রয় এ সমস্ত ক্রিমিনাল এক্টিভিটিজের সমস্ত দায় স্বীকার করে গত বছরের ১৫ ও ১৬ ডিসেম্বর এর মধ্যে সমাধানের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু আজ অবধি তারা এসমস্ত প্রতারণার সমাধান করেনি।
সুব্রত রয় বলেন, এসমস্ত ঘটনার সমস্ত দায়ভার মোহেব্বুল্লাহর। সমস্যা সমাধান করতে তাকে আমরা অফিসে আসতে বার বার অনুরোধ করছি। কিন্তু সে আসছে না। এখনতো তাকে মাথায় আঘাত করে আনতে পারি না। প্রতিষ্ঠানটির আরেক গ্রাহক শাহাদাত জানান, আমার কাছে অনুমতি না নিয়ে বিনিময় সিকিউরিটিজ আমার টাকা দিয়ে শেয়ার কেনাবেচা করেছে। শুধু তাই নয়, অনুমতি না নিয়ে মার্জিন লোনও প্রদান করেছে আমার কোডে। সেই মার্জিন লোন দিয়েও হাউজটি নিম্নমানের শেয়ার কেনাবেচা করেছে। ট্রেডার মোহেব্বুল্লাহর সাথে বিনিময় সিকিউরিটিজ এই সমস্ত ন্যাক্কারজনক ঘটনা পরিকল্পিতভাবে করেছে। কোডে থাকা আমার কষ্টার্জিত বেশিরভাগ টাকা তারা তসরুপ করেছে। আমি টাকা ফেরত চাই। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
বিএসইসির মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বিজনেস আই বাংলাদেশকে বলেন, যেকোনো অভিযোগ আমরা গুরুত্ব সহকারে নেই। বিনিময় সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে কমিশনে কেউ অভিযোগ দিয়েছে কিনা আমার জানা নেই। আমি এর সত্যতা জেনে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে বলবো।