নিজস্ব প্রতিবেদক
গত কয়েক বছর ধরে দেশের পুঁজিবাজারে ধারাবাহিকভাবে কমতে শুরু করেছে বিদেশি বিনিয়োগ। অথচ পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা রক্ষায় বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা অপরিহার্য। সাবেক শিবলী কমিশন বিদেশি বিনিয়োগ আনতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ‘রোড শো’ এর আয়োজন করে। এসব ‘রোড শো’ করতে কয়েক কোটি টাকা খরচ হয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, সেই সময় বিদেশি বিনিয়োগতো আসেই-নি বরং কমেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড-সিডিবিএল’র তথ্য মতে, গত তিন বছরে বিদেশি বিনিয়োগকারীর বেনিফিশিয়ার ওনার্স বা বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা কমেছে ৪৬ শতাংশ। নতুন বছরে (২০২৫) দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগ পরিস্থিতি কেমন হতে পারে তা নিয়ে বিজনেস আই বাংলাদেশের সাথে কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। পাঠকদের জন্য তা প্রকাশ করা হলো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল আমিন বলেন, পুঁজিবাজার দীর্ঘদিন সঠিকপথে এগোয়েনি। অনাকাঙ্খিত ফ্লোর প্রাইজ দেওয়া হয়েছিল। এছাড়াও ডলারের মূল্য বৃদ্ধিসহ পলিসিগত নানা সংকটের কারণে পুঁজিবাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। ফলে এই অস্থিতিশীল পুঁজিবাজার থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করে। তবে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। পুঁজিবাজারকে সামগ্রিকভাবে সংস্কার করছি। এসব সংস্কার শেষে চলতি বছরের মাঝামাঝি থেকে বাজার একটি লুক্রেটিভ পর্যায়ে যাবে, তখন বিদেশি বিনিয়োগ যথেষ্ট পরিমাণে বাড়তে পারে।
তিনি বলেন, শক্তিশালী পুঁজিবাজার গঠনে বিদেশি বিনিয়োগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমাদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে গত কয়েক বছরে তাদের আকৃষ্ট করা যায়নি।
ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ লিমিটেড- এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা-সিইও এহসানুর রহমান বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ আনতে সম্প্রতি একটি কনফারেন্স করেছি। কনফারেন্সের পরে বেশ সাড়াও পাচ্ছি। বিদেশি বিনিয়োগকারী বৃদ্ধিতে এরকম বিভিন্ন কনফারেন্সের আয়োজন করতে হবে। এসব প্রোগ্রামের মাধ্যমে তাদের কাছে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে হবে। তিনি বলেন, গত বছরের (২০২৪) আগস্টের পর থেকে বিদেশি বিনিয়োগ আসা শুরু করেছে। যদিও সাইজে খুব কম। তারপরেও গত ৪/৫ বছর তো বিদেশি বিনিয়োগ বলতে তেমন কিছুই ছিল না। সবচেয়ে পজেটিভ ব্যাপারটা হচ্ছে অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী আমাদের সাথে মিটিং করতে চাচ্ছে। বাজারের যত স্বচ্ছতা আসবে, গভর্নেন্স ভালো হবে, তত বেশি বিদেশিরা বিনিয়োগে আকৃষ্ট হবে। তারা সবসময় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটা স্বচ্ছ ধারনা চায়। আশা করি চলতি বছর বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে।
ইনভেস্ট অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিট্ডে-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা-সিইও এমরান হাসান বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ আনতে হলে ভালো কোম্পানি বাজারে আনতে হবে। শিবলী কমিশনের সময় পলিসিগত ত্রুটি ছিল, ফ্লোর প্রাইজের একটা ইস্যু ছিল, বাজারে তারল্য ছিল না, ডলারের রেট বাড়তে ছিল। ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে ভয় পাচ্ছিল। এখন তাদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের পলিসি তৈরি করতে হবে। সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। তারা সহজে কিভাবে বিনিয়োগ করতে পারে সেব্যাপারে পলিসি তৈরি করতে হবে। ইতিমধ্যে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়তে শুরু করেছে। গত ৪/৫ মাসে নতুন নতুন বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে পুঁজিবাজারে। যদিও পরিমাণে অনেক কম। নতুন বছরে আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উল্লেখ্য, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড- সিডিবিএল এর তথ্য মতে, ২০২১ সালের ২২ ডিসেম্বর বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ৮৬ হাজার ৩৬২টি, ২০২২ সালের ২২ ডিসেম্বর তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬৩ হাজার ৫টি, ২০২৩ সালের ২১ ডিসেম্বর আরও কমে দাঁড়িয়েছে ৫৫ হাজার ৪২৬টি। আর সর্বশেষ চলতি বছরের (২০২৪) ১৯ ডিসেম্বর হয়েছে ৪৬ হাজার ৭৩৩টি।