ঢাকা, সোমবার, ৪ অগাস্ট ২০২৫, ৪:০৯ অপরাহ্ন

দক্ষ নেতৃত্ব ও সুশাসন থাকায় আইডিএলসির প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা সন্তোষজনক

নিজস্ব প্রতিবেদক

আইডিএলসি ফিন্যান্স পিএলসি। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের কোম্পানিটি দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, আর্থিক দুরবস্থা ও বৈশ্বিক নানা সংকটের মধ্যেও ভালো ব্যবসা করেছে। মুনাফা করেছে উল্লেখযোগ্য হারে। দক্ষ নেতৃত্ব ও সুশাসন থাকায় কোম্পানিটির প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা সন্তোষজনক। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্রটি জানায়, করোনা পরবর্তী বৈশ্বিক নানা সংকটে যেখানে অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান লোকসানের খাতায় নাম লিখিয়েছে, ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়েছে; সেখানে আইডিএলসি মুনাফা করেছে। বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশও দিয়েছে আশানুরুপ। গত তিন প্রান্তিকে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর, ২০২৪) কোম্পানির সমন্বিত মুনাফা বেড়েছে। আর গত পাঁচ বছরে ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

এদিকে গত তিন প্রান্তিকে কোম্পানিটির মুনাফার পাশাপাশি রিটেইনড আর্নিংস বা সঞ্চিতি আয় বেড়েছে। তবে মোট সম্পদের পরিমাণ কিছুটা কমেছে আইডিএলসি’র।

তথ্য পর্যালোচনায় জানা গেছে, গত তিন প্রান্তিকে আইডিএলসি ট্যাক্স পরবর্তী মুনাফা করেছে ১২৫ কোটি ৩৬ লাখ ৯৭ হাজার ২৫৭ টাকা। এর আগের বছরের একই সময়ে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর ২০২৩) যা ছিল একশো কোটি ৫ লাখ ৫৫ হাজার ২১২ টাকা। বছরের ব্যবধানে মুনাফা বেড়েছে ২৫ কোটি ৩১ লাখ ৪২ হাজার ৪৫ টাকা। অর্থাৎ এ্ই সময়ে ২৫ শতাংশ মুনাফা বেড়েছে। আর তিন প্রান্তিকে সমন্বিত শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৩ দশমিক ০২ টাকা। এর আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ২ দশমিক ৪১ টাকা।

তথ্যা পর্যালোচনায় আরও জানা গেছে, গত তিন প্রান্তিকে কোম্পানির মোট সম্পদের পরিমাণ এসে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৬৫৬ কোটি ৮৫ লাখ ৪৩ হাজার ৪৩৮ টাকা। এর আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ১৪ হাজার ৭৩৭ কোটি ৮৬ লাখ ৯০ হাজার ৮৯ টাকা। এই সময়ে মোট সম্পদের পরিমাণ কমেছে ৮১ কোটি এক লাখ ৪৬ হাজার ৬৫১ টাকা। অর্থাৎ সম্পদের পরিমাণ কমেছে দশমিক ৫৪ শতাংশ।

গত পাঁচ বছরের আর্থিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, আইডিএলসি বিনিয়োগকারীদের ২০১৯ সালে নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে ৩৫ শতাংশ। এছাড়াও ২০২০ সালে ১৫ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস; ২০২১ সালে ১৫ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস; ২০২২ ও ২০২৩ সালে ১৫ শতাংশ করে নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। ২০১৯ সালে শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৪ দশমিক ৫১ টাকা। এছাড়াও ২০২০ সালে ইপিএস হয়েছে ৬ দশমিক ৭৪, ২০২১ সালে ৫ দশমিক ৩৪, ২০২২ সালে ৪ দশমিক ৬১ এবং ২০২৩ সালে ৩ দশমিক ৬৪ টাকা শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে। আর ২০১৯ সালে মোট মুনাফা হয়েছে ১৬৯ কোটি ৯৯ লাখ ২০ হাজার টাকা। ২০২০, ২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ সালে মুনাফা হয়েছে যথাক্রমে ২৫৪ কোটি ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা, ২১১ কোটি ৬০ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ১৯১ কোটি ৪৫ লাখ ৩০ হাজার ও ১৫১ কোটি ৩৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

এদিকে আর্থিক প্রতিবেদন থেকে আরও জানা গেছে, ২০১৯ সালে আইডিএলসি’র শেয়ার প্রতি প্রকৃত সম্পদ (এনএভিপিএস) ছিল ৩৭ দশমিক ১৮ টাকা। আর ২০২০ সালে ৪০ দশমিক ৪১ টাকা, ২০২১ সালে ৪২ দশমিক ৪১ টাকা, ২০২২ সালে ৪৩ দশমিক ৫৬ টাকা এবং ২০২৩ সালে ৪৫ দশমিক ৭১ টাকা এনএভিপিএস হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির পিই রেশিও সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ পিই রেশিও এসে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ০৯ পয়েন্ট। আর অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে পিই রেশিও হয়েছে ৮ দশমিক ২২ পয়েন্ট। গত ৫২ সপ্তাহে অর্থাৎ এক বছরে আইডিএলসি’র সর্বনিম্ন শেয়ার দর ছিল ২৬ টাকা ৭০ পয়সা ও সর্বোচ্চ শেয়ার দর ছিল ৪৬ টাকা ৫০ পয়সা। আর গত এক মাসে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ শেয়ার দর ছিল যথাক্রমে ৩১ দশমিক ৮০ টাকা ও ৩৪ দশমিক ২০ টাকা। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোম্পানিটির বাজার মূলধন এসে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩৭১ কোটি ৮০ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

আইডিএলসি’র প্রধান অর্থ কর্মকর্তা মাসুদ মজুমদার বিজনেস আই বাংলাদেশকে বলেন, কোভিড পরবর্তী সবাই ব্যবসায় সাফারার হয়েছে। আমাদের ব্যবসায় যা যা প্রভাইড করা দরকার ছিল আমার সেগুলো করেছিলাম। আর চলতি বছরে আমরা কালেকশনে বেশি জোর দিয়েছিলাম। ৫ আগস্টের পর শেয়ারবাজার থেকে আমাদের প্রতিষ্ঠান কিছু রিটার্ন পেয়েছে। যেকারণে আইডিএলসি ভালো রেজাল্ট করেছে। বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি এ কে এম মিজান-উর রশিদ চৌধুরী বলেন, আইডিএলসি যথেষ্ট ভালো কোম্পানি। কোম্পানিটির প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা রয়েছে।

উল্লেখ্য, ৩১ ডিসেম্বর হিসাব বছরের আইডিএলসির রিজার্ভে বর্তমানে এক হাজার ৩৫৮ কোটি ২১ লাখ টাকা রয়েছে। এক হাজার কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধন ও ৪১৫ কোটি ৬৯ লাখ ৮০ হাজার টাকার পরিশোধিত মূলধনী কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৪১ কোটি ৫৬ লাখ ৯৮ হাজার ৪৮৪টি; যার মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার রয়েছে ১৪ দশমিক ১৭ শতাংশ। এছাড়াও উদ্যোক্তা পরিচালক, প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার রয়েছে যথাক্রমে ৫৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ, ২৮ দশমিক ১৫ শতাংশ ও এক দশমিক ০২ শতাংশ।

নিউজটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন