নিজস্ব প্রতিবেদক
“ইনিস্টিউট অব চাটার্ড অ্যাকাউনটেন্টস অব বাংলাদেশ- আইসিএবি’র ফেলো সদস্য মোহাম্মদ লিটন মিয়া। বর্তমানে তিনি পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত পূবালী ব্যাংকে জেনারেল ম্যানেজার ও প্রধান অর্থ কর্মকর্তা-সিএফও হিসেবে কর্মরত আছেন। এর আগে তিনি বিভিন্ন নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান, লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও রেডিমেড গার্মেন্ট-আরএমজিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন।
সম্প্রতি তিনি অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিজনেস আই বাংলাদেশ-এর মুখোমুখি হন। ব্যাংক খাতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান। পাঠকদের উদ্দেশ্যে সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হলো।
বিজনেস আই বাংলাদেশ: পূবালী ব্যাংকের কার্যক্রম সম্পর্কে কিছু বলবেন
মোহাম্মদ লিটন মিয়া: বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম কানুন মেনে পূবালী ব্যাংক কাজ করে যাচ্ছে। গ্রাহকরা কিভাবে সহজে পূবালী ব্যাংকের সেবা পেতে পারে সেবিষয়টি আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আমাদের কাজের মধ্যে রয়েছে- আমানতের পরিমাণ বাড়ানো, লোন দেওয়া, আমদানি-রপ্তানির জন্য এলসি-লেটার অব ক্রেডিট খোলাসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্মতি দেয় এমন প্রায় সব কাজ পূবালী ব্যাংক করে থাকে। এছাড়াও শেয়ারবাজারেও বাংলাদেশ ব্যংকের নির্ধারিত সীমার মধ্যে বিনিয়োগ করে পূবালী ব্যাংক।
বিজনেস আই বাংলাদেশ: ভবিষ্যতে পূবালী ব্যাংকের উন্নয়নে কি ধরনের পদক্ষেপ নেবেন আপনারা?
মোহাম্মদ লিটন মিয়া: আমাদের ব্যাংকের একটা ভিশন স্টেটমেন্ট রয়েছে “Providing Customer Centric Life Long Banking Services” অর্থাৎ গ্রাহককে তার সমস্ত জীবনব্যাপী পূবালী ব্যাংকের বিভিন্ন সার্ভিস দেয়ার মাধ্যমে, অর্থনৈতিক ভাবে আরো স্বচ্ছল হয়ে উঠতে সাহায্য করা। প্রাইভেট ব্যাংকগুলোার মধ্যে আমাদের ব্র্যাঞ্চ নেটওয়ার্ক সবচেয়ে বেশি। আমরা গ্রাহকের আরও কাছে পৌঁছাতে চাই। এজন্য আমরা বিভিন্ন অ্যাপবেজ সলুউশন তৈরি করার চেষ্টা করছি। এসব অ্যাপের মাধ্যমে যাতে গ্রাহক সপ্তাহের সাত দিনেই যেকোনো সময় তার প্রয়োজনীয় ব্যাংকিং কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারে। ইতোমধ্যে আমরা (PI) পাই নামের একটি অ্যাপ চালু করেছি । যেটি এখন বেশ ভালো ভাবে কাজ করছে। গ্রাহকরা বর্তমানে এই পাই অ্যাপসের মাধ্যমে অনেক ধরনের সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করছেন। পূবালী ব্যাংকের যেকোনো গ্রাহক পাই অ্যাপস থেকে বিকাশ বা এরকম অ্যাপসগুলোর সাথে লেনদেন করতে পারবেন । পাই থেকে কার্ডে পেমেন্ট করতে পারেন। কার্ড থেকে পাইয়ে টাকা নিতে পারেন। পাইয়ের মাধ্যমে ট্যাক্স পেমেন্ট করতে পারেন। আমাদের যারা কিউ আর মার্চেন্ট রয়েছেন। তাদের সাথে এই পাইয়ের মাধ্যমে কেনাকাটা এবং লেনদেন করতে পারেন। পাইয়ের কর্পোরেট সলুউশন এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সরবরাহকারীদের বিল দেওয়া যায়। অর্থাৎ ডিজিটাল লেনদেনে আমরা নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করতে পেরেছি।
তিনি বলেন, এখনকার ইয়াং জেনারেশন ফোনে কথা বলতে পছন্দ করে না, তারা ট্ক্সেট বা ম্যাসেজ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। আমরা গ্রাহকদের ম্যাসেজের বিপরীতে কিভাবে ম্যাসেজ দিয়ে সেবা দিতে পারি, সে লক্ষ্যে কাজ করছি। নন পাই ইউজাররা কিভাবে তার দৈনন্দিন কাজ যেকোনো সময় সম্পন্ন করতে পারেন সে বিষয়েও আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। তাদের জন্য আমাদের ক্যাশ রিসাইক্লার মেশিন-সিআরএম বুথে আরও একটা ছোট মেশিন বসাবো। যার মাধ্যমে তারা বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিলসহ দৈনন্দিন যেকোনো বিল যেকোনো সময় পেমেন্ট করতে পারেন। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।
বিজনেস আই বাংলাদেশ: ব্যাংকিং খাতের অস্থিরতা কাটিয়ে উঠতে কি ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?
মোহাম্মদ লিটন মিয়া: বর্তমানে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তা কোনোভাবেই কাম্য ছিল না। গ্রাহকদের মাঝে ব্যংকিং ব্যবস্থার উপর আস্থা ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়ামের ব্যবস্থা করতে হবে। গ্রাহকদের বিশ্বাস করাতে হবে যে, ব্যাংকে টাকার কোনো সংকট নেই। এজন্য যা যা করা দরকার তাই করতে হবে। তবেই তাদের মাঝে আস্থা ফিরে আসবে। ব্যংকগুলোর উপর গ্রাহকদের আস্থা ফিরে আসলে, আশাকরা যায় এই অস্থিরতা কেটে যাবে।
বিজনেস আই বাংলাদেশ: ব্যাংকিং খাতের বর্তমান অস্থিরতা কাটিয়ে উঠতে কত সময় লাগতে পারে?
মোহাম্মদ লিটন মিয়া: সময়টা আসলে বলা খুবই কঠিন। এখানে অনেক ধরনের পক্ষ রয়েছে। এখানে আইন মন্ত্রণালয়, অর্থমন্ত্রণালয়, বিচার বিভাগ, রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিস অ্যান্ড ফার্মস-আরজেএসসি ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততা রয়েছে। এতোগুলো পক্ষকে এক সাথে করাও অনেক কঠিন। যেকারণে খুব সহজেই বলা যাবে না ব্যাংক খাতের অস্থিরতা কবে ঠিক হবে। তবে সরকার এই খাতের উন্নয়নে যেসমস্ত টাস্কফোর্স গঠন করেছে, সেগুলো যদি সঠিকভাবে কাজ করে তাহলে বেশি সময় নাও লাগতে পারে।
বিজনেস আই বাংলাদেশ: বর্তমানে ভবিষ্যতে ব্যাংক খাতের প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো কিকি?
মোহাম্মদ লিটন মিয়া: এখন ব্যাংক খাতের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে গ্রাহকদের আস্থা ফিরিয়ে আনা। গ্রাহকদের এই আস্থা দ্রুত ফিরিয়ে আনতে হবে। আস্থা ফেরত না আসা পর্যন্ত তারা ব্যাংকে টাকা রাখবে না। আর ব্যাংকে টাকা না রেখে যদি ঘরে টাকা রাখে তবে খরচের পরিমাণ বেড়ে যাবে। এতে করে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। এই মূল্যস্ফীতি কমাতে তাদেরকে ব্যাংকমুখি করাতেই হবে। এটাও একটা চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি টেকনোলজিক্যাল ডেভেলপমেন্ট বা উন্নযনে এখনও ব্যাংকিং খাত পিছিয়ে রয়েছে। যদিও আমাদের অনেক উন্নতি হয়েছে। আমাদের টেকনোলজি আরও উন্নত করতে হবে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অনেকে ইচ্ছাকৃতভাবে টাকা ফেরত দেয় না। এতে করে ব্যাংকের সক্ষমতা কমে যায়। কিভাবে এই মন্দ ঋণের টাকা খুব দ্রুত এবং সহজে ফেরত নিয়ে আসা যায় সেবিষয়টি নিয়েও ব্যাংকগুলোকে কাজ করতে হবে।
বিজনেস আই বাংলাদেশ: এজেন্ট ব্যাংকিং কতটা উপকারি বলে আপনি মনে করেন?
মোহাম্মদ লিটন মিয়া: পুবালী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং সার্ভিস নেই। কারণ আমরা এখনও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আস্থা রাখতে পারছি না। কারণ অসৎ এজেন্ট এবং তার কর্মচারীরা কৌশলে সহজ সরল গ্রাহকদের বিভ্রান্ত করে সহজেই তাদের টাকা আত্মসাৎ করতে পারে এবং নিকট অতীতে এর অনেক উদাহরণ আছে। তবে, এজেন্ট ব্যাংকিং যদি সঠিকভাবে কাজ করে তাহলে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য অনেক উপকারী হবে। কারণ অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চল রয়েছে, যেখানে ব্যাংক যেতে পারে না। কিন্তু এজেন্টরা সেখানে সহজেই ব্যাংকিং সেবা দিতে পারে।
বিজনেস আই বাংলাদেশ: স্বল্প সুদে উদ্যোক্তা তৈরির জন্য ব্যাংকগুলো কি ধরনের ভূমিকা পালন করতে পারে?
মোহাম্মদ লিটন মিয়া: স্বল্প সুদে উদ্যোক্তা তৈরির চেয়েও প্রয়োজনীয় বিষয় হচ্ছে, যিনি ব্যাংকের ঋণে উদ্যোক্তা হতে চান তিনি টাকা সঠিক সময় ফেরত দিতে পারবেন কিনা। উদ্যোক্তা যদি ব্যাংকের লোন বা ঋণ ফেরত না দিতে পারেন তবে ব্যাংকের অনেক ক্ষতি হয়। তাই উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়ার আগে যাচাই-বাছাই করতে হবে, এবং যদি এমন একটা ব্যবস্থা তৈরি করা যায় যাতে গ্রাহক ঋণের টাকা ফেরত দিতে বাধ্য থাকে। তাহলে হয়তো ব্যাংক স্বল্প সুদে ঋণ দিয়ে উদ্যোক্তা তৈরিতে সাহায্য করতে পারবে।