ঢাকা, সোমবার, ৪ অগাস্ট ২০২৫, ৬:০৭ পূর্বাহ্ন

চলছে ফাইন ফুডসের সার্কাস, দেখছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ফাইন ফুডস যেন সার্কাস দেখাতে শুরু করেছে। আর কোম্পানিটির সার্কাস দর্শকের মত উপভোগ করছে নিয়ন্ত্রক বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কারণ কোম্পানিটির শেয়ার অত্যান্ত ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার পরেও দর বাড়ছে আকাশছোঁয়া। বর্তমানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ফাইন ফুডসের শেয়ার ২০০ টাকার ওপরে লেনদেন হচ্ছে। এতো দুর্বল কোম্পানির এমন দর বৃদ্ধির সাথে কারসাজি চক্রের হাত রয়েছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

প্রতিষ্ঠানটির নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, ফাইন ফুডসের পিই রেশিও রয়েছে ২ হাজার ৯৪৬ পয়েন্ট। অর্থাৎ কেউ যদি কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ করে তবে লভ্যাংশের আকারে বিনিয়োগ ফিরে পেতে ২ হাজার ৯৪৬ বছর সময় লাগবে। বিনিয়োগকারীদের এধরনের কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা কোনোভাবেই সমীচীন হবে না । এমন ঝুঁকিপূর্ণ শেয়ারে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হতে হবে বলে মনে করেন বাজার বিশ্লেষকরা।

তাহলে বিনিয়োগকারীরা কিসের আশায় এমন ঝুঁকিপূর্ণ শেয়ারে বিনিয়োগ করছে? এ প্রশ্ন রয়েছে বাজারে। ফাইন ফুডসের শেয়ার দর বৃদ্ধির পেছনে কারসাজি চক্রের হাত রয়েছে। কোম্পানিটি নিজেই কারাসাজি করে শেয়ারটির দর বৃদ্ধি করছে। আর কারসাজির মাধ্যমে মুনাফা করা টাকা দিয়ে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেবে বলে জানান বাজার বিশ্লেষকরা।

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে হলে যেকোন কোম্পানির পিই রেশিও, ইপিএস, এনএভি ও লভ্যাংশ বিবেচনা করা হয়। সেক্ষেত্রে বিগত বছরগুলোতে ফাইন ফুডসের মুনাফার তেমন কোন চিত্র নেই।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি বিনিয়োগকারীদের ২০২০ সালে এক শতাংশ, ২০২২ সালে দেড় শতাংশ এবং ২০২৩ সালে এক দশমিক ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করেছে। আর ২০২১ সালে কোনো লভ্যাংশই প্রদান করেনি। এদিকে বিগত বছরগুলোতে নামমাত্র লভ্যাংশ প্রদান করলেও সদ্য বিদায়ী হিসাব বছরে (৩০ জুন ২০২৪) সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে ফাইন ফুডস। মূলত কারসাজি করে অস্বাভাবিক দরে থাকা কোম্পানিটির শেয়ার আরও অস্বাভাবিক করার উদ্দেশ্যেই মূলত ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।

এমন দুর্বল ক্যাটাগরির কোম্পানির দর যখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, তখন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি যেন দর্শকের ভূমিকায় সার্কাস দেখছে বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা। অভিযোগ রয়েছে, অতীতেও দেশের পুঁজিবাজারে দূর্বল কোম্পানির শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে দর বৃদ্ধি করা হয়েছে। কারসাজি চক্র বাজার থেকে টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে। আর নিঃস্ব হয়েছে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। আর এসব কারসাজির পেছনে অনেকটা নিরব দর্শর্কের ভূমিকা পালন করেন ডিএসই ও বিএসইসি।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত ১ মাসে ফাইন ফুডসের শেয়ার দর ৫৯ টাকা ১০ পয়সা বা ৩৮ শতাংশ বেড়ে সর্বোচ্চ ২১৪ টাকা ৯০ পয়সা পরযন্ত লেনদেন হয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থার চোখের সামনে এমন দুর্বল কোম্পানির শেয়ার দর হু হু করে বাড়লেও তাদের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।

মনোয়ার হোসেন নামে একজন বিনিয়োগকারী বলেন, গত ১৬ বছরে পুঁজিবাজারে অনেক অনিয়ম- দুর্নীতি হয়েছে। বর্তমানে রাশেদ কমিশন বিএসইসিতে দায়িত্ব গ্রহণের পর পুঁজিবাজারে সংস্কারের কথা বলছেন। কিন্তু আমরা দৃশ্যমান কোন সুফল পাচ্ছি না। কমিশন যদি সঠিকভাবে তদারকি করত তাহলে মন্দা বাজারে ফাইন ফুডসের মত দুর্বল শেয়ারের দাম এমন আকাশচুম্বী হতো না। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে ব্যাংকের শেয়ারগুলো ফান্ডামেন্টাল শেয়ার হিসাবে পরিচিত। কিন্তু বছরের পর বছর এসব শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধি পায় না।

এদিকে ফাইন ফুডস-এর কোম্পানি সচিব মো. সোহেল হোসেনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

তথ্যানুসন্ধানে আরও জানা গেছে, আইন অনুযায়ী পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত যেকোনো কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদকে সর্বনিম্ন ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হয়। সর্বশেষ ৩১ অক্টোবর ২০২৪ তারিখ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ ১৫ দশমিক ২৫ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আইন ভঙ্গ করেছে ফাইন ফুডস।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, শেয়ার ধারণে বিএসইসি রুলস ভঙ্গের দায়ে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। ফাইন ফুডসের মত দুর্বল শেয়ার নিয়ে যেন কারসাজিকারকরা মুনাফা করতে না পারে সেদিকে বিএসইসির কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে।

উল্লেখ্য, বি ক্যাটাগরির ফাইন ফুডস ২০০২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। গত ৫২ সপ্তাহ বা এক বছরে ফাইন ফুডস-এর শেয়ার দর সর্বনিম্ন ১১৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২২১ টাকায় উঠেছিল। সোমবার (২৫ নভেম্বর) কোম্পানিটির সমাপনী শেয়ার দর ছিল ২০১ টাকা ১০ পয়সা।

কোম্পানির বর্তমান শেয়ার সংখ্যা এক কোটি ৩৯ লাখ ৭৩ হাজার ৯১৮টি, যার মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার রয়েছে যথাক্রমে ২৪ দশমিক ২৫ শতাংশ ও ৬০ দশমিক ৫০ শতাংশ। কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন একশো কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ১৩ কোটি ৯৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

 

নিউজটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন