“ইনিস্টিউট অব চাটার্ড সেক্রেটারিজ অব বাংলাদেশ- আইসিএসবি’র ফেলো সদস্য মোঃ নূর-উল-আলম, এফসিএস। বর্তমানে তিনি পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স-এ কোম্পানি সচিব হিসেবে কর্মরত আছেন। বিমা খাতের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নূর-উল-আলম এর আগে মেঘনা ইন্স্যুরেন্স ও দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স-এ কোম্পানি সচিব হিসেবে কাজ করেছেন।”
সম্প্রতি তিনি অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিজনেস আই বাংলাদেশ-এর মুখোমুখি হন। জানান বিমা খাত নিয়ে তাঁর নানা ভাবনা ও পরিকল্পনার কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান। পাঠকদের উদ্দেশ্যে সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হলো।
বিজনেস আই বাংলাদেশ: ২০২৪-এর ছাত্র-জনতার বিপ্লব পরবর্তী বাংলাদেশের নতুন দিনের সূচনায় বিমা খাত কিভাবে অবদান রাখতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
মোঃ নূর-উল-আলম: ধন্যবাদ। আপনিতো জানেন যে, যেকোন দেশের অর্থনীতির অন্যতম তিনটি প্রধান খাত হলো ব্যাংক, বিমা এবং পুঁজিবাজার। বিমাখাত হতে পারে আমাদের দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি। আমাদের দেশে তৈরী পোষাকখাতের পরই বিমা খাত হলো দ্বিতীয় বৃহত্তম কর্মসংস্থান খাত। কিন্তু প্রয়োজনীয় উদ্যোগের অভাবে জাতীয় অর্থনীতিতে এখাতের অবদান অনেক অপ্রতুল। ব্যাংক, বিমা এবং পুঁজিবাজার— আর্থিক খাতের এ তিনটির মধ্যে বিমাই সবচেয়ে পিছিয়ে। শুধু পিছিয়ে আছে বললে কমই বলা হবে, বরং বলা উচিত অর্থনীতির আকারের তুলনায় অনেক পিছিয়ে এ খাত !
২০১৯ সালে জিডিপিতে এ খাতের অবদান ছিল মাত্র দশমিক ৪৯ শতাংশ। ২০২২ সালে তা আরো কমে দশমিক ৪০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে সুইস রি ইন্সটিটিউট কর্তৃক প্রকাশিত সিগমা রিপোর্ট। এটি সারা বিশ্বের নিম্নতমদের একটি। অথচ, এখাতে বিশ্ব গড় হলো ৭ শতাংশরও বেশি ! আমাদের দুর্ভাগ্য, যথাযথ নীতি প্রণয়নের অভাবে খাতটি থেকে ভালো কিছু বের করে আনতে পারছে না বাংলাদেশ! দেশের অর্থনীতির স্বার্থে সরকার যদি এ খাতের প্রতি জোর দেন তবে দেশ এবং অর্থনীতির ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে। তাই, ২০২৪ এর ছাত্র-জনতার বিপ্লব পরবর্তী বাংলাদেশের নতুন দিনের সূচনায় বিমা খাত হতে পারে ‘চেঞ্জমেকার’!
বিজনেস আই বাংলাদেশ: দেশের বিদ্যমান বিশাল বেকারত্ব কমাতে বিমা খাত কিভাবে অবদান রাখতে পারে বলে আপনার মনে হয়?
মোঃ নূর-উল-আলম: দেখেন, শুধু মাত্র প্রবাসী আয় এবং তৈরী পোষাকখাতের রপ্তানি আয় দিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে তার ঈপ্সিত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব না। কেননা, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জনসংখ্যা। আবার বিনিয়োগের বিকল্প খাত তৈরী না হওয়ার ফলশ্রুতিতে দেশে বিনিয়োগ বাড়ছে না, বাড়ছে না কর্মসংস্থানও । এর সাথে ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’, হিসেবে প্রতিবছর যোগ হচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থার দূর্বলতার ফলে সৃষ্ট শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাও।
লক্ষ লক্ষ অদক্ষ শিক্ষিত জনসংখ্যার কারণে বাড়ছে পুঞ্জীভূত ব্যাপক বেকারত্ব। ২০২৩ সালে বাংলাদেশে বেকারত্বের হার প্রায় ছিল ৫ দশমিক ০৬ শতাংশ। মনে রাখতে হবে, এ পরিসংখ্যানে সদ্য বেকারত্বকে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। তা বিবেচনায় নিলে হারটি আরো বাড়বে। এই মূহু্র্তে দেশে বিদ্যমান গ্রাজুয়েটদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১৫ শতাংশের কম নয়!
আমাদের সৌাভাগ্য, কর্মক্ষম জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশ এখন স্বর্ণযুগে অবস্থান করছে। আমরা এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বা জনসংখ্যাতাত্ত্বিক বোনাসের সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছি। বাংলাদেশের প্রায় ৬৮ শতাংশ জনসংখ্যা কর্মক্ষম। যা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বা জনবৈজ্ঞানিক মুনাফা হিসেবে পরিচিত। কোনো দেশে যদি ৬০ শতাংশের বেশী মানুষ কর্মক্ষম থাকে তাহলে সেদেশকে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বা জনবৈজ্ঞানিক মুনাফা অবস্থায় আছে বলে গণ্য করা হয়। জনসংখ্যার প্রায় ৭০ ভাগ কর্মক্ষম, এ ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসেতো বটেই পৃথিবীর ইতিহাসেও বিরল ঘটনা।
সঠিকভাবে কাজে না লাগালে এ সুবিধাজনক অবস্থা অচিরেই পরনির্ভরশীল জনসংখ্যার পরিমাণ বাড়িয়ে দেশের দায় হিসেবে আবির্ভূত হবে। দ্রুত ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি না করতে পারলে ক্রমবর্ধমান বেকারত্বর কারণে অচিরেই বাংলাদেশের সকল অর্জন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। তাই, জাতীয় অর্থনীতির অন্যান্য অনুঘটক গুলোর এক বা একাধিক অনুঘটককে ধাক্কা দেওয়া এখন অতিব জরুরী হয়ে পড়েছে। সে ক্ষেত্রে বিমাখাত হতে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতির ‘জিয়ন কাঠি’!
বিজনেস আই বাংলাদেশ: মোট দেশজ উৎপাদন(জিডিপি) এবং জাতীয় জীবনে বীমা খাত কেন এত গুরত্বপূর্ণ ?
মোঃ নূর-উল-আলম: একটি দেশের অভ্যন্তরে এক বছরে চূড়ান্তভাবে উৎপাদিত দ্রব্য ও সেবার বাজারে সামষ্টিক মূল্যই হচ্ছে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি বা গ্রোস ডমেস্টিক প্রডাক্ট)। আগের বছরের তুলনায় পরের বছরে এ উৎপাদন যে হারে বাড়ে সেটি হচ্ছে জিডিপির প্রবৃদ্ধি। জিডিপি একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান সূচক।
বিমাখাত জ্যামিতিক হারে জিডিপি বাড়ায়, যা অন্য কোনো খাত করতে পারে না। প্রাইস ওয়াটারহাউস কুপার্স কর্তৃক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায় মাত্র এক শতাংশ বিমা অবদান বৃদ্ধি দুই শতাংশ জিডিপি বৃদ্ধি করে। এর কারণ এটি ২২ শতাংশ অবিমাজনিত ক্ষতি এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগোত্তর কর অবদান হ্রাস ১৩ শতাংশ পর্যন্ত ঠেকিয়ে দিতে সহায়তা করে। বিমা অবদানের গাণিতিক বৃদ্ধি জিডিপি বৃদ্ধিকে জ্যামিতিক ভাবে বৃদ্ধি ঘটাবে। বিমা শিল্প কেবল ব্যবসায় বানিজ্যের স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরীতেই অবদান রাখে না বরং প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং অর্থনৈতিক সংকটের সময় সরকারের আর্থিক চাপ হ্রাস করতেও সহায়তা করে।
লন্ডনভিত্তিক বিশ্বের অন্যতম সেরা বিমা মার্কেট লয়েড এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ সাধারণ বিমা খাতে সবচেয়ে কম বিমাকারী দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। লয়েডের মতে, বাংলাদেশের এমন অবস্থার কারণ প্রতিবছর দেশটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তার জিডিপির দশমিক আট শতাংশ হারায়। লয়েড আরো বলেছে যে, বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হবে বাংলাদেশ। অথচ এ বিষয়ে দেশটির কেন প্রস্তুতি চোখে পড়ছে না এবং ফান্ড রিকোভারি বা তহবিল পুনঃরুদ্ধার সামর্থের দিক থেকেও বাংলাদেশ সবচেয়ে পিছিয়ে। অতএব, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অবিমাজনিত ক্ষতি হ্রাস করতে বাংলাদেশকে তার বিমা খাতের সংস্কার করা অতীব জরুরী হয়ে পড়েছে।
বিজনেস আই বাংলাদেশ: অর্থ-সামাজিক অবস্থা প্রায় একই হওয়া সত্ত্বেও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলো বিমা খাতে ভালো করলেও বাংলাদেশ কেন এ খাতে পিছিয়ে রয়েছে?
মোঃ নূর-উল-আলম: প্রায় বাংলাদেশের মতই অর্থ-সামাজিক অবস্থা হওয়া সত্ত্বেও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলো যেমন ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রিলংকা, ভুটান এমনকি মায়ানমার বিমা খাতে ভালো করলেও বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে বেশ পিছিয়ে রয়েছে।
উপরোক্ত সবগুলো দেশে আমাদের তুলনায় কম মার্কেট প্লেয়ার (বিমা কোম্পানি) তাদের বাজারে অনুমোদিত বিদেশি কোম্পানিগুলোর সাথে আন্তর্জাতিক মানদন্ড বজায় রেখে প্রতিযোগীতা করে বিমা পলিসি ইস্যু করে থাকে। মোদ্দাকথা, উক্ত দেশসমূহে বিদ্যমান মোট বিমা কোম্পানীর সংখ্যা আমাদের তুলনায় কম, উক্ত দেশসমূহের বিমা বাজারে বিদেশি কোম্পানির উপস্থিতি রয়েছে, উক্ত দেশসমূহের বিমা কোম্পানিগুলোর অনুমোদিত মূলধনের পরিমাণ আমাদের এখানকার তুলনায় বেশি এবং উক্ত দেশসমূহের বিমা কোম্পানিসমূহ আন্তর্জাতিক মানদন্ড বজায় রেখে প্রতিযোগিতা করে বিমা পলিসি ইস্যু করে থাকে!
বিজনেস আই বাংলাদেশ: বিমা খাতে গ্রাহকদের আস্থার সংকট দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে। এই আস্থার সংকট দূর করতে কি কি চ্যালেঞ্জ রয়েছে অথবা কি কি উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
মোঃ নূর-উল-আলম: বিমা হলো মুলত ঝুঁকি বহনের চুক্তি। এজন্য বিমা পলিসিকে বিমা চুক্তি বা ক্ষতিপূরণের চুক্তিও বলা চলে। এটি হলো দু’পক্ষের (বিমা গ্রাহক এবং বিমা কোম্পানীর) মধ্যে একটি আইন সম্মত চুক্তি। এতে এক পক্ষ অন্য পক্ষকে ক্ষতিপূরণ দিবে বলে নিশ্চয়তা দিয়ে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। অন্যপক্ষ, যার বিমা যোগ্য স্বার্থ আছে তিনি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর কোনো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্ট হারে প্রিমিয়াম প্রদানের নিশ্চয়তা দিয়ে চুক্তিতে আবদ্ধ হন। এভাবে বিমা হলো প্রথম পক্ষ বিমাকারী বা বিমা কোম্পানি এবং দ্বিতীয় পক্ষ বিমাগ্রহীতার মধ্যে যথাক্রমে ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং প্রিমিয়াম প্রদানের নিশ্চয়তা সম্বলিত একটি চুক্তি।
এবার আসি আপনার প্রশ্নর প্রসঙ্গে, আমার কাছে মনে হয় বাংলাদেশে বিমা ব্যবসার মূল সমস্যাই হলো ‘বিমা গ্রাহকদের আস্থার সংকট’। এ সংকট একদিনে তৈরী হয়নি। তাই, এ সংকট হতে উত্তরণও একদিনে সম্ভব নয়। এ সংকট উত্তরণের পথ দু’টি। একটি হচ্ছে- দ্রুততম সময়ে বিমা দাবী পূরণ করা এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে-দেশের সম্ভাব্য সকল সম্পদ ও প্রায় সতের কোটি জনস্যংখ্যার বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের নূন্যতম একটি বিমা পলিসি থাকা নিশ্চত করা। এ লক্ষ্যে যা যা করা দরকার সরকারকে সে লক্ষ্য কাজ করতে হবে।
বিজনেস আই বাংলাদেশ: গুটি কয়েক ইন্স্যুরেন্স ভালো করছে। অধিকাংশ ইন্স্যুরেন্স গ্রাহকের দাবি পূরণে ভালো পারফর্মেন্স দেখাতে পাচ্ছে না বলে পরিলক্ষিত হয় বিভিন্ন সময়। তারা কেন দাবি পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে? সমস্যাটা আসলে কোথায়?
মোঃ নূর-উল-আলম:এক কথায়, যে সকল কোম্পানিতে ‘কর্পোরেট সুশাসন’ রয়েছে তারা বিমা ব্যবসাসহ সকল ক্ষেত্রে ভালো করছে। অপরদিকে যারা ‘কর্পোরেট সুশাসন’ এর ধার ধারে না তারা নিজেরাও ধুঁকছে বিমা খাতকেও ক্ষীয়মানে পরিনত করার জন্য দায়ী। লাইফ এবং নন-লাইফ উভয় খাতেই সফল এবং অসফল কোম্পানি রয়েছে!লাইফ খাতে বিমা দাবি পূরণে ব্যর্থতার প্রধান কারণগুলো হলো বিমা দাবি প্রদানে সদিচ্ছার অভাব, লাইফ ফান্ডের অপ্রতুলতা, পরিচালন দুর্বলতা, পলিসি তামাদি হবার উচ্চ হার, উচ্চ ব্যবস্থাপনা ব্যয়, অন্যায্য প্রভাব এবং খুবই দুর্বল জনশক্তির মান ইত্যাদি।
অন্যদিকে নন-লাইফ বিমা দাবি পূরণে ব্যর্থতার প্রধান কারণগুলো হলো বিমা দাবি প্রদানে সদিচ্ছার অভাব, উচ্চ কমিশনের বিনিময়ে প্রিমিয়াম সংগ্রহ, পুনঃবিমা না করা, অন্যায্য প্রভাব, পরিচালন দুর্বলতা, এক শ্রেণীর অসাধু ব্যক্তিদের কমিশন বাণিজ্য, উচ্চ ব্যবস্থাপনা এবং খুবই দুর্বল জনশক্তির মান ইত্যাদি। মুলত, বর্নিত বিষয়ে প্রয়োজনীয় সরকারি নজরদারী এবং বিমা খাতের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ৩৩টি জীবন বিমা কোম্পানি এবং ৪৬টি সাধারণ বিমা কোম্পানি যথাক্রমে ৮ম বৃহত্তম জনসংখ্যা এবং ৩০তম বৃহত্তম অর্থনীতির কোনো সুবিধাই নিতে পারছে না।
বিজনেস আই বাংলাদেশ: বিমা খাতের উন্নয়নে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) যে সমস্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে বা অতিতে নিয়েছে, সেগুলো যথেষ্ট কিনা? এ খাতের উন্নয়নে সংস্থাটির আরো কি কি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
মোঃ নূর-উল-আলম: বিমা খাতের উন্নয়নে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র সদিচ্ছার কোনো ঘাটতি আমার চোখে পড়েনি। তবে কাজের পরিসর এবং ব্যাপ্তির তুলনায় অত্র সংস্থার জনবল অপ্রতুল। সীমিত জনবল দিয়ে ৮১টির অধিক বিমা কোম্পানরি বিশাল বিমাখাতকে নিয়ন্ত্রণ এবং অত্র খাতে কাঙ্খিত উন্নয়ন শুধু কঠিন নয় অসম্ভবও বটে।
বিজনেস আই বাংলাদেশ: বিভিন্ন নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি তাদের পলিসি বাড়াতে কমিশনের হার বাড়িয়ে থাকেন। এধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধে কি ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
মোঃ নূর-উল-আলম: উচ্চ কমিশনের বিনিময়ে প্রিমিয়াম সংগ্রহ করা নন-লাইফ বিমা খাতের জন্য একটি আত্নবিনাশী কার্যক্রম। কতিপয় নন-লাইফ বিমা কোম্পানি এমন আত্মহত্যা মুলক কার্যক্রমে জড়িত রয়েছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। বিষয়টা অনেকটা ১০০ টাকার সেল করে ১২০ টাকা খরচ করার মত! সুতরাং উচ্চ কমিশনের বিনিময়ে প্রিমিয়াম সংগ্রহ করাকে আত্মহত্যা ছাড়া আর কী-বা বলা যায়! এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে সকল নন-লাইফ বিমা কোম্পানিকে আইডিআরএ’র নির্দেশনার আলোকে কাজ করলেই এ সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব!
বিজনেস আই বাংলাদেশ: এবার আপনাদের কোম্পানির প্রসঙ্গে আসা যাক। আপনাদের কোম্পানির বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে পাঠকদের উদ্দেশ্যে যদি বলতেন।
মোঃ নূর-উল-আলম: আলহা’মদু লিল্লাহ ! সেন্ট্রাল ইনস্যুরেন্স কোম্পানী লিঃ এর আর্থিক অবস্থা অনেক ভালো। আমরা বাংলাদেশের ১ম প্রজন্মের অন্যতম নন-লাইফ বিমা কোম্পানি। বর্তমানে স্থায়ী সম্পদের দিক থেকে আমরা ৪৬টি নন-লাইফ বিমা কোম্পানীর মধ্যে ৫ম অবস্থানে রয়েছি। আমাদের বিমা দাবি পরিশোধের হার অনেক ভালো, বর্তমানে যা প্রায় ৯০ শতাংশ!
বিজনেস আই বাংলাদেশ: আপনাদের প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে বলবেন।
মোঃ নূর-উল-আলম:সেন্ট্রাল ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিঃ এর লক্ষ্য হলো গ্রাহক সন্তুষ্টির মাধ্যমে ‘ট্রান্সফরমেশন ফর ভ্যালু মেক্সিমাইজেশন’ নিশ্চত করা এবং ভবিষ্যতে নিজেকে সকল ক্ষেত্রে একটি লিডিং নন-লাইফ বিমা কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা।
বিজনেস আই বাংলাদেশ: সর্বশেষ অর্থবছরে আপনারা গ্রাহকদের কত শতাংশ দাবি পূরণ করেছেন?
মোঃ নূর-উল-আলম: আলহা’মদু লিল্লাহ! সর্বশেষ অর্থবছরে আমাদের বিমা দাবি পরিশোধের হার ছিল প্রায় ৯০ শতাংশ!
বিজনেস আই বাংলাদেশ: পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারীরা কেন আপনাদের কোম্পানির উপর আস্থা রাখবে অথবা আপনাদের কোম্পানিতে বিনিয়োগ করবে?
মোঃ নূর-উল-আলম: আর্থিক সক্ষমতার স্বাক্ষর হিসেবে সেন্ট্রাল ইনস্যুরেন্স কোম্পিনি লিঃ পুঁজিবাজারে তথা ডিএসই’তে তালিকা ভূক্ত হয় ২০শে মার্চ, ১৯৯৫ ইং তারিখে এবং এরপর সিএসই’তে তালিকা ভূক্ত হয় ২২শে অক্টোবর, ১৯৯৫ইং তারিখে। বিগত দেড় দশকেরও বেশ সময় ধরে আমরা আমাদের বিনিয়োগকারীগণকে ১২ শতাংশের উপর লভ্যাংশ দিয়ে আসছি। তাই, অতীতে বিনিয়োগকারীরা আমাদের কোম্পানির উপর আস্থা রেখে ছিল এবং ভবিষতেও আমাদের উপর আস্থা রাখবে, ইনশা আল্লাহ!