নিজস্ব প্রতিবেদক
পূবালী ব্যাংকের কাছে বন্ধক রাখা বাড়ি বিক্রি করে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের পাওনা পরিশোধের কথা ছিল তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের। প্রতিষ্ঠানটির রাজধানীর লালমাটিয়ার বাড়ি ইতিমধ্যে বিক্রি হলেও তাদের ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা এক টাকাও পায়নি। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কারো বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পূবালী ব্যাংক লিমিটেডের কাছে বন্ধক থাকা রাজধানীর লালমাটিয়ার বাড়ি ইতিমধ্যে আনুমানিক ২৪ কোটি টাকায় বিক্রি করেছে তামহা সিকিউরিটিজ। এই বাড়ি বিক্রি করে বিনিয়োগকারীদের অর্থ পরিশোধ করার কথা ছিল। কিন্তু তা না করে হারুনুর রশীদ ও তার গংরা ব্যাংকটির পাওনা ৪ কোটি ৭৯ লাখ ৭৬ হাজার ২৬ টাকা পরিশোধ করেছে। বাকি টাকা তারা নিজেরা আত্মসাৎ করেছে। কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কে হারুনুর রশীদ জানায়, লালমাটিয়ার বাড়ি বিক্রি করে তার দুই বোন ও তাদের জামাই পূবালী ব্যাংকের পাওনা পরিশোধ করেছে এবং অবশিষ্ট ১৯ কোটি টাকা তারা আত্মসাৎ করেছে।
জানা গেছে, তিন সংস্থাকে দেওয়া হারুনুর রশীদের ওই বক্তব্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। মূলত এই টাকা তার দুই বোন ও তাদের জামাইদের পাশাপাশি হারুনুর রশীদ নিজেও আত্মসাৎ করেছে। তার দুই বোন শাহনাজ বেগম ও জাহানারা পারভীন। দুই জনেই তামহা সিকিউরিটিজের পরিচালক। শাহনাজ বেগমের বর্তমান স্বামী জাকারিয়া ও জাহানারা পারভীনের স্বামী ড. ইউনুস। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিনিয়োগকারীদের অর্থ পরিশোধে প্রতিষ্ঠানটির এই টালবাহানায় সরাসরি সহযোগিতা করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর সাবেক শিবলী কমিশন ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এর কিছু অসাধু কর্মকর্তা।
তামহা সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করে বলেন, বিএসইসি-ডিএসইর কাজ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা। কিন্তু আমাদের পাওনা পরিশোধে গত তিন বছরেও দায়িত্বশীল আচরণ করেনি বিএসইসি-ডিএসই। তারা ভেবেছিল বর্তমান কমিশন তাদের পাওনা পরিশোধে সহযোগিতা করবে। কিন্তু আশায় গুড়েবালি। বর্তমান কমিশনও তাদের সহযোগিতা করছে না বলে তারা দুঃখপ্রকাশ করেন।

তামহা সিকিউরিটিজের একাধিক বিনিয়োগকারী বিজনেস আই বাংলাদেশকে জানান, বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে বিএসইসির একটি বক্তব্য আছে, সেটি হলো- আপনারা নির্ভয়ে আসেন, আমরা নিরাপত্তা দেবো। কমিশনের এই কথার সাথে কাজের কোনো মিল নেই। তাদের এমন আচরনে আমরা সত্যিই হতাশ। তারাই যদি এরকম অসদাচরণ করে, তবে পুঁজিবাজার ভালো হবে কি করে? তারা আরও বলেন, তামহা সিকিউরিটিজের কর্মচারীরাও আমাদের টাকা আত্মসাতের সাথে জড়িত। অথচ তাদের একজনের ব্যাপারেও কোনো শাস্তিমূলক পদক্ষপে নেওয়া হয়নি এখন পর্যন্ত। তারা শরীরে হাওয়া লাগিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুঁজিবাজার যেন মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে। যে যেভাবে পাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের ঠকাচ্ছে। এদিকে ব্রোকারেজ হাউজটির ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা টাকা না পেয়ে নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছে। তারা ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা ঠিকভাবে করাতে পাচ্ছেন না। ধারদেনা করে সংসার চালাচ্ছেন বলে তারা জানান। জানা গেছে, তামহা সিকিউরিটিজ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা নিলেও সেই টাকা দিয়ে শেয়ার কিনতো না। নকল সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি বিনিয়োগকারীদের বোঝাতো যে তাদের শেয়ার কেনা হয়েছে। যাকে বলে ডিজিটাল প্রতারণা। বিনিয়োগকারীদের টাকা এভাবে আত্মসাৎ করায় ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বরের ডিএসই প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার লেনদেন স্থগিত করে। প্রায় দুই হাজার প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগকারী প্রতারণার শিকার হন। তামহা সিকিউরিটিজ তার বিনিয়োগকারীদের একাউন্ট থেকে প্রায় ৮৭ কোটি টাকা সরিয়েছে বলে সে সময় প্রাথমিক তদন্তে বেড়িয়ে আসে।
ডিএসই’র সিআরও খায়রুল বাশারকে এসব ব্যাপারে জানতে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বিজনেস আই বাংলাদেশকে বলেন, তামহা সিকিউরিটিজের ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের ১৫ শতাংশ অর্থ দেওয়া হয়েছে। এর বেশি কিছু আমি বলতে পারবো না।
উল্লেখ্য, হারুনুর রশীদ ও তার গংরা তাদের গুলশানের বাড়ি বিক্রি করে কিছু টাকা তাদের আজ্ঞাবহ কিছু বিনিয়োগকারীদের দিয়েছে। যা সম্পূর্ণ বিএসইসির নিয়মের পরিপন্থি।