নিজস্ব প্রতিবেদক
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি জিকিউ বলপেন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। দীর্ঘদিন লোকসানে থাকা বিবিধ খাতের কোম্পানিটি ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। উৎপাদন বাড়াতে ইতিমেধ্যে কারখানার ভারসাম্য, আধুনিকীকরণ, পুনর্বাসন ও সম্প্রসারণ (বিএমআরই) এর কাজ শুরু করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

বিএমআরই’র কাজ গত ১ জুলাই ২০২৪ তারিখে শুরু হয়েছে। গত ৪ মাসে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে বিজনেস আই বাংলাদেশকে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) উজ্জল কুমার সাহা।
তিনি বলেন, কারখানার বিএমআরই’র কাজ চলমান থাকলেও উৎপাদন বন্ধ হয়নি। তবে উৎপাদন কিছুটা কমতে পারে। বিগত বছরগুলোতে ৬ থেকে ৭ কোটি টাকার ইকোনো বলপয়েন্ট কলম উৎপাদন করতো জিকিউ বলপেন। বিএমআরই’র কাজ চলবে আগামী ৩০ জুন ২০২৫ সাল পর্যন্ত। এই সময়ে জিকিউ বলপেনের মালিকানাধীন ইকোনো বলপয়েন্ট কলমের উৎপাদন হ্রাস পেয়ে ৪ থেকে ৫ কোটি টাকায় নেমে আসবে।
কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, বিএমআরই’র অংশ হিসেবে কারখানায় নতুন মেশিনারিজ স্থাপন করা হবে। বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইন্ডিয়ান মেশিনারিজ স্থাপন হবে। ভিসা জটিলতার কারণে এখনো ইন্ডিয়া থেকে নতুন মেশিনারিজ আনতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। তবে খুব শিগগিরই ভিসা জটিলতা কেটে যাবে এবং আধুনিক মেশিনারিজ নিয়ে আসবে। আর বিএমআরই’র অন্যান্য অংশের কাজ চলমান রয়েছে। বিএমআরই’র কাজ শুরু করতে দেরি হওয়া প্রসঙ্গে কোম্পানিটি জানায়, কোম্পানির যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত পরিচালনা পর্ষদ নিয়ে থাকে। পরিচালনা পর্ষদ থেকে দীর্ঘদিন এই কাজ শুরু করার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। যে কারণে কোম্পানি দীর্ঘদিন লোকসানে থাকলেও বিএমআরই’র কাজ শুরু করা যায়নি। এখন পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ শুরু হয়েছে। এই কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন করা হবে। বাজারে ইকোনো বলপয়েন্ট আসার পর রাইটার ও কাইজার বলপয়েন্ট এসেছিল। তারা ভালো করতে পারেনি। বাজার থেকে চলে গেছে। ইকোনো বলপয়েন্ট কিছুটা হলেও বর্তমানে টিকে আছি। তবে ইকোনোর পরে বাজারে ম্যাটাডর বলপয়েন্ট এসেছে। তারা ভালো করছে।

বিএমআরই’র কাজ সম্পন্ন হলে, যারা ভালো করছে, তাদের সাথে আগামীতে জিকিউ বলপয়েন্ট প্রতিযোগিতা করতে পারবে। প্রতিষ্ঠানটি আশা করছে এই কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর প্রতি বছর ১৮ থেকে ২০ কোটি টাকার ইকোনো বলপয়েন্ট কলম উৎপাদন হবে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক উজ্জল কুমার বলেন, ইতিমধ্যে রাজধানীর উত্তরায় একটি ১৪ তলা ভবনের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। একটি ফ্লোর আমরা ভাড়াও দিয়েছি। সবগুলো ফ্লোর ভাড়া হয়ে গেলে প্রতি বছর ভবনটি থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা আয় হবে। জি কিউ বলপেন লোকসানে থাকলেও রিজার্ভ থেকে বিনিয়োগকারীদের বিগত বছরগুলোতে ডিভিডেন্ড দিয়েছে। কোম্পানির রিজার্ভে ৮৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা রয়েছে।
তবে বর্তমানে কোম্পানির অন্যান্য আয়ের ক্ষেত্রে লোকসানে রয়েছে ১১ কোটি টাকার বেশি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে প্রকাশিত প্রতিবেদনে কোম্পানিটি বলেছে, বিএমআরই সম্পন্ন করতে প্রায় ৯ কোটি টাকা খরচ হবে। কার্যক্রম বন্ধ রাখার সময় কোম্পানিটি লভ্যাংশ প্রদান অব্যাহত রাখতে পারবে।
আর্থিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ৩০ জুন ২০২৩ হিসাব বছরে জিকিউ বলপেন ইন্ডাস্ট্রিজের সেল হয়েছে ৬ কোটি ৮৯ লাখ ৫১ হাজার ৫৩ টাকা। এর আগের হিসাব বছরে যা ছিল ৭ কোটি ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৮৪৮ টাকা। এক্ষেত্রে সেল কমেছে ১৪ লাখ ২৫ হাজার ৭৯৫ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির মোট সম্পদের পরিমাণও কিছুটা কমেছে। ৩০ জুন ২০২৩ হিসাব বছরে কোম্পানির মোট সম্পদের পরিমাণ এসে দাঁড়িয়েছে ১৫০ কোটি ৮ লাখ ৫৫ হাজার ৫৫০ টাকা। এর আগের অর্থবছরে যা ছিল ১৬৫ কোটি ৮৬ লাখ ৬১ হাজার ৯১৬ টাকা। বছরের ব্যবধানে মোট সম্পদের পরিমাণ কমেছে ১৫ কোটি ৭৮ লাখ ৬ হাজার ৩৬৬ টাকা। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, সর্বশেষ হিসাব বছরে (৩০ জুন ২০২৪) জিকিউ বলপেন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ৩ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। এই সময়ে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৩ টাকা ৫০ পয়সা।
উল্লেখ্য, জিকিউ বলপেনের সর্বশেষ শেয়ার দর ছিল ১২৪ টাকা ৬০ পয়সা। কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ৫০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ৮ কোটি ৯২ লাখ ৮০ হাজার টাকা।