ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ অগাস্ট ২০২৫, ৮:৩০ অপরাহ্ন

ন্যাশনাল ব্যাংককে শেষ করে দেয়া হয়েছে: আব্দুল আউয়াল মিন্টু

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ন্যাশনাল ব্যাংক ২০০৮ সাল পরযন্ত ছিল দেশের সেরা ব্যাংকগুলোর মধ্যে একটি। কিন্তু এরপর নানা অনিয়ম দুর্নীতির কারণে ব্যাংকটিকে শেষ করে দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়েও বেশি দায় ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের। এমন কোনো অনিয়ম নেই যা ব্যাংকটিকে করতে দেয়া হয়নি।

সম্প্রতি ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু একটি পত্রিকাকে দেয়া সাক্ষাতকারে এ মন্তব্য করেন।

ব্যাংকটির চেয়ারম্যান বলেন, পর্ষদ পুনর্গঠনের পর আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা চেয়েছিলাম। ওই সময় টাকা দিলে ব্যাংকটি তৎক্ষণাৎ ঘুরে দাঁড়াতে পারত। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে পরিস্থিতি ততই খারাপ হচ্ছে। ব্যাংকের নগদ প্রবাহ ঠিক করতে পারলে অন্য সব সূচকও ঠিক করা যেত।

জানা গেছে, গণ-অভ্যুত্থানে বিগত সরকারের পতনের পর ব্যাংক খাত সংস্কারের অংশ হিসেবে সবার আগে ভেঙে দেয়া হয় ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ। বাংলাদেশ ব্যাংক বেসরকারি ব্যাংকটির পর্ষদ ভেঙে দেয় গত ২০ আগস্ট। একই সঙ্গে নতুন করে গঠন করা হয় সাত সদস্যের পর্ষদ। এর ধারাবাহিকতায় ২২ আগস্ট পুনর্গঠিত পর্ষদের চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব নেন আবদুল আউয়াল মিন্টু।

ন্যাশনাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৩ সালে। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত টানা ২০ বছর ব্যাংকটির উদ্যোক্তা পরিচালক ছিলেন আবদুল আউয়াল মিন্টু। ১৯৯৫ সালের শুরু থেকে ১৯৯৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেন। পরে উত্তরাধিকারী হিসেবে তার ছেলে তাবিথ আউয়াল ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালক নির্বাচিত হন। ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি পরিচালক ছিলেন। তবে এরপর আবদুল আউয়াল মিন্টু কিংবা তার পরিবারের কোনো সদস্য আর ন্যাশনাল ব্যাংক পর্ষদে ফিরতে পারেননি রাজনৈতিক কারণে।

ন্যাশনাল ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুই বছর ধরেই ব্যাংকটির আমানত স্থিতি কমছে। গত বছর শেষেও ব্যাংকটির আমানত ছিল ৪২ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। চলতি বছরের জুনে এসে আমানতের এ স্থিতি ৪০ হাজার ৭৬ কোটি টাকায় নামে। আর গত তিন মাসে আমানত কমেছে আরো ২ হাজার কোটি টাকা। গত সপ্তাহে ন্যাশনাল ব্যাংকে ৩৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকার আমানত ছিল। যদিও ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের স্থিতি এখন ৪২ হাজার কোটি টাকার বেশি। এ ঋণের অর্ধেকেরই বেশি খেলাপি। চলতি ২০২৪ পঞ্জিকাবর্ষের প্রথম নয় মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) ৬৯৮ কোটি টাকা নিট লোকসান গুনেছে ব্যাংকটি। এর আগে গত দুই বছরে মোট ৪ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা নিট লোকসান দিয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০০৯ সালে সিকদার পরিবারের কর্তৃত্বে চলে যাওয়ার পরই ন্যাশনাল ব্যাংকের সুনামে চিড় ধরে। ওই সময় পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হন প্রয়াত জয়নুল হক সিকদার। স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, আত্মীয়-স্বজনদের ছাড়াও সিকদার গ্রুপের মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিদেরও পর্ষদে যুক্ত করেন তিনি। ব্যাংক কোম্পানি আইনে একই পরিবারের সর্বোচ্চ চারজন সদস্য থাকার বিধান থাকলেও ন্যাশনাল ব্যাংক পর্ষদে সিকদার পরিবারের ছিলেন পাঁচ সদস্য। এর পর এক যুগের বেশি সময় ধরে পরিবারটির একচ্ছত্র কর্তৃত্বে পরিচালিত হয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড।

অভিযোগ আছে, সে সময় ব্যাংকটির ঋণ বিতরণ, জনবল নিয়োগ ও ব্যবস্থাপনায় অনৈতিক হস্তক্ষেপ করেছেন পরিচালকরা। বিতরণকৃত ঋণের অর্ধেকের বেশি কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়ে বড় কিছু গ্রাহকের কাছে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে জয়নুল হক সিকদার প্রয়াত হলে চেয়ারম্যান হন তার স্ত্রী মনোয়ারা সিকদার। এ সময় সিকদার পরিবারের অন্তর্দ্বন্দ্বের প্রভাব পড়ে ন্যাশনাল ব্যাংকেও। পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে এক পর্যায়ে পর্ষদ ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। অবসান হয় সিকদার পরিবারের কর্তৃত্বের।

যদিও সে সময় ব্যাংকারদের ভাষ্য ছিল, ব্যাংকটির পর্ষদ আরো আগে ভেঙে দেয়া প্রয়োজন ছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা করেনি। উল্টো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী ন্যাশনাল ব্যাংকের সিআরআর ও এসএলআর সংরক্ষণে ব্যর্থতার ক্ষেত্রে ছাড় দেয়া হয়েছে।

 

নিউজটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন