পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সী পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা বন্ডের বিনিময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ-আইসিবি’র কাছ থেকে সংগৃহীত ৩২৫ কোটি টাকার অধিকাংশই গত ৫ বছরেও পরিশোধ করেনি। এনিয়ে কোম্পানিটির প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছে আইসিবি। অনুসন্ধানে এ তথ্য জানা গেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১০ শতাংশ সুদে বন্ড ছেড়ে আইসিবির কাছ থেকে ৩২৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে সী পার্ল। হোটেল ব্যবসা ব্যাপকভাবে হ্রাস হওয়ায় আইসিবির কাছে সী পার্ল ১০ শতাংশ সুদ ৩২ কোটি ৫০ লাখ টাকা মৌকুফের আবেদন করে একাধিকবার। কিন্তু আইসিবি তাদের আবেদনে সাড়া দেয়নি।সেক্ষেত্রে সুদসহ সী পার্ল ৩৫৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা আইসিবিকে পরিশোধ করবে। গত প্রায় ৫ বছরে মূল টাকার মাত্র ৮৭ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে সী পার্ল। এখনো সুদসহ কোম্পানির কাছে আইসিবির পাওনা রয়েছে ২৭০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। চুক্তি অনুযায়ী আগামী এক বছরের মধ্যে সী পার্লকে এই টাকা পরিশোধ করতে হবে। পরিশোধ করতে না পারলে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে আইসিবি।

অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, গত বছরের নভেম্বরে সি পার্লকে ৩২৫ কোটি টাকা বন্ডের ইউনিট থেকে ১২০ কোটি টাকার ইউনিট সাধারণ শেয়ারে রূপান্তর করার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছিল আইসিবি। এরপর সী পার্ল বিএসইসির অনুমোদন চায়। বিএসইসি অনুমতি প্রদান করে।
সেই প্রেক্ষিতে, সী পার্লের বোর্ড ১২০ কোটি টাকা কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্ত কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) গৃহীত হয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে- এখনো উল্লেখিত বন্ডের ইউনিটগুলো শেয়ারে রুপান্তর করেনি সী পার্ল। আদৌ এই ইউনিটগুলো শেয়ারে রুপান্তার করবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহপোষণ করেছে আইসিবি।
এদিকে ২০২০ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে সী পার্ল সুদসহ বন্ডের টাকা তিন কিস্তিতে পরিশোধ করার কথা রয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৫ বছর অতিবাহিত হলেও মাত্র ৮৭ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে সী পার্ল। কোম্পানির বন্ডের টাকা পরিশোধের এমন পারফর্মেন্সে আইসিবি ক্ষুব্ধ হয়েছে বলে জানা গেছে।

২০১৭ সালে সী পার্ল ব্যবসার গতি বাড়াতে ২০ পরিবর্তনযোগ্য বন্ডের মাধ্যমে আইসিবির কাছ থেকে ৩২৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। বন্ডটি সম্পূর্ণরূপে ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) কর্তৃক সাবস্ক্রাইব করা হয়েছিল।
সী পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা’র কোম্পানি সচিব মো. আজহারুল মামুনকে এব্যাপারে জানতে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: আবুল হোসেন বিজনেস আই বাংলাদেশকে বলেন, সী পার্ল আমাদের কাছ থেকে বন্ডের মাধ্যমে যে ৩২৫ কোটি টাকা নিয়েছে তার বেশিরভাগ টাকাই এখনো পরিশোধ করেনি। কোম্পানিটি আর এক বছর সময় পাবে এই সুদসহ এই টাকা পরিশোধ করার। যদি আগামী বছরের মধ্যে পরিশোধ না করে তবে আমরা আইনি পদক্ষেপে যাবো। আইসিবির কাছে সী পার্লের এক হাজার কোটি টাকার মর্টগেজ রাখা আছে, যোগ করেন আবুল হোসেন।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার সী পার্লের সর্বশেষ শেয়ার দর ছিলো ৩৫ টাকা। কোম্পানিতে মোট শেয়ার সংখ্যা ১২ কোটি ৭ লাখ ৫০ হাজারটি, যার মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার রয়েছে ৩৬ দশমিক ১১ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের রয়েছে ১৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগ ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার রয়েছে ৪৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ।