জ্ঞাত আয়বহির্ভুত সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে এম বদিউজ্জামানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মামলা রয়েছে। মামলা রয়েছে তার দুই স্ত্রী, ছেলেসহ ৬ জনের নামেও। অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্রটি বলছে, আওয়ামী লীগ সরকারের ছত্রছায়ায় নানরকম অবৈধ পন্থায় সম্পদের পাহাড় গড়েছেন এম বদিউজ্জামান। বর্তমানে তিনি দীর্ঘদিন ধরে সিঙ্গাপুরে লুকিয়ে রয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে পাচারের টাকায় সিঙ্গাপুরে গড়ে তুলেছেন নিজের সাম্রাজ্য। সিঙ্গাপুরের ৩নং রোবার্টস রোডে বদিউজ্জামানের জামান সেন্টারে হোটেল সিঙ্গাপুর ইন পরিচালনার পাশপাশি স্বর্ণ ও অর্থ পাচার করেন তিনি।

এদিকে বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরে যাতায়াতকারী অধিকাংশ ব্যবসায়ী তাকে হন্ডি জামান নামেই চেনেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তার কাছে কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা আশ্রয় নিয়েছেন বলে একাধিক সূত্র জানায়।
সূত্রটি জানায়, বেনজীর আহমেদের অধিকাংশ অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে বদিজ্জামানের হাত হয়ে। তিনি বেনজিরের একাংশের ব্যবসায়িক পার্টনারও ছিলেন। দুদক সূত্র জানিয়েছে, এম বদিউজ্জামান তার দুই ছেলে নাফিহ রশিদ খান, নাভিদ রশিদ খান এবং বদিউজ্জামানের দুই স্ত্রী নাসরিন জামান ও তৌহিদা সুলতানাসহ তার আত্নীয়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতিসহ অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যাংকের বিপুল অঙ্কের শেয়ার ক্রয়সহ মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার করেছে। দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের আমলযোগ্য তথ্য-প্রমাণ থাকায় দুদক কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১-এ দুইটি মামলা করা হয়।
দুদক সূত্র আরো জানিয়েছে, শুধু শেয়ার কেনাবেচায় অনিয়মের মাধ্যমে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বদিউজ্জামান ও তার সহযোগীরা। বদিউজ্জামান অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অ্যাডভান্স হোম প্রাইভেট লিমিটেড ও ফিনিক্স লিমিটেডের বিপুল অঙ্কের শেয়ার কেনা, মানি লন্ডারিং করেছেন। এছাড়াও কালো টাকার ব্যবসায় তার সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন সহকারি পরিচালক জানান, ২০২২ সালে এম বদিউজ্জামান বিরুদ্ধে বেশ কিছু গুরুত্বর অভিযোগ ওঠে। তার বিরুদ্ধে দুইজন সহকারি পরিচালক ব্যাপক অনুসন্ধান চালান। প্রাথমিকভাবে তারা অভিযোগের তথ্যের সত্যতার প্রমাণ পান। যার পরিপ্রেক্ষিতে দুদকের ওই দুজন সহকারি পরিচালক বাদী হয়ে বদিজ্জামানের বিরুদ্ধে একটি মামলা এবং তার স্ত্রীসহ আরো ৬ জনের বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা করেন। বিষয়টি নিয়ে এখনো আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সিঙ্গাপুরসহ একাধিক দেশে হুন্ডি ব্যবসার অন্যতম অংশীদার বদিউজ্জামানের স্ত্রী তানিয়া জামান। সার, কীটনাশক ও অন্যান্য কৃষিপণ্যের কাঁচামাল আমদানি-রপ্তানির নামে ওভার ইনভয়েস করে অর্থ পাচার করেন তিনি।
এসবের এবিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে (বিএফআইইউ) রয়েছে একাধিক প্রমাণ। এছাড়াও সিঙ্গাপুর থেকে যারা দেশে ফিরে বদিউজ্জামান (হন্ডি জামান) তাদের প্রলোভনে ফেলে স্বর্ণ চোরাচালান করে দেশে।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, বদিউজ্জামান ও স্ত্রী ও ছেলেদের নামে বসন্ধুরা আবাসিক এলাকায় রয়েছে তিনটি প্লট। গুলশানে রয়েছে একটি ফ্লাট। বনানীতে রয়েছ হুতল ভবন। জোয়ারসাহারায় রয়েছে দুইটি ৯ তলা আবাসিক ভবন। উত্তরায় বহুতল ভবন। গোপালগঞ্জ জেলা সদরে প্রায় ৩৫০ বিঘা জমিতে রয়েছে দুউটি আবাসিক প্রকল্প। গোপালগঞ্জ সদরে সার্কিট হাউস রোডে রয়েছে নিজের নামে বিলাসবহুল আবাসিক বাড়ি। এছাড়াও বিভিন্ন বাণিজ্যিক এলাকায় তারা নানা প্লট, ফ্ল্যাট, জমি-জমা সম্পত্তি কিনেছেন। নামমাত্র জামানতের বিপরীতে শত শত কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ নিয়ে নরসিংদীতে বিশাল আকারের ফ্যাক্টরি ও খামার গড়ে তুলেছেন। নামে-বেনামে চট্টগ্রাম বন্দরের পাশে কয়েকশ বিঘা জমি কিনেছেন। জাহাজের ছোট ছোট বোট চালানোর ডকইয়ার্ডও রয়েছে তাদের।
সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আজাদ রহমান জানান, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে সিআইডি। এম বদিজ্জামানের একটি ব্যাংকের পরিচালক থাকাকালিন তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযোগ ছিল। যেহেতু তার বিষয় নিয়ে দুদক কাজ করছে। প্রয়োজনে দুদককে সহযোগীতা করতে ইন্টাপোলের মাধম্যে দেশে ফিরে এনে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এসব অভিযোগ সম্পর্কে এম বদিউজ্জামানের বক্তব্য জানতে তার মোবাইল ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।