সম্প্রতি দেশের ব্যাংক খাতে চরম তারল্য সংকট রয়েছে। এমন সময় পুঁজিবাজারে তারল্য সংকটে থাকা ৫টি ব্যাংকের সঙ্গে ঋণ গ্যারান্টি চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই চুক্তির ফলে ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে নির্ধারিত মেয়াদে বিশেষভাবে ধার করতে পারবে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্যমতে, বর্তমানে ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে অনেকটা রুগ্নদশায় রয়েছে। ৫ ব্যাংকের মধ্যে ৪টি ব্যাংকের শেয়ার দীর্ঘদিন ধরে ফেসভ্যালুর নিচে লেনদেন হচ্ছে।

ব্যাংকগুলো হলো- ন্যাশনাল ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক।
ন্যাশনাল ব্যাংক
পুঁজিবাজারের অনেক পুরাতন ব্যাংক ন্যাশনাল ব্যাংক। বি ক্যাটাগরির ব্যাংকটি ১৯৮৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। বর্তমানে ব্যাংকটির শেয়ার দর ফেসভ্যালুর নিচে অবস্থান করছে। আজ ২৩ সেপ্টেম্বর ব্যাংকটির শেয়ার সর্বশেষ ৬ টাকা ৭০ পয়সা লেনদেন হচ্ছে। গত এক বছরে ব্যাংকটির শেয়ার ৫ টাকা ৪০ পয়সা থেকে ৮ টাকা ৮০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।

ব্যাংকটির আর্থিক চিত্র পরযালোচনায় দেখা যায়, ২০২১ সাল থেকে ব্যাংকটি শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দিচ্ছে না। সর্বশেষ দ্বিতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-জুন,২৪) ব্যাংকটির লোকসান দাঁড়িয়েছে ৩ টাকা ৩১ পয়সা।
বর্তমানে ব্যাংকটির রিজার্ভ রয়েছে ১ হাজার ৯৭২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক
এ ক্যাটাগরির ব্যাংকটি ২০০৮ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। বর্তমানে ব্যাংকটির শেয়ার দর ফেসভ্যালুর নিচে অবস্থান করছে। আজ ২৩ সেপ্টেম্বর ব্যাংকটির শেয়ার সর্বশেষ ৬ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন হচ্ছে। গত এক বছরে ব্যাংকটির শেয়ার ৬ টাকা থেকে ৬ টাকা ৮০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।
ব্যাংকটির আর্থিক চিত্র পরযালোচনায় দেখা যায়, গত ৫ বছরে ব্যাংকটি শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ করে লভ্যাংশ দিয়েছে । সর্বশেষ দ্বিতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-জুন,২৪) ব্যাংকটির ইপিএস হয়েছে ৭৮ পয়সা।
বর্তমানে ব্যাংকটির রিজার্ভ রয়েছে ১ হাজার ২৯২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
ইউনিয়ন ব্যাংক
বি ক্যাটাগরির ব্যাংকটি ২০২২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। বর্তমানে ব্যাংকটির শেয়ার দর ফেসভ্যালুর নিচে অবস্থান করছে। আজ ২৩ সেপ্টেম্বর ব্যাংকটির শেয়ার সর্বশেষ ৬ টাকা ৭০ পয়সায় লেনদেন হচ্ছে। গত এক বছরে ব্যাংকটির শেয়ার ৬ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৯ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।
ব্যাংকটির আর্থিক চিত্র পরযালোচনায় দেখা যায়, ২০২৩ সালে ব্যাংকটি শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে । সর্বশেষ দ্বিতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-জুন,২৪) ব্যাংকটির ইপিএস হয়েছে ৮৪ পয়সা।
বর্তমানে ব্যাংকটির রিজার্ভ রয়েছে ৫৪১ কোটি ১০ লাখ টাকা।
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক
এ ক্যাটাগরির ব্যাংকটি ২০২২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। বর্তমানে ব্যাংকটির শেয়ার দর ফেসভ্যালুর নিচে অবস্থান করছে। আজ ২৩ সেপ্টেম্বর ব্যাংকটির শেয়ার সর্বশেষ ৬ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন হচ্ছে। গত এক বছরে ব্যাংকটির শেয়ার ৬ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৯ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।
ব্যাংকটির আর্থিক চিত্র পরযালোচনায় দেখা যায়, ২০২৩ সালে ব্যাংকটি শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নগদ দিয়েছে । সর্বশেষ দ্বিতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-জুন,২৪) ব্যাংকটির ইপিএস হয়েছে ৭০ পয়সা।
বর্তমানে ব্যাংকটির রিজার্ভ রয়েছে ৩০৮ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।
সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি ২০০০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। বর্তমানে ব্যাংকটির রিজার্ভ রয়েছে ১ হাজার ১০৮ কোটি টাকা।
প্রসঙ্গত, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন হলে ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করা হয়। এগুলোসহ মোট ১১টি ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নামে-বেনামে ব্যাংকগুলো থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ নিয়ে পাচারের অভিযোগ খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থা।
এমন অবস্থায় সাময়িক সংকট মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টির বিপরীতে ধারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর দুর্বল ব্যাংকের কাছ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ডিমান্ড প্রমিসরি (ডিপি) নোট নিয়ে রাখবে, যাতে ধার দেওয়া ব্যাংকগুলো কোন বেকায়দায় না পড়ে।