শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসি আইপিও অর্থ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে। কোম্পানিটির আইপিও,র ১৩ কোটি ১২ লাখ টাকা এসভিপিও ফ্যাসিলিটিজ আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণের জন্য ব্যবহার করার কথা ছিল। কিন্তু কোম্পানিটি ওই অর্থ পরবর্তীতে জেনেরিক ওষুধ উৎপাদনের নতুন ইউনিট স্থাপনে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এছাড়া আইপিওর মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থ ব্যবহারের সময়সীমায় পরিবর্তন এনেছে কোম্পানিটি। কোম্পানিটি আইপিওর টাকা ব্যবহারের সময়সীমা ২ বছরের পরিবর্তে ৩ বছর বা ৩৬ মাস বৃদ্ধি করা হয়।

কিন্তু কোম্পানিটির নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান ৩০ শে জুন, ২০২৪ সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে আইপিও অর্থ ব্যবহারের খাত পরিবর্তন এবং এর ব্যবহারে স্বচ্ছতা এবং শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থের সুরক্ষা সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করেছে।
নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, কোম্পানিটির জেনেরিক ঔষধ উৎপাদন কোম্পানির নিয়মিত ব্যবসায়িক ক্রিয়াকলাপের অংশ ছিল। আইপিও তহবিলের সাথে এর কোন সম্পর্ক ছিল না।
এই ইস্যুতে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানটি আইপিও অর্থ ব্যবহারের কৌশলগত দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছে এবং শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থের বিষয়ে সন্দেহের ইঙ্গিত করেছে।

শেয়ারহোল্ডারদের বিশেষ সাধারণ সভায়- ইজিএমে আইপিও অর্থ ব্যবহারের সময়সীমা চলতি বছরের ৩ অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রেও প্রশ্ন তুলেছে।
নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এর মন্তব্যে আরও বলেছে, নাভানা ফার্মা আইপিওর অর্থ যে পরিমাণ অ্যাডভান্স করেছে, তা অর্থবছরের রিপোর্টে অ্যাডজাস্ট করা হয়নি। কোম্পানিটি ৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকার অ্যাডভান্স আলোচ্য অর্থবছরে অ্যাডাজাস্ট করেনি। এরমধ্যে ২ কোটি ২৪ টাকা অ্যাডভান্স ছিল আগের অর্থবছরের। এটি কোম্পানিটির প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্বের ইংগিত বহন করে এবং কোম্পানির আর্থিক স্বচ্চতার বিষয়েও স্বাভাবিক সন্দেহ তৈরি করে।
শুধু আইপিওতেই অনিয়ম করেনি নাভানা ফার্মা। কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকিওরও অভিযোগ রয়েছে।
নাভানা ফার্মার ভ্যাট ফাঁকি
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, ব্যবসায়িক তথ্য গোপন করে দুই বছরে সরকারের ১৩৯ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। এ সময় কোম্পানিটি পণ্য বিক্রির প্রকৃত তথ্যের চেয়ে ৮২৯ কোটি টাকা কম দেখিয়েছে। সেইসঙ্গে এ প্রতিষ্ঠান নিয়মবহির্ভূতভাবে ৪২ লাখ টাকার রেয়াতি সুবিধা গ্রহণ করেছে। ভ্যাটের বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) এক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
দেশের বাজারে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছে নাভানা ফার্মাসিটিউক্যালস লিমিটেড। বাজারে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদিত পণ্যের বিক্রি বাড়লেও দীর্ঘদিন ভ্যাট পরিশোধের পরিমাণ বাড়েনি। বিষয়টি নজরে আসার পর নিরীক্ষার (অডিট) সিদ্ধান্ত নেয় এলটিইউ, ভ্যাট। পরে এ বিষয়ে নিরীক্ষা কমিটিও গঠন করে ভ্যাট আহরণকারী এ প্রতিষ্ঠান। নিরীক্ষায় কোম্পানির নানা ধরনের অনিয়মের তথ্য উঠে আসে।
নিরীক্ষা প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২১-এর জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের বিক্রির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৯৬০ কোটি ১১ লাখ ৮১ হাজার ৫৪৩ টাকা। অথচ প্রতিষ্ঠানটির দাখিল করা রিটার্নে বিক্রি দেখানো হয়েছে ১ হাজার ১৩০ কোটি ৯২ লাখ ১২ হাজার ৩৭৯ টাকা। অর্থাৎ দুই বছরে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি কম দেখিয়েছে ৮২৯ কোটি ১৯ লাখ ৬৯ হাজার ১৬৪ টাকা। মূলত ভ্যাট ফাঁকি দিতেই এ তথ্য গোপন করা হয়েছে বলে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আর বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী হিসাব করলে রিটার্নে গোপন করা বিক্রি থেকে সরকার ভ্যাট পাবে ১২৪ কোটি ৩৭ লাখ ৯৫ হাজার ৩৭৪ টাকা।
জানা গেছে, এই ফাঁকি ধরা পড়ার পর শুনানি ডাকা হলে কোম্পানিটি ২ কোটি ৫৩ লাখ ৯৩ হাজার ৫১৪ টাকা পরিশোধের প্রমাণ দিয়েছে। ফলে উৎসে ভ্যাট বাবদ প্রতিষ্ঠানটি রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে ১৪ কোটি ৬৫ লাখ ৩ হাজার ৮০৬ টাকা। সব মিলিয়ে ২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি মোট ১৩৯ কোটি ৪৫ লাখ ২৭ হাজার ৫৯৭ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।