বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেছেন, দেশের এই ক্রান্তিকালে আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর সময়ে যারা গার্মেন্টস শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্থ করে দেশকে বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
শুক্রবার বিকেলে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার ফ্যান্টাসি কিংডম মাঠে চলমান নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা থেকে গার্মেন্টস শিল্পকে বাঁচাতে শ্রমিক-জনতার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সমাবেশ থেকে তিনি শনিবার সকালে নিজ নিজ কারখানায় কাজে যোগদানের জন্য শ্রমিকদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
ঢাকা ১৯ (সাভার আশুলিয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির সহ পরিবার কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ডা. দেওয়ান মো. সালাউদ্দিন বাবুর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন এফিবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ, বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব।
বিজিএমইএ এর সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, গত এক বছরে নানা সমস্যার কারণে প্রায় ২৭০টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এরপরও বাংলাদেশের অর্থনীতি টিকে আছে অন্যান্য কারখানায় উৎপাদন বহাল ছিল বলে। তাই আপনারা কারখানা চালু রাখেন। কারখানা চালু থাকলে আপনি বাঁচবেন, আমরা বাঁচবো, দেশ বাঁচবে। শ্রমিকদের দায়িত্ব তাদের শিল্প রক্ষা করা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, দেশের এই ক্রান্তিকালে আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর সময়ে যারা গার্মেন্টস শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্থ করে দেশকে বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে না দাঁড়ালে পোশাক-শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। আমাদের দেশ থেকে ১০ থেকে ১৫ ভাগ অর্ডার অন্যান্য দেশে চলে গেছে। আমরা অতীতেও অনেক সমস্যা অতিক্রম করে বাংলাদেশকে আজকে এখানে এনেছি। এখন নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর সময়।
বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, শনিবার থেকে আশুলিয়ার বন্ধ কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গাজীপুরের কারখানাগুলোও খুলবে। যেসব মালিক কারখানা খোলার বিষয়ে ইতিবাচক মনে করবেন, তারা খুলবেন। তিনি জানান, হা-মীম, শারমিনসহ বড় গ্রুপের কারখানাও খুলবে।
তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর তরফ থেকে আরও নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়ে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। তা ছাড়া যৌথ বাহিনীর অভিযানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে। বিশৃঙ্খলা-কারীদের তাৎক্ষণিক-ভাবে শাস্তি দেওয়ার জন্য সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ইতোমধ্যে সরকার একজন অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে ১৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি করে দিয়েছেন। কমিটিতে শ্রমিক নেতা, ব্যারিস্টার, মালিকের প্রতিনিধি, বিজিএমইএর প্রতিনিধি আছেন। শনিবার সবাই মিলে শ্রমিক নেতা এবং মালিকদের সঙ্গে বসবেন। সেখানে শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে সরকারকে অবহিত করা হবে।
সমাবেশে সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির সহ পরিবার কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ডা. দেওয়ান মো. সালাউদ্দিন বাবু বলেন, শেখ হাসিনা দেশ থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর তাঁর নেতাকর্মীরা আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে থেকে শ্রমিক আন্দোলনের কলকাঠি নাড়ছে। তাই বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীকে বলছি, আপনার এলাকায় কেউ অপরিচিত থাকলে, তাদের তথ্য যাচাই-বাছাই করুন। আপনার এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে।

তিনিও শ্রমিকদের কাজে যোগদানের আহবান জানিয়ে বলেন, আপনারা কাজ করেন, প্রয়োজনে আমরা আপনাদের দাবি নিয়ে মালিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে তা সমাধানের ব্যবস্থা করব।
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন, সাভার উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান দেওয়ান মঈন উদ্দিন বিপ্লব, হা-মীম গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক লে. কর্নেল (অব) আক্তার হোসেন, জিএম মাসুদুর রহমান, সাভার পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামানসহ বিভিন্ন কারখানার মালিক শ্রমিক ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতা কর্মীরা।