সম্প্রতি দেশে ডলারের বাজার স্থিতিশীল দেখা যাচ্ছে। অস্থিরতা নেই মুদ্রাটির বিনিময় হারে। ব্যাংক বা কার্ব মার্কেটে ডলারের সংকট অনেকটা কমেছে। রেমিট্যান্স বাড়ায় রিজার্ভ বাড়ছে। তবে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকুর) মাধ্যমে আমদানি বিল পরিশোধের পর বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, জুলাই-আগস্ট মাসে ১.৩৭ বিলিয়ন ডলারের আমদানি বিল পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পদ্ধতি বিপিএম৬ হিসাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১৯.৪৬ (১ হাজার ৯৪৬ কোটি ডলার) বিলিয়ন ডলার। আর গ্রস হিসাবে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৪.৫৩ বিলিয়ন ডলার।
ডলারের বাজার: ব্যাংকে রেমিট্যান্স পাঠালে প্রবাসীরা প্রণোদনাসহ ডলারপ্রতি ১২৩ টাকা পাচ্ছেন, যেখানে খুচরা বাজারে মিলছে ১২১-১২২ টাকায়। হুন্ডির চাহিদা কমায় খুচরা বাজারে ডলারের বিনিময় হার নিম্নমুখী বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
যদিও দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশে অস্থির ছিল বৈদেশিক মুদ্রার বাজার। ২০২২ সালের শুরুতে প্রতি ডলারের বিনিময় হার ছিল ৮৪ টাকা।

সংকট তীব্র হয়ে ওঠায় বিনিময় হার বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। গত আড়াই বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন ঘটেছে ৪২ শতাংশেরও বেশি। ডলারের দর স্থিতিশীল করতে গত মে মাসে ‘ক্রলিং পেগ’ নীতি গ্রহণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পরও সমাধান মেলেনি, ব্যাংকের ঘোষিত দরের সঙ্গে কার্ব মার্কেটে ডলারের দরের ব্যবধান ছিল ৩-১০ টাকা। কিন্তু শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ডলারের বাজার ক্রমেই স্থিতিশীল হয়ে এসেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রধান শ্রমবাজারগুলোয় হুন্ডির যে বাজার আছে, সেটির চাহিদা তৈরি হয় বাংলাদেশের অভ্যন্তর থেকে। বর্তমানে অভ্যন্তরীণ বাজারে হুন্ডির চাহিদায় বড় পতন হয়েছে। আমদানির ঋণপত্র (এলসি) কমে যাওয়ার প্রভাবে ব্যাংকেও ডলারের চাহিদা কমে গেছে।
বাজার স্থিতিশীল রাখার কথা বলে গত তিন অর্থবছর ধরে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২১-২২ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে বিক্রি করা হয় ৭৬২ কোটি বা ৭.৬২ বিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ বিক্রি আরও বাড়িয়ে ১৩.৫৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হয়। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে বিক্রি করা হয় আর ১২.৭৯ বিলিয়ন ডলার। টানা তিন অর্থবছর ধরে ডলার বিক্রির কারণে রিজার্ভে বড় ধরনের ক্ষয় হয়েছে। ২০২১ সালের আগস্টে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার। সে রিজার্ভ কমে এখন ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে এসেছে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ই আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে তিনি ভারত পালিয়ে যান। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুরকে গভর্নর পদে নিয়োগ দেয়া হয়। এর পর ক্রলিং পেগ নীতির ব্যান্ড ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করা হয়। ফলে ডলারের মধ্যবর্তী দাম ১১৭ থেকে সর্বোচ্চ ১২০ টাকা পর্যন্ত নেয়ার সুযোগ পায় ব্যাংকগুলো।
এদিকে গত ৫ই সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত বাংলা গণমাধ্যম ‘ঠিকানাতে’ প্রচারিত এক অনুষ্ঠানে কথা বলেন গভর্নর। ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বর্তমানে আমাদের প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ ২০.৫০ বিলিয়ন ডলার। এটা হচ্ছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ডেফিনেশন অনুযায়ী। গত এক সপ্তাহে ৩০০ মিলিয়ন ডলার রিজার্ভ বেড়েছে উল্লেখ করে আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক একটি ডলারও বাজারে বিক্রি করেনি আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর; বরং প্রতিনিয়ত আমরা ডলার কিনছি রিজার্ভ বাড়াতে। এখন প্রতিদিন ৫০ মিলিয়ন ডলার করে বাজার থেকে কেনা হচ্ছে।
