ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্রোকারেজ হাউজগুলোর মধ্যে অন্যতম এআইবিএল ক্যাপিটাল মার্কেট সার্ভিসেস লিমিটেডে। প্রতিষ্ঠানকে এক অনন্য উচ্চতায় নিতে অক্লান্ত পরিশ্রম ও নানা পরিকল্পনায় বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. সোহেল রানা। সম্প্রতি শেয়ারবাজারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিজনসে আই বাংলাদেশের সাথে মতবিনিময় করেছেন তিনি। সেই মতবিনিময়ের কিছু অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. মির হোসেন সরকার।
বিজনসে আই বাংলাদেশ : আপনার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে চাই
সোহেল রানা : এআইবিএল ক্যাপিটাল মার্কেট সার্ভিসেস লিমিটেড এটি আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের সহযোগী সংগঠন। আমাদের পে ড্রাফ হচ্ছে ৪০০ কোটি টাকা, অথরাইজড ১ হাজার কোটি টাকা।
বিজনসে আই বাংলাদেশ : বিনিয়োগ কারীদের জন্য এই মুহূর্তে আপনার পরামর্শ কি?
সোহেল রানা : বিনিয়োগ করতে হবে মৌলভিত্তিক। আমাদের দেশে বিনিয়োগের একটা পলিসি আছে। যেমন- একজন বলছে তার কথা শুনে অন্যজন বিনিয়োগ করছে, এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ইনভেস্ট পলিসি বলতে ইনভেস্টমেন্ট থাকতে হবে। নিজের যা টাকা আছে তার দেখা যায় যেটা আইডিয়াল মানি পড়ে আছে ওইটা ইনভেস্টমেন্টে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে কারো যদি ১০০ টাকা আইডিয়াল মানি থাকে তার ৫০ টাকা মৌলভিত্তিক শেয়ারে বিনিয়োগ করবে। বাকি ২৫ টাকা সে হয়তোবা রানিং কোনো আইটেমের ওপর থাকতে পারে। আর বাকি ২৫ টাকা রিজার্ভে রাখবে। বিনিয়োগকারী যে শেয়ার কিনছে সেটা যদি ডাউনটেনে চলে যায় তখন সে সেই রিজার্ভের টাকা আবার বাইব্যাক করবে। এভাবেই আসলে আমাদের বিনিয়োগে যাওয়া উচিত। ব্যাংক থেকে ধার করে, লোন নিয়ে বিনিয়োগে যাওয়া ক্যাপিটাল মার্কেটের পলিসির সাথে যায় না।
বিজনসে আই বাংলাদেশ : ভালো আইপিও বাজারের জন্য কতটা অপরিহার্য বলে আপনি মনে করেন?
সোহেল রানা : ভালো আইপিও অবশ্যই বাজারের জন্য অপরিহার্য। ভালো আইপিও আসা মানে নতুন নতুন বিনিয়োগ আসা। আমরা রবির এবং জিপির সময় দেখেছি অনেক বিনিয়োগ এসেছিলো। ভালো আইপিও আসলে শুধু যে লোকাল বিনিয়োগ আসে তা নয়, বিদেশি বিনিয়োগও আসে। সেটা যদি ভালো আইপিও হয়। ভালো আইপিও বলতে আমরা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো কথা বলছি। এখনো অনেক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেটের বাইরে আছে। এরা যদি আসে আমি মনে করি বিদেশি এবং লোকাল বিনিয়োগ অনেক বাড়বে।
বিজনসে আই বাংলাদেশ : পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল করার লক্ষ্যে বিএসইসি’র পক্ষ থেকে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা যথেষ্ট বলে আপনি কি মনে করেন?
সোহেল রানা : রেগুলেটরির যে উদ্যোগ গত ১০-১৫ বছরে নেওয়া হয়েছে তা যথেষ্টই। তারপরও যথেষ্ট বলে তো কিছু থাকে না। আসলে মার্কেটের পরিস্থিতি অনুযায়ী অনেক সময় রুলস রেগুলেশন পরিবর্তন করতে হয়। সেক্ষেত্রে এটা হয়তোবা চলমান প্রক্রিয়া থাকবে। তবে গত ১৫ বছরে ক্যাপিটাল মার্কেট সংস্কারের জন্য বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যে ডুয়েলস রেগুলেশন নেওয়া হয়েছে এটা যথেষ্ট,ক্যাপিটাল মার্কেটের জন্য ও সহায়ক।
বিজনসে আই বাংলাদেশ : ক্যাপিটাল মার্কেট সবসময়ই ঝুঁকিপূর্ণ, নিরাপদ বিনিয়োগের উপায় কি?
সোহেল রানা : আমি যে ইনভেস্টমেন্ট পলিসির কথা বলবো এভাবে যদি ইনভেষ্ট করে তাহলে প্রফিট আসবে কম, কিন্তু লুজার হবে না। যেমন কারো যদি আইডিয়াল মানি থাকে ১০০ টাকা এরমধ্যে ৫০ টাকা ফান্ডামেন্টাল শেয়ারে বিনিয়োগ করবে। বাকি ২৫ টাকা রানিং কোনো আইটেমের ওপর থাকতে পারে আর বাকি ২৫ টাকা রিজার্ভ রাখবে। বিনিয়োগকারী যে শেয়ার কিনছে সেটা যদি ডাউনটেনে চলে যায় তখন সে সেই রিজার্ভের টাকা আবার বাইব্যাক করবে।
বিজনসে আই বাংলাদেশ : ক্যাপিটাল মার্কেট চাঙ্গা করার কৌশল হিসেবে আপনার মতামত জানতে চাই
সোহেল রানা : ক্যাপিটাল মার্কেট চাঙ্গা করার জন্য এরইমধ্যে বেশিকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এরমধ্যেও যেটা করা যেতে পারে, ভালো কিছু আইপিও আনা যেতে পারে। এছাড়াও আমাদের ইনভেস্টমেন্ট পলিসি কিছু পরিবর্তন করা দরকার। আমাদের যেসব অডিট রিপোর্টগুলো আছে সেগুলো স্বচ্ছভাবে প্রকাশ নিশ্চিত করা ।একটি শেয়ার কোম্পানির অডিটর কারা থাকে এই বিষয়গুলো ভবিষ্যতে খেয়াল করা প্রয়োজন। যদিও সম্প্রতি অডিটরদের একটা তালিকা দেওয়া হয়েছে। যেমন- কারা অডিটর তালিকায় থাকবে, এরাই অডিটর রিপোর্ট করতে পারবে। আমাদেরও আসলে দেখা উচিত যেসব কোম্পানির ক্ষেত্রে একাউন্টস বিশেষ করে স্বচ্ছভাবে থাকে, এইগুলো যদি থাকে; তাহলে দেখা যাবে ক্যাপিটাল মার্কেটে মানুষ প্রতারণার শিকার হবে কম। আর বিনিয়োগকারীরা ক্যাপিটাল মার্কেটে প্রতারণার শিকার কম হলে এই মার্কেটের ওপর তাদের আস্থা বাড়বে। আস্থা সংকটের কারণেই কিন্তু মার্কেটে এই অবস্থা। অবশ্যই মার্কেটের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়াতে হবে। সাধারণ মানুষের প্রতি আস্থা বাড়াতে বেশিকিছু উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি। আরও কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
বিজনসে আই বাংলাদেশ : মাঝেমধ্যেই সোস্যাল মিডিয়ায় পুঁজিবাজার নিয়ে গুজব রটানো হয়। যা পুঁজিবাজারের জন্য নেতিবাচক। ফলে বাজারের প্রতি অনেক বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এ বিষয়ে আপনার কোনো মতামত আছে কি না?
সোহেল রানা : আইনের মাধ্যমে গুজব বন্ধ করা উচিত। সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে বেশিরভাগ সময়েই অপ্রচার চালোনো হয়। ফলে বিনিয়োগকারীরা কিন্তু ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে অ্যাকশন নেওয়া উচিত। যদিও কিছু অ্যাকশন নিয়েছে বিএসইসি। তারপরও আরও বেশি জোড়ালো পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত বলে আমি মনে করি।
বিজনসে আই বাংলাদেশ : আপনার প্রতিষ্ঠানের ভিশন নিয়ে কিছু বলুন
সোহেল রানা : আমরা যেহেতু একটা ব্রোকারেজ হাউজ। তাই আমাদের কাজ গ্রাহকের বিনিয়োগ সুরক্ষিত রাখা। এসব ক্ষেত্রে আমরা স্মার্ট কিছু কিছু প্রডাক্টের চেষ্টা করছি। যেমন- ওএমএস সিষ্টেম চালু। প্রতিটা ট্রান্সজেকশনের সাথে সাথে যেন একজন গ্রাহক এলার্ট পায়। আমাদের মাধ্যমে একজন গ্রাহক যখন ইনভেস্ট করবে, সেই বিনিয়োগ যেন তার সুরক্ষিত থাকে। কোনোরকম সে যেন প্রতারণার শিকার না হয়। এক্ষেত্রে আমরা কিছু স্মার্ট আইডিয়া নিয়ে আসছি। ওএমএস-এর সাথে সাথে কিছু কিছু জিনিস থাকবে। যেমন- অনস্টপ সার্ভিসের মতো আমরা চিন্তা করছি। যেন অনলাইনের মাধ্যমে একাউন্ট চালু থেকে শুরু করে ট্রেড করে কনফারমেশন এবং টাকা উত্তোলন; সবকিছু অনলাইনে বসেই করতে পারে। এমন একটি সিস্টেম অনস্টপ সার্ভিস চালু করছি।