মাননীয় অর্থমন্ত্রী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার একটি সময়োপযোগী ও ব্যাপক আকারের বাজেট সংসদে পেশ করেছেন। প্রস্তাবিত বাজেট আমাদের জিডিপির ১৫.২ শতাংশ। বাজেটে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭.৫ শতাংশ। চ্যালেঞ্জ থাকলেও, এই যুগোপযোগী বাজেট জাতির জনকের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা’র যোগ্য ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাস্তবায়ন সম্ভব বলে আমরা মনে করি।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বৈশ্বিক সংকট, ডলার সংকট, ব্যবসা-বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে মন্দা এবং অন্যান্য বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা থাকা সত্ত্বেও সরকার ২,৭৭,৫৮২ কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ নিয়েছে যা আমাদের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের এগিয়ে যাওয়ার জন্য অত্যন্ত উৎসাহজনক পদক্ষেপ। অবকাঠামো খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্ধকৃত বাজেট সরকারের নেওয়া একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ এবং কার্যকর উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে টেকসই বাজেট উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন ।
কর-জিডিপি অনুপাতের উন্নতির জন্য করের নেট সম্প্রসারণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কর নেট সম্প্রসারণে সরকারকে আরও পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি যে Document Verification System (DVS) ব্যবস্থা বাস্তবায়নে এনবিআর এবং আইসিএবির ডিভিএস এর ন্যায় যৌথ উদ্যোগ কাঙ্খিত রাজস্ব অর্জনে সহায়তা করবে। আমরা বিশ্বাস করি যে এই উদ্যোগটি আর্থিক ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা আনবে। কর সংস্কার ও কর জিডিপি অনুপাতের উন্নতি এবং রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধিতেও অবদান রাখবে। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে বাজেট বক্তৃতায় সরকারের রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আইসিএবি ও এনবিআর কর্তৃক ডিভিএস বাস্তবায়নের ভূমিকা গুরুত্বের সাথে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। আমরা অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই এই স্বীকৃতি প্রদান করার জন্য যে, DVS উদ্যোগটি করদাতা সংস্থার দ্বারা প্রদর্শিত আয়ের সত্যতা এবং স্বচ্ছতা বাড়িয়েছে।
আইসিএবি-এর বাজেট প্রস্তাবনা
বিগত বছরগুলোর ন্যায় এই বছরেও আইসিএবি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ২০২৩-২০২৪ বাজেট সংক্রান্ত রাজস্ব আইনের যেমন- আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ ও আয়কর বিধি ১৯৮৪, মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২ এবং মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক বিধিমালা ২০১৬-সহ অন্যান্য আইন ও বিধির উপর প্রস্তাবণা প্রেরণ করেছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে বেশ কিছু বাস্তবতা ভিত্তিক উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আমরা সরকারের প্রশংসা করছি। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে-
১। পরিবেশ সারচার্জ প্রবর্তন যা আমাদের পরিবেশকে রক্ষা করবে, যানবাহনের সংখ্যা কমাবে এবং পাবলিক ট্রান্সপোর্টের ব্যবহার বাড়বে;
২। একাধিক যানবাহনে বিভিন্ন সিসি বা কিলোওয়াট-ভিত্তিক পরিবেশগত সারচার্জ আরোপ;
৩। ব্যবসা সহজীকরণের লক্ষ্যে, “মার্কেট প্লেস”কে “পণ্যের অনলাইন বিক্রয়” এর সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা;
৪। আমদানি বিকল্প পণ্য উৎপাদন উৎসাহিতকরণ এবং স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে করের বোঝা কমাতে “অপটিক্যাল ফাইবার কেবল” উত্পাদন পর্যায়ে ৫% এর বেশি ভ্যাট ছাড়ের প্রস্তাব;
৫। রিবেট বা রেয়াত গণনার অস্পষ্টতা দূর করার জন্য আংশিক রিবেটের সূত্রে পরিবর্তন;
৬। বন্ডেড পণ্যের ছাড়পত্রের জন্য প্রাক্তন বন্ড বিল অফ এন্ট্রি জমা দেওয়া এবং সেইসাথে এটিকে চূড়ান্ত মীমাংসা করণের জন্য বিল অফ এন্ট্রির সংজ্ঞা প্রতিস্থাপন করা;
৭। স্থানীয় শিল্প রক্ষার জন্য কিছু পণ্য আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধির জন্য গৃহীত উদ্যোগ।
চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টদের ভূমিকা
চার্টার্ড একাউন্টেন্টগণ সরকারের রাজস্ব আহরনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। চার্টার্ড একাউন্টেন্টগণ কর পরিকল্পনা করার ক্ষেত্রে, কর পরামর্শক হিসেবে, কর আইনের সঠিক প্রতিপালন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে করদাতা ও সরকারকে সহায়তা করে থাকে। সর্বোপরি রাজস্ব আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে চার্টার্ড একাউন্টেন্টদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। দেশে এফডিআই আনা এবং উদ্যোক্তাদেরকে নতুন নতুন ব্যাবসায়ে উৎসাহিত ও পরামর্শ প্রদান করা, ব্যবসা করার সহজতা নিশ্চিত করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনীতিতে অবদান রাখতে বিশেষ মতামত প্রদানের মাধ্যমে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসগণ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে সহায়তা করে আসছেন।
উল্লেখ যে, আইসিএবি নিরপেক্ষভাবে দেশের কল্যাণে সর্বদাই বিভিন্ন নীতি পরিকল্পনায় মতামত নিয়ে আসছে এবং এ সমস্ত মতামত অত্যন্ত কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। আমরা মনে করি, আমাদের প্রিয় সাংবাদিকগণও তাদের কর্মক্ষেত্র থেকে দেশ ও জাতির সার্বিক উন্নয়নে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। এই দেশ আমাদের সকলের। দেশের উন্নয়নে ও অগ্রযাত্রায় আইসিএবি ও আইসিএবি’র সদস্যগণের এইসব নানাবিধ উদ্যোগ ও কার্যকর ভূমিকা আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরা হলে আমরা যেমন কৃতজ্ঞ থাকব, অন্যরাও তাতে দেশের উন্নয়নে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্র থেকে যথাযথ ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে উৎসাহিত হবে।