ঢাকা, রবিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৫, ৫:০৪ অপরাহ্ন

লিভার সিরোসিস কেন হয়?

লিভার সিরোসিস একটি মারাত্মক রোগ, যা প্রায় অনিরাময়যোগ্য। লিভারের নানা রোগের মধ্যে এটিকে চূড়ান্ত পর্যায়ের একটি রোগ বলে গণ্য করা হয়। এ রোগে আক্রান্ত হলে যকৃতের ট্রান্সপস্নান্ট বা প্রতিস্থাপন ছাড়া পুরোপুরি আরোগ্য হয় না। ফলে এ রোগের চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধের প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। এ দেশে এই রোগে কত আক্রান্ত হয়েছে তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে ধারণা করা হয়, দেশের হেপাটাইটিস বি এবং সি রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এক কোটিরও বেশি। তাদের পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ রোগী লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। সেই হিসাবে দেশে প্রায় ১০ লাখ মানুষ লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত বলে ধারণা করা হয়।

লিভার সিরোসিস কী?

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, যখন লিভার রোগের নানা পর্যায়ের পর কোষগুলো এমনভাবে আক্রান্ত হয় যে, লিভার আর কাজ করতে পারে না, সেই পর্যায়কে লিভার সিরোসিস বলে বর্ণনা করা হয়। যখন এই রোগে আক্রান্ত হয় তখন লিভার বা যকৃৎ তার স্বাভাবিক কাজগুলো, যেমন- বিপাক ক্রিয়া, রক্ত জমাট বাঁধার উপকরণ তৈরি, ওষুধ ও রাসায়নিকের শোষণ, খাদ্যের পুষ্টি উপাদানের ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি করতে পারে না।

লিভার সিরোসিস হলে লিভার বা যকৃতে সূক্ষ্ণ সুতার জালের মতো ফাইব্রোসিসের বিস্তার ঘটে। যকৃতে তখন ছোট ছোট দানা বাঁধে। আস্তে আস্তে সেটির বিস্তার ঘটতে থাকে। ফাইব্রোসিস ছড়িয়ে পড়লে সেখানে আর লিভার নিজেকে পুনরুদ্ধার করতে পারে না, ফলে লিভার সংকুচিত হয়ে পড়ে।

লিভার সিরোসিস কেন হয়?

ন্যাশনাল লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী বলেছেন, বি সি এবং ডি ভাইরাসের আক্রমণে লিভারে প্রদাহ তৈরি হয়। লিভারে প্রদাহ তৈরি করে বলেই একে বলা হয় হেপাটাইটিস, ফলে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে।

দীর্ঘদিন ধরে বি এবং সি ভাইরাসের আক্রমণে লিভার বা যকৃতের কার্যক্রম সংকুচিত হয়ে যায়, কার্যক্রম আস্তে আস্তে ব্যাহত হয়। এরপর একেই লিভার সিরোসিস বলা হয়ে থাকে। এছাড়া আরও কয়েকটি কারণে লিভার সিরোসিস হতে পারে বলে তিনি জানান।

এ রকম একটি বড় কারণ ফ্যাটি লিভার বা যকৃতে চর্বি জমে যাওয়া। দীর্ঘদিন ধরে লিভারে যদি মাত্রাতিরিক্ত চর্বি জমে তাহলে লিভারের কার্যকারিতা হ্রাস পায়। এক সময় এর জন্যও লিভার সিরোসিস হতে পারে।

অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা পৃথিবীতে ফ্যাটি লিভার আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। আগামী ১৫ বছর পর লিভার সিরোসিসের বড় কারণ হবে ফ্যাটি লিভার। আর এদের অন্তত ২০ শতাংশ লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হতে পারে।’ দেশের বাসিন্দাদের অন্তত ২০ শতাংশ মানুষ ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত বলে সরকারি পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে। এদের মধ্যে ১৫ শতাংশের নন-অ্যালকোহলিক হেপাটাইটিস জটিলতা রয়েছে।

এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, স্থূলতা, খাদ্যাভ্যাস, রক্তে কোলোস্টেরল ইত্যাদি কারণে ফ্যাটি লিভার হতে পারে।

অতিরিক্ত মদ্যপান, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ইচ্ছামতো ওষুধ খাওয়া, রাস্তাঘাটে বিক্রি হওয়া দূষিত পানীয়, ব্যবহার করা বরফ, খোলা শরবত বা ফলের মাধ্যমে যকৃতের রোগ ছড়াতে পারে। লিভার সিরোসিস আর লিভারের ক্যানসার এক রোগ নয়। তবে লিভার সিরোসিস থেকে লিভারের ক্যানসার হতে পারে।

নিউজটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

ট্যাগঃ