এ বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) বিশ্বব্যাপী স্বর্ণ উত্তোলনের গতি শ্লথ হয়ে পড়ে। করোনা মহামারীর ডেল্টা ধরনের কারণে খনিগুলোতে শ্রমিক সংকট শুরু করে নানা প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। তবে বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বহুমুখী জটিলতা কাটিয়ে উঠছে শীর্ষ উত্তোলন কোম্পানিগুলো। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে বছর শেষে শীর্ষ ১০ কোম্পানির উত্তোলন ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা রয়েছে। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় তথ্য সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ডেটার প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
কোম্পানিগুলো হলো নিউমন্ট, ব্যারিক, পলিয়াস, অ্যাংলোগোল্ড এশান্তি, কিনরোস, গোল্ড ফিল্ডস, নিউক্রেস্ট, অ্যাগনিকো ঈগল, কিরকল্যান্ড লেক গোল্ড ও পরিমেটাল ইন্টারন্যাশনাল।

গ্লোবাল ডেটার সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) বিশ্বের শীর্ষ ১০ স্বর্ণ উত্তোলন কোম্পানির স্বর্ণ উত্তোলন প্রথমার্ধের তুলনায় ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়তে পারে। এ সময় উত্তোলনের পরিমাণ দাঁড়াবে ১ কোটি ৪৯ লাখ আউন্সে। বছরের প্রথমার্ধে কোম্পানিগুলো ১ কোটি ৩১ লাখ আউন্স স্বর্ণ উত্তোলন করেছিল।
গ্লোবাল ডেটার সহযোগী প্রকল্প ব্যবস্থাপক বিনিথ বাজাজ বলেন, বছরের প্রথম ছয় মাসে বিশ্বের শীর্ষ ১০ কোম্পানির সম্মিলিত স্বর্ণ উত্তোলন গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ১ শতাংশ কমে গিয়েছিল। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ওই সময় খনিগুলোয় আকরিক গ্রেড কমে গিয়েছিল। এছাড়া মহামারী থেকে পুনরুদ্ধারের গতি মন্থর হওয়ায় কোম্পানিগুলো তাদের সম্পদ বিক্রি করে দিচ্ছিল। কারখানাগুলোয় উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণের হারও কমে যায়। তবে বছরের দ্বিতীয়ার্ধের চিত্র ভিন্ন। প্রবৃদ্ধির ধারায় হাঁটছে উত্তোলন। যদিও চলতি বছরের মোট উত্তোলন অপরিবর্তিত থাকবে বলে মনে করছেন তিনি। তার মতে, মোট বার্ষিক উত্তোলন দাঁড়াবে ২ কোটি ৭০-৮০ লাখ আউন্স।
১০ শীর্ষ কোম্পানির মধ্যে বছরের প্রথমার্ধে সবচেয়ে বেশি উত্তোলন করেছিল অ্যাগনিকো ঈগল। এ সময় কোম্পানিটির মিলিং ও মাইনিং রেট বেড়ে যায়। মিডোব্যাংক কমপ্লেক্সে আকরিক গ্রেডের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। মিলিয়াডাইন সাইটে উত্তোলন ও প্রক্রিয়াকরণের হার সর্বোচ্চে ওঠে।

বছরের প্রথমার্ধে সবচেয়ে বড় ধস নামে তিন কোম্পানির উত্তোলনে। এর মধ্যে অ্যাংলোগোল্ড এশান্তির উত্তোলন ৬ দশমিক ১, ব্যারিকের উত্তোলন ১২ দশমিক ৯ ও নিউক্রেস্টের উত্তোলন ৭ দশমিক ১ শতাংশ কমে যায়। প্রথমার্ধে কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত উত্তোলন ৪৪ লাখ আউন্সে পৌঁছে। গত বছরের প্রথমার্ধে উত্তোলনের পরিমাণ ছিল ৫০ লাখ আউন্স।
এদিকে চলতি বছর পাঁচটি দেশের স্বর্ণ উত্তোলন বাড়বে বলে গ্লোবাল ডেটার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। দেশগুলো হলো চীন, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা। এসব দেশের মোট উত্তোলন ৫ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে ৫ কোটি ৮ লাখ আউন্সে পৌঁছতে পারে।
২০১৪ সালে চীনের স্বর্ণ উত্তোলন সর্বকালের সর্বোচ্চে উঠেছিল। এরপর দেশটির উত্তোলন কমে যায়। তবে চলতি বছর উত্তোলন ৪ শতাংশ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইন্দোনেশিয়ায় উত্তোলন ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়তে পারে। দেশটির গ্রাসবার্গ বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ স্বর্ণ উত্তোলন খনির একটি। খনিটি থেকে উত্তোলন বাড়ায় দেশীয় উত্তোলনে প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কানাডা ও পশ্চিম আফ্রিকার উত্তোলনও বাড়ার প্রত্যাশা করছেন বাজার-সংশ্লিষ্টরা।