অবকাঠামোগত সংকটের কারণে নদীপথে পণ্য পরিবহন জনপ্রিয় হচ্ছে না; বরং সড়ক নির্ভরতা বাড়ছে। এতে ব্যবসায়ীদের ব্যয় ও সময় নষ্ট হচ্ছে।
দেশের আমদানি ও রপ্তানির প্রধান গেটওয়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানিকৃত ৮০ শতাংশ শিল্পের কাঁচামাল ও পণ্য নদীপথে পরিবহন করা হয়। বিপরীতে রপ্তানি পণ্য কিংবা কারখানায় উৎপাদিত পণ্যের ২০ শতাংশও অভ্যন্তরীণ নদীপথে পরিবাহিত হয় না। যদিও সড়কপথের তুলনায় নদীপথে খরচ ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ কম।
দেশের নৌপথে পণ্য পরিবহনে হাজারের অধিক লাইটার জাহাজ আছে। আর এসব জাহাজ পরিচালনায় আছে জাহাজ মালিকদের সংগঠন ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল। সংস্থাটি বিভিন্ন গন্তব্যে পণ্য পরিবহনে চাহিদা মতো জাহাজ বরাদ্দ দেয়। তাদের সূত্রে জানা যায়, একটি লাইটার জাহাজে সাধারণত দেড় থেকে দুই হাজার টন পণ্য পরিবাহিত হয়। আর চট্টগ্রাম থেকে নদীপথে নারারায়গঞ্জ এলাকায় এক টন পণ্য পাঠাতে খরচ হয় ৫৪৮ টাকা। একইভাবে ভোলা, চাঁদপুর, ভৈরব, মদনপুর, বাঘাবাড়িসহ ঢাকার আশেপাশে কম খরচে দ্রুত সময়ে পণ্য পৌঁছানো যায়।

অন্যদিকে লরি ও কাভার্ডভ্যান মালিকদের সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম থেকে নারায়াণগঞ্জ এলাকায় লরিতে এক টন পণ্য পাঠাতে এক হাজার ৮০০ থেকে ২০০০ টাকা খরচ হয়। আর একটি লরিতে ১৩ টনের বেশি পণ্য পরিবহন করা যায় না। কারণ মীরসরাইয়ের বাড়াইয়াহাটে ওজনস্কেল বসানো আছে। অথচ এ ধরনের ওজন স্কেল দেশের আর কোনো সড়কে নেই। এটা চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক বলে সশ্লিষ্টরা বলেন।
জাহাজ মালিকদের সংগঠন ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের নির্বাহী পরিচালক মাহবুব রশিদ খান বলেন, বন্দর দিয়ে আমদানিকৃত ভোগ্যপণ্য ও সিমেন্ট, ইস্পাতের কাঁচামাল ও শিল্পপণ্য সহজে নির্দিষ্ট গন্তব্যে লাইটারিং করে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে জিপিএইচ ইস্পাতের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলমাস শিমুল বলেন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে সড়কপথে অনেক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা যদি আমাদের উৎপাদিত পণ্য নদীপথে নারায়ণগঞ্জ, ভোলা, চাঁদপুর, আশুগঞ্জ, ভৈরব প্রভৃতি জায়গা পাঠাতে পারি, তাহলে আমাদের পরিবহন ব্যয় ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ কমে আসবে। এতে সড়ক থেকে অপ্রয়োজনীয় ভারী গাড়ির সংখ্যা কমবে। আর নৌপথে অধিক পণ্য পরিবহনের কারণে টনপ্রতি তিন হাজার টাকা কমে ভোক্তারা পণ্য কিনতে পাবে। তাই জলপথকে আকর্ষণীয় করতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে একাধিক জেটি, টার্মিনাল ও নৌবন্দর গড়ে তোলার প্রয়োজন।
