বাংলাদেশে যে কোন পণ্য কিনতে গেলে ক্রেতাদের ঐ পণ্যের দামের সঙ্গে দিতে হয় ভ্যাট- সে খাদ্যদ্রব্য হোক বা হোক পোশাক কিম্বা ইলেকট্রনিক পণ্য।
কিন্তু অনেক ক্রেতাই এই দাম পরিশোধের সময় ভ্যাট দেন কিন্তু তারা জানেন না তাদের দেয়া অর্থটা সরকারের কোষাগারের আদৌ জমা হচ্ছে কিনা। ফারজানা ববি তাদের একজন।

তিনি বলছেন ‘রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে বা শপিংমলে কেনাকাটা করলে অনেক টাকার ভ্যাট দিতে হয়। এই ভ্যাট আমি দিচ্ছি কিন্তু আমাকে যে কপি দেয়ার কথা সেটা তারা দিচ্ছে না। ফলে আমার কাছে কোন প্রমাণ থাকছে না যে আমি ভ্যাট দিয়েছি। আর সেটা সরকারের কাছে যাচ্ছে কিনা সেটা নিয়েও আমার সন্দেহ আছে।’
বাংলাদেশে ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড.মইনুল খান জানান চারটা দল ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও সাভারের ৮টি মার্কেটে এবিষয়ে জরিপ পরিচালনা করেছে।
এই জরিপে মোট দোকান পাওয়া যায় ১০২৪টি। এদের মধ্যে মোট ভ্যাট নিবন্ধিত দোকানের সংখ্যা ১২০টি; ভ্যাট দেয় না ৯০৪টি।

মি. খান জানান ‘ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের সাথে যেসব রিটেল সেক্টর আছে তাদের বাস্তব অবস্থাটা কী, তারা কি ভ্যাটের আওতাভুক্ত হয়েছে, হলে ভ্যাট যথাযথভাবে দিচ্ছে কিনা, এই বিষয়টা আমরা তুলে ধরার চেষ্টা করছি এই জরিপের মাধ্যমে।’
ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর বলছে কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা গেছে, এদের প্রায় সকলে ক্রেতার নিকট হতে ভ্যাট আদায় করে। কিন্তু তারা যথাযথভাবে সরকারের কোষাগারে ভ্যাট পরিশোধ করে না।
নতুন ভ্যাট আইনও বাস্তবায়ন হয়েছে দুই বছর হয়েছে।কিন্তু এই দীর্ঘ সময়েও জরিপে প্রাপ্ত ৮৮% প্রতিষ্ঠান ভ্যাট এর আওতায় আসেনি।
বাংলাদেশে দোকান মালিক সমিতির হিসেব অনুযায়ী দেশে ৫৬ লক্ষ ক্ষুদ্র ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
সমিতির সভাপতি মো.হেলাল উদ্দিন বলছেন দেশের প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন করার সঙ্গে সঙ্গে ইলেকট্রনিক ফিসকল ডিভাইস বা ইএফডি বসাতে হবে যাতে করে সব পক্ষের বিভ্রান্তি দূর হয়।
‘ভ্যাট আইনে একটা বিষয় বলা আছে যে আপনি যদি নিবন্ধন করেন তাহলে আপনাকে রিটার্ন সাবমিট করতে হবে, না হলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। সেই ক্ষেত্রে জরিমানা হচ্ছে। মানুষ এখন এমন একটা বিভ্রান্তিকর অবস্থার মধ্যে আছে যে আমরা এনবিআরকে কিছু বলতে পারছি না। কারণ এই জরিমানা মওকুফের এখতিয়ার এনবিআর-এর চেয়ারম্যানকেও দেয়া হয় নি।’
ভ্যাট আইন অনুসারে যে কোন ভ্যাটযোগ্য ব্যবসা শুরু করার পূর্বেই নিবন্ধন গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক।
মার্কেটগুলোতে খুচরা পর্যায়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ৫% হারে ভ্যাট সংগ্রহ করে প্রতি মাসের ভ্যাট পরবর্তী মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে স্থানীয় ভ্যাট সার্কেলে রিটার্ন জমা দেয়ার বিধান রয়েছে।
মো.হেলাল উদ্দিন বলছেন, ‘ভোক্তা ভ্যাট দেবে, ভ্যাট কিন্তু ব্যবসায়ী দেবে না। অতএব ভোক্তা ভ্যাট দেয়ার যে আবকাঠামো সেটা উন্নত করতে হবে। সেটা উন্নত করার একমাত্র পথ হচ্ছে প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রনিক ফিসকল ডিভাইস স্থাপন করা। একই দিনে তারা ভোক্তাদের বলে দেবে তোমরা এখন থেকে ভ্যাট দাও। তাহলে সব কিছু একটা সিস্টেমের মধ্যে আসবে।’
জরিপ প্রতিবেদন বলছে, রাজধানীর চেয়ে ঢাকার বাইরের প্রতিষ্ঠানগুলোর ভ্যাট প্রদানে অনীহা বেশি। এসব এলাকায় ভ্যাট আইন পরিপালন অপেক্ষাকৃত কম।
এনবিআরের নির্দেশে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর এই বিশেষ জরিপ করছে। এই লক্ষ্যে ৪টি জরিপ দলও গঠন করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।
ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর জরিপের এই ফলাফল এনবিআরের চেয়ারম্যানের নিকট প্রতিবেদন আকারে জমা দিবে।
এর উপর ভিত্তি করে এনবিআর কর্মকৌশল নির্ধারণ করবে। ভ্যাটযোগ্য ব্যবসাকে করের আওতাভুক্ত করা এবং যথাযথ আইনী প্রক্রিয়ায় সরকারের রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই এই জরিপ। সূত্র: বিবিসি বাংলা।