ঢাকা, রবিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৫, ৪:১৯ পূর্বাহ্ন

জনসংযোগ প্রতিষ্ঠানের আয়না: সফিকুল ইসলাম

সফিকুল ইসলাম পিআর ও ব্র্যান্ডিং শিল্পের একটি আইকনের নাম। পিআর শিল্পে তার জনপ্রিয়তা অনস্বীকার্য। তিনি একজন গল্পকার, লেখক, এবং বিপণন পেশাদার। বর্তমানে তিনি গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের যোগাযোগ ও ব্র্যান্ডিং বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন।

ব্র্যান্ড এবং বিপণন যোগাযোগে ১৮ বছরেরও বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সফি একাধিক বিজ্ঞাপনী সংস্থা ও ব্যাংকে বিপণন ও যোগাযোগের সক্ষমতা নিয়ে কাজ করেছেন এবং করছেন। কথা বলতে ভালোবাসেন, বেশি ভালোবাসেন শুনতে। আমরা বিশ্বাস করি, তার এই দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার কথপোকথন এবং দিক-নির্দেশনা তরুণদের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করবে। প্রতিযোগিতামূলক এই গ্লোবাল সুপার মার্কেটে টিকে থাকতে হলে যোগ্যতা দিয়েই টিকে থাকতে হবে। নামতে হবে বাজার দখলের লড়াইয়ে। প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলো নিজেদের শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে প্রতিনিয়ত নিচ্ছে অভিনব পদক্ষেপ। এরই ধারাবাহিকতায় ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে ব্র্যান্ড এবং মার্কেটিং বিভাগে কাজ করার সুযোগ। রয়েছে টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ, রয়েছে বর্ণাঢ্য জীবনের হাতছানি। ব্র্যান্ড এবং মার্কেটিং বিভাগে চাকরির সুযোগ-সুবিধা এবং চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করবার সাহস নিয়ে সাম্প্রতিক দেশকালের সাথে কথা বলেছেন সফিকুল ইসলাম মিলটন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাম্প্রতিক দেশকালের মার্কেটিং ম্যানেজার শাহিন আহমেদ।

জনসংযোগ বা পাবলিক রিলেশন বা পিআর কি? একজন জনসংযোগ কর্মকর্তার সফলতার জন্যে কি কি গুণাবলি থাকা জরুরি?

জনসংযোগ আপনার ব্র্যান্ডের খ্যাতি বাড়াতে সঠিক স্থান এবং লোককে সঠিক বার্তাটি প্রেরণ করতে সাহায্য করে। বেশিরভাগ নির্বাহীরা জনসংযোগকে নিখরচার বিজ্ঞাপন বলে মনে করেন। তবে এটা সত্য যে এটি বিজ্ঞাপনও নয়, নিখরচায়ও নয়। প্রকৃতপক্ষে, এটি কীভাবে ব্যবহৃত হবে তার উপর নির্ভর করে। এটি ব্যয়বহুল, খুব ব্যয়বহুল হতে পারে, কারণ এটি সময় সাশ্রয়ী এবং শ্রম নিবিড় একটি প্রক্রিয়া। যদিও সবাই জনসংযোগ শব্দটির সাথে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে কিন্তু সবাই এর অর্থ সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারে না।

একটি প্রতিষ্ঠানের সার্ভিস, প্রডাক্ট এবং ফ্যাসিলিটিগুলোকে আরো সঠিক এবং কার্যকর পদ্ধতির মাধ্যমে ভোক্তা বা উপভোক্তার কাছে তুলে ধরতে পাবলিক রিলেশনের ভূমিকা অনস্বীকার্য়। একজন পিআর পেশাদারকে হতে হবে একজন তুমুল গল্পকার, দার্শনিক এবং সমকালীন। জনসংযোগ এমন একটি ক্ষেত্র যা আপনার ব্যবসায়ের পট পরিবর্তন করে দিতে পারে। পিআর যখন সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয়, তখন তা একটি সংস্থা তৈরি বা ভেঙে ফেলতে পারে – এটি প্রায় যেকোনো বাধা অতিক্রম করার শক্তি দেয়। জনসংযোগ একটি প্রতিষ্ঠানের আয়না এবং সেই আয়নাতেই ভেসে বেড়ায় প্রতিষ্ঠানের প্রতিচ্ছবি। মনে রাখতে হবে দেখানোটা বড় বিষয় নয়, কি দেখাচ্ছি, কোথায় এবং কিভাবে দেখাচ্ছি এটাই বড় বিষয়।

আরও পড়ুন

ব্যাংক লেনদেনের সময় বাড়ল

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ইসলামী ব্যাংকিং সেবা উদ্বোধন

ঈদের ছুটি শেষে কাল খুলছে ব্যাংক-বিমা ও শেয়ারবাজার

এই ডিজিটাইলেজশন এর যুগে পুরাতন ভোক্তা এবং ভবিষ্যৎ ভোক্তার মধ্যে যথেষ্ট ফারাক রয়ে গেছে। ইয়ং জেনারেশন অনেক বেশি শোস্যাল মিডিয়া নির্ভর হওয়ায় জনসংযোগ কাজের গতিধারায় বেশ পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে যে যোগ্যতাগুলো প্রয়োজন ছিলো তা এখনো রয়ে গেছে এবং এর পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে নতুন কলাকৌশল। একজন ভালো জনসংযোগ কর্মকর্তাকে যোগাযোগের দক্ষতার পাশাপাশি লেখালেখির দক্ষতা, নীতিগতভাবে কাজ করা, কৌতূহলী হওয়া এবং সর্বোপরি কাজের পরিধি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা আবশ্যক।

একটি কোম্পানির ব্র্যান্ড এবং পিআর ডিপার্টমেন্ট কিভাবে কাজ করে?

ব্র্যান্ডিং এবং পিআর- একটির সাথে আরেকটির গভীর সম্পর্ক রয়েছে। পণ্যের ইউনিক বা অনন্য নাম এবং পরিচিতি তৈরী করাকে ব্র্যান্ডিং বলা হয়। এককথায়, ব্র্যান্ডিং মানে হচ্ছে কোম্পানির পক্ষ থেকে নিজেদের পণ্যের মান ও সেবার ব্যাপারে পজিটিভ কমিটমেন্ট নিশ্চিত করা। আর পণ্যের পরিচিতি, মান ও সেবার এই কমিটমেন্ট বার্তা নির্দিষ্ট ভোক্তার কাছে পৌঁছে দেয়ার কাজটি করেন একজন জনসংযোগ কর্মকর্তা। সঠিকভাবে সঠিক সময়ে এবং নির্দিষ্ট ভোক্তার কাছে তার পণ্যের কথা পৌঁছে দেয়া সহজ ব্যাপার নয়। বন্দুকের গুলি একবার বেরিয়ে গেলে যেমন ফিরিয়ে আনা যায় না, তেমনি পিআরের ভুল একটি ব্র্যান্ড ইমেজ তথা একটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিতে পারে।

কোন বিষয়টা আপনাকে পিআর ও ব্র্যান্ড কমিউনিকেশনে কাজ করার জন্যে আগ্রহী করে তুলেছিলো?

ধন্যবাদ, বই পড়া, লেখা, ফিল্ম, শিল্প, কিংবা যোগাযোগের মতো বিষয়ে বরাবরই আমার আগ্রহ ছিলো; মোটকথা সৃজনশীলতা জড়িয়ে আছে এমন যেকোনো বিষয়ে আমি কাজ করতে উদ্যত ছিলাম এবং সেটা স্বেচ্ছাশ্রমের বিনিময়ে হলেও। আমি সবসময় যোগাযোগ উপভোগ করতাম – সেটা কথা বলা, লেখা কিংবা আবৃত্তির মতো যেকোনো বিষয়। সুতরাং, পিআর এবং ব্র্যান্ডিং এমন একটি ক্যারিয়ার ছিলো-যা আমার কাছে প্রাকৃতিকভাবেই আসে। প্রথম জীবনে কাজ করার ক্ষেত্র হিসাবে পিআর ও ব্র্যান্ডিংকে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নেয়াটা একটি চমৎকার সিদ্ধান্ত হতে পারে। এটি আপনাকে কেবল আপনার সৃজনশীল দিকটি প্রকাশ করার সুযোগ করে দিবে না, বরং আপনাকে আপনার নিজস্ব একটি পথ তৈরী করতে সাহায্য করবে।।

কখনো আমার মনে হয় না আমি কাজ করছি, আমার কাজটি আমার জীবনের একটি অংশের মতো অনুভূত হয়, যেখানে আমার শখের ফুল ফোটানোর জন্য, আমি প্রতিদান পেতে পারি। আমার জন্য পিআর হলো যোগাযোগ এবং যোগাযোগ স্থাপনের মঞ্চ। এই কমিউনিকেশনের যুগে জ্ঞান শক্তির চেয়ে সম্পর্ক শক্তির জোর অনেক বেশি। আমি পিআর-এবং ব্যান্ডিং- এ কাজ করতে চাই কেননা আমি এটি পছন্দ করি এবং আমার জন্য উপযুক্ত মনে হয়।

আপনি একজন কবি, স্ক্রিপ্ট রাইটার, জার্নালের সম্পাদকসহ সৃজনশীলতার সাথে জড়িত বিভিন্ন সত্তায় কাজ করছেন। আপনি কি মনে করেন, এগুলি আপনার প্রথম চাকরি পেতে বা পরে কেরিয়ারে সহায়তা করেছে?

সত্যি কথা বলতে কি কবিতা, সৃজনশীলতা এবং দার্শনিকতা কিংবা ভিজিওলাইজেশনের যে ক্ষমতা তা কিশোর জীবন থেকেই আমার মধ্যে ছিলো। আমি যখন একজন মানুষ হিসাবে বেড়ে উঠছিলাম, প্রকৃতি ও সুন্দরতা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম তখন অন্যরা তাদের বাঁচার জন্য কাজ করতে উদ্যত ছিলো। সৃজনশীলতা হলো এমন একটি অনুপম যোগ্যতা যা আপনাকে অন্য দশজন থেকে আলাদা করে তুলবে এবং আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, খুব নিকট সময়ের মধ্যেই কাজের দক্ষতা হিসেবে সৃজনশীলতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হবে। ডিজিটালাইজেশনের যুগে সৃজনশীলতা ছাড়া একটি নতুন পণ্য বা সেবা নিয়ে চিন্তাভাবনা করাটা ভীষণ কঠিনই হবে। চাকুরীতে নিয়োগদাতারা তাদের প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে সৃজনশীল চিন্তাভাবনা দেখতে পছন্দ করেন যারা তার প্রতিষ্ঠানটিকে সৃজনশীলতার মাধ্যমে সফল একটা জায়গায় নিয়ে যেতে পারবে।

উদাহরণস্বরূপ, আমরা যদি দুজন প্রার্থীকে বিবেচনা করি যারা একই পদে আবেদন করেছেন এবং তাদের উভয়েরই স্নাতক ডিগ্রি এবং জ্বলজ্বলে জীবনবৃত্তান্ত রয়েছে। তবে এর মধ্যে একজনের লেখালেখি বা চিত্রকলার প্রতি আগ্রহ রয়েছে এবং অন্যজনের একাডেমিক যোগ্যতা ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে আগ্রহ নেই। সেক্ষেত্রে কার চাকুরীটা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে? নিশ্চয়ই প্রথমজনের। সৃজনশীলতা আপনাকে আরো আকর্ষণীয় ব্যক্তি করে তোলে এবং এটি আপনার দক্ষতা এবং শিক্ষার চেয়ে আরো অনেক বেশি কর্মসংস্থানযুক্ত করতে পারে।

যেসব কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পিআর, ব্র্যান্ডিং, যোগাযোগ এবং সম্পর্কিত ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গড়তে চান তাদের আপনি কী পরামর্শ দেবেন?

আপনি যদি বিজ্ঞাপন, জনসংযোগ, ব্র্যান্ডিং বা এ সম্পর্কিত ক্ষেত্রে আপনার ক্যারিয়ার গড়তে চান তবে আপনাকে অবশ্যই সৃজনশীল হতে হবে, খবর এবং সমকালিন সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন হতে হবে, অভিযোজক, বিশ্লেষণাত্মক এবং চমৎকার একজন গল্পকার হতে হবে।

আপনার যদি নতুন ধারণা বা নতুন কিছু করার ভিন্ন উপায় থাকে তবে তা করা থেকে বিরত হবেন না। নিজেকে প্রচার করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আপনাকে নিজের যোগ্যতার প্রতি আস্থা রাখতে হবে, আপনাকে জানতে হবে আপনি কি করতে পারেন এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনাকে জানা।

নিউজটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

ট্যাগঃ