গত পাঁচ বছরে প্রায় ৩৯ কোটি টাকার পণ্য বিক্রির তথ্য গোপন করেছে গুলশানের অভিজাত ফ্যাশন ব্র্যান্ড জারা ফ্যাশন। ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতরের এক অভিযানে এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি তিন কোটি টাকারও বেশি ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।
বুধবার (২৪ মার্চ) বিষয়টি জানিয়েছেন ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান। তিনি বলেন, একজন ক্রেতার অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে গোয়েন্দা টিম। মঙ্গলবার অভিযান চালিয়ে অধিদফতরের গোয়েন্দা দল জারা ফ্যাশন থেকে হিসাবপত্র জব্দ করে। সেসব যাচাই-বাছাই করে ভ্যাট ফাঁকির তথ্য পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ভ্যাট আইনে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।

ভ্যাট গোয়েন্দা জানায়, ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতর রাজধানীর গুলশানে একটি অভিজাত ফ্যাশন স্টলে অভিযান চালিয়ে ৩৯ কোটি টাকার গোপন বিক্রয় হিসাব উদ্ধার করেছে। গুলশানের প্রতিষ্ঠানটির নাম জারা ফ্যাশন (হাউজ ৭, রোড ১৪)। এই স্টলটি অভিজাত ও বিদেশি ব্রান্ডের জামাকাপড়, ঘড়ি, জুতা, ব্যাগ ও গয়নাসহ নানা ধরনের পণ্য বিক্রয় করে।
সংস্থাটি জানায়, উপপরিচালক নাজমুন্নাহার কায়সার মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) অভিযানটি পরিচালনা করেন। অভিযানকালে অধিদফতরের গোয়েন্দা দল জারা ফ্যাশন থেকে হিসাবপত্র জব্দ করে আনেন। জব্দকৃত কাগজপত্র যাচাই করে প্রাথমিকভাবে দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে প্রতিষ্ঠানটি ৩৮ কোটি ৮১ লাখ টাকার বিক্রয় হিসাব গোপন করেছে। এতে ব্যবসায়ী পর্যায়ে সরকারের ৩.৩৮ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া হয়েছে।
ভ্যাট গোয়েন্দা জানায়, কাস্টমার লক্ষ টাকার পণ্য কিনলেও তাকে যথাযথ ভ্যাট চালান দেওয়া হয়নি। পরে তিনি ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতরে অভিযোগ দেন। অনুসন্ধানে অভিযানে প্রাপ্ত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানটি ক্রেতার কাছ থেকে ভ্যাট নিলেও তা সরকারি কোষাগারে জমা করেনি। প্রতিষ্ঠানটি কোনো কোনো মাসে ৫০ লাখ টাকার বিক্রয় করলেও ভ্যাট সার্কেলে ঘোষণা দিয়েছে মাত্র ১০ লাখ টাকার হিসাব।

অনুসন্ধান দেখা যায়, ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জারা ফ্যাশন ৫২.৩৪ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় ভ্যাট সার্কেলে মাসিক রিটার্নে ১৩.৫৩ কোটি টাকার বিক্রির হিসাব প্রদর্শন করেছে। রিটার্ন ও প্রকৃত বিক্রয়ের পার্থক্য ৩৮.৮১ কোটি টাকা। প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করায় ১.৭৯ কোটি টাকার নিট ভ্যাট ফাঁকি হয়েছে। সময়মতো ভ্যাট না দেওয়ায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী মাসিক ২ শতাংশ হারে আরও ১.৫৯ কোটি টাকার সুদ আদায়যোগ্য।