কর্মক্ষেত্রে যারা এক বা একাধিক কর্মীর কর্মকর্তা তাদের সবারই চেষ্টা থাকা উচিত কর্মীদের চোখে একজন ভালো কর্মকর্তা হিসেবে নিজেকে তুলে ধরা। নিজেদের জানার আগ্রহ, প্রশ্নগুলো নিয়ে কর্মীরা যাতে সহজেই আপনার দ্বারস্থ হতে পারে সেই পরিবেশ তৈরি করার দায়িত্বটা কর্মকর্তারই।
তবে পরিস্থিতি অনেক সময় প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপকদের কঠোর, রুঢ়, বদমেজাজি করে তুলতে পারে। আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকার পরও নিজের দোষেই অধীনস্থ কর্মীদের চক্ষুশূল হয়ে উঠতে পারেন।

এই দুইয়ের মধ্যে তফাৎ অনুধাবন করার জ্ঞান প্রতিটি কর্মকর্তার থাকা উচিত।
আর সেটা অনুধাবন করার উপায়গুলো জানানো হল-
সবজান্তা কর্মী যার কাম্য: অধিনস্থ কর্মী এমন অনেক কিছুই জানবে না বা বুঝবে না যা একজন কর্মকর্তা হিসেবে আপনি জানেন কিংবা বোঝেন, এমনটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে কর্মকর্তা হিসেবে তাকে শেখানোই আপনার কাজ। তবে যদি ভেবে নেন কর্মীরা সবকিছু পারবে আর না পারলেই তাকে না শিখিয়েই অযোগ্য হিসেবে আখ্যায়িত করেন তবে কর্মকর্তা হিসেবে আপনার যোগ্যতাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

নতুনত্বে অনীহা: কর্মজীবনের একটা পর্যায়ে একটি কাজ যেভাবে আপনি করতে জানেন বা যেভাবে এতদিন হয়ে আসতে দেখেছেন সেই পদ্ধতিতেই আপনি বিশ্বাসী। একটি পদ্ধতি যদি অকেজো না হয়, তবে তাতে পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই, এমনটাই আপনার নীতি। তবে সময়ের পরিবর্তনের ধারায় ওই কাজ আরও সহজ কিংবা কম সময়ে শেষ করার নতুন পদ্ধতি বেরিয়ে আসতে পারে নতুন কর্মীদের কাছ থেকে। তবে সমস্যা হবে তখনই যদি সেই পদ্ধতি আপনার বোধগম্য না হয়। এক্ষেত্রে নতুন পদ্ধতির সুফল যাচাই না করে, তা বোঝার চেষ্টা না করে, শুরুতেই যদি বাতিল করে দেন তবে কর্মীদল কাজের প্রতি আগ্রহ হারাবে, কর্মস্পৃহা কমবে।
কর্মক্ষেত্রে আপনি সর্বেসর্বা: কর্মকর্তা হিসেবে আপনিই আপনার দলের নেতা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আপনার হাতেই। এতে আপনার মাঝে নেতাসুলভ গুরুগম্ভীরতা আসতে পারে, তবে অহংকার আসলেই বিপদ বাঁধবে। আপনার কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে কেউ যদি কোনো কাজ আরও ভালোভাবে করে ফেলে তবে আপনার গর্ববোধ করা উচিত। তবে সেটা যদি সহ্য করতে না পারেন, সে আপনার কাছে প্রতিযোগী হয়ে ওঠে, তাহলে দেখা দেবে স্বার্থের লড়াই।
আবেগের স্থান নেই: কর্মব্যস্ত দিনগুলোতে সবার ওপরেই কমবেশি ধকল যায়। সবাই সেই ধকল সমানভাবে সামলাতে পারেনা। আবার ব্যক্তিগত ও কর্মজীবন আলাদা হলেও ব্যক্তিগত জীবনের ঘটনার প্রভাব কর্মক্ষেত্রে পড়বে। ব্যক্তিগত জীবনের কোনো দুঃসংবাদ বা দুশ্চিন্তা ভুলে থেকে ঠিকভাবে কাজ করতে সবাই পারে না।
কর্মীদের মাঝে কেউ আপনার প্রিয়: কর্মীদলের মাঝে নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির প্রতি আপনার বাড়তি আস্থা থাকা, নির্দিষ্ট কারও মতামতকে অন্যদের থেকে সবসময় শ্রেষ্ঠ মনে করা একজন আদর্শ কর্মকর্তার পরিচয় নয়।
দোষ খোঁজা: কর্মীরা সবাই মানুষ। আর একজন মানুষ একটানা যন্ত্রের মতো কাজ করতে পারবে না। কেউ যদি জোর করে তা করার চেষ্টা করে তবে কাজের মান কমবে। তাই কাজের ফাঁকে চায়ের বিরতি, কর্মীদের মধ্যে টুকটাক গল্প ইত্যাদিকে সহজভাবে নিতে হবে। সবসময় কর্মীদের ঘাড়ে বসে শাসন করতে থাকলে কর্মীরা কাজ করবে মনের বিরুদ্ধে যা কখনই ভালো ফল বয়ে আনবে না।