ফরহাদ বিন নূর: কৃষি বিপণন অধিদফতর প্রতি কেজি আলুর খুচরা, পাইকারি ও হিমাগার এই তিন পর্যায়ে দাম বেঁধে দিয়ে, ওই দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই সবজিটির বিক্রি নিশ্চিত করতে সারা দেশের জেলা প্রশাসকদের কাছে বেশ কয়েকদিন আগেই চিঠি দিয়েছে। কিন্তু এখনও তা কার্যকর হয়নি।
কৃষি পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে কাজ করা সরকারি এই সংস্থাটি কেজিপ্রতি আলুর দাম হিমাগার পর্যায়ে ২৩ টাকা, পাইকারি পর্যায়ে ২৫ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ৩০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে।

অথচ বুধবার (১৪ অক্টোবর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখনও প্রতি কেজি আলুর খুচরা মূল্য ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
একজন বিক্রেতার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ‘বিজনেস আই বাংলাদেশ’ -কে জানান, “সরকার বললেই তো আর আমরা লস করে ৩০ টাকায় আলুর কেজি বিক্রি করতে পারি না।” তারা আড়ত থেকে বেশি দামেই আলু কিনেন, তাই ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি করছেন বলেও জানান ঐ বিক্রেতা।
ক্রেতাদের অভিযোগ, সরকার কেজিপ্রতি আলুর দাম ৩০ টাকা (খুচরা) নির্ধারণ করে দিলেও আমাদেরকে এখনও ৫০-৫৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আব্দুস সাত্তার নামের একজন ক্রেতা ‘বিজনেস আই বাংলাদেশ’ -কে বলেন, “প্রতিকেজি আলুর দাম ২৫ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়। এতো চড়া মূল্যে আলু কিনতে হলে দেশের খেটে খাওয়া মানুষগুলো তো আলুর ভর্তা দিয়েও তখন ভাত খেতে পারবে না”

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফের সাথে কথা বললে তিনি ‘বিজনেস আই বাংলাদেশ’ -কে বলেন, “আমরা জেলা প্রশাসকদের কাছে কয়েকদিন আগেই আলুর মূল্য নির্ধারণ করে চিঠি পাঠিয়ে বাজার মনিটরিং জোরদার করতে বলেছি। বাজার মনিটরিংটা জোরদার করলেই আমরা যে দাম নির্ধারণ করেছি সেই দামের মধ্যেই বাজার চলে আসবে।”
তিনি আরও বলেন, “এটা তো কোনো ভাবেই মেনে নেয়া যায় না ১৪-১৫ টাকার আলু ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যারা ৫০-৫৫ টাকায় আলু বিক্রি করবে তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছি৷”
উল্লেখিত মূল্যে কোল্ডস্টোরেজ, পাইকারি বিক্রেতা এবং ভোক্তা পর্যায়ে খুচরা বিক্রেতাসহ তিন পক্ষই যাতে সবজিটি বিক্রয় করেন সেজন্য কঠোর মরিটরিং ও নজরদারির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে সম্প্রতি ডিসিদের কাছে পাঠানো ওই চিঠিতে বলে জানা যায়।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামান বলেন, গত কয়েক বছর আলুর দাম কম থাকায় কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে এ বছর দাম বাড়ায় তারা লাভবান হবেন। কিন্তু কোনোভাবেই এই সবজির দাম ৫০ টাকায় ওঠার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে অবশ্যই ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরসহ বাজার নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় প্রশাসনের মনিটরিং জোরদার করা উচিত।
কৃষি বিপণন অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, তারা আলুর উৎপাদন খরচ, সংরক্ষণ ব্যয়সহ, মুনাফা হিসাব করেই এই তিন পর্যায়ে দাম নির্ধারণ করেছেন। কর্মকর্তারা জানান, প্রতিকেজি আলুতে হিমাগার ভাড়া বাবদ ৩ টাকা ৬৬ পয়সা, বাছাই খরচ ৪৬ পয়সা, ওয়েট লস ৮৮ পয়সা, মূলধনের সুদ ও অন্যান্য খরচ বাবদ ২ টাকা ব্যয় ধরেছেন তারা।
কৃষি বিপণন অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, এ মৌসুমে একজন চাষির প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে খরচ হয়েছে ৮ টাকা ৩২ পয়সা। উৎপাদন থেকে শুরু করে অন্যান্য খরচ ধরে এক কেজি আলু হিমাগার পর্যন্ত সংরক্ষণে সর্বমোট ব্যয় হয়েছে ২১ টাকা। এক্ষেত্রে হিমাগার পর্যায়ে বিক্রয় মূল্যের ওপর ২-৫ শতাংশ লভ্যাংশ, পাইকারি পর্যায়ে ৪-৫ শতাংশ এবং খুচরা পর্যায়ে ১০-১৫ শতাংশ লভ্যাংশ ধরে তারা এই তিন পর্যায়ের দাম নির্ধারণ করেছেন।